দুঃসাহসী পাইলট নওশাদ ক্লিনিক্যালি ডেড!

0

সময় এখন ডেস্ক:

মাঝ আকাশে হার্ট অ্যাটাক করেও ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে নিরাপদে ভারতের নাগপুরে জরুরী অবতরণ করেন বাংলাদেশ বিমানের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। তারপর দ্রুত তাকে নেওয়া হয় সেখানকার কিংসওয়ে হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নওশাদ ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ বলে জানিয়েছেন।

আজ রোববার বিমানের সিনিয়র পাইলট ক্যাপটেন শোয়েব চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপটেন মাহবুবুর রহমান বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর ক্যাপটেন নওশাদ কাইয়ুমের ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুলে নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে মেডিকেল টিম সিদ্ধান্ত নেবে।

গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (বোয়িং-৭৩৭-৮০০-এর বিজি-২২) ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে ওমানের মাস্কাট থেকে ঢাকায় ফিরছিল। আকাশ পথে বিমানের পাইলট ক্যাপটেন নওশাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি আঁচ করতে পারেন বিমানের সেকেন্ড পাইলট। পরবর্তীতে দ্রুত গতিতে বিমানটি নাগপুরে জরুরি অবতরণ করে।

বাংলাদেশ বিমানের দক্ষতার সাথে পাইলটের দায়িত্ব পালন করা ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম পেশাগত দক্ষতা ও নৈপুণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বাংলাদেশ বিমান সূত্র জানিয়েছে, এই সেই পাইলট নওশাদ, যিনি প্রায় ৫ বছর আগে একটি ফ্লাইট দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করতে পারায় পেশাগত দক্ষতা ও নৈপুণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।

২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বরের ঘটনা। সেদিন ভোররাতে মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে ১৪৯ যাত্রী ও ৭ জন ক্রু নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল।

বিজি-১২২ ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করার পর মাস্কাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত তার প্লেনের হতে পারে। ওই তথ্যের পর অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাপ্টেন নওশাদ তার ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন।

এ সময় তার অনুরোধে ঢাকায় জরুরি অবতরণের জন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবতরণের আগে ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি নিয়ে রানওয়ের ওপর দুই বার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন। তখন দেখা যায়, আসলেই প্লেনটির পেছনের দুই নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কিন্তু ক্যাপ্টেন নওশাদ অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহ নিরাপদে ফ্লাইটটি অবতরণ করাতে সক্ষম হন। সবাই সুস্থ ও নিরাপদে উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসেন।

এমন দক্ষতার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমকে পেশাগত দক্ষতা ও নৈপুণ্যের প্রশংসা করে স্বীকৃতি দেয় আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশন।

চলচ্চিত্র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী একটি পোস্টে জানান, কোনো কিছুই আর তাদের বন্ধু নওশাদকে বাঁচাতে পারলো না। দেশ এমন একজন পাইলটকে হারিয়ে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হলো। নওশাদের পরিবার তাদের অনাগত দিনগুলো কীভাবে কাটাবে, তা আমাদের কারও জানা নেই।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!