কুষ্টিয়া সংবাদদাতা:
‘শরীরটা বড় ক্লান্ত লাগছিল। তাই ১ মাস আগে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের দেয়া ইউনানী সিরাপ খেয়েছিলাম। এ সময় ৯ বছরের মেয়ে শামীমাও বায়না ধরে। মিষ্টি সিরাপ বলে তাকেও খেতে দিলাম। আমাদের সাথে ওই সময় বাড়িতে অবস্থানরত প্রতিবেশী নুর মহাম্মদও অবসাদ দুর করতে সেবন করে একই সিরাপ। খাওয়ার ২০ মিনিট পরেই প্রচন্ড মাথা ঘুরতে থাকে। গুরুতর অসুস্থ নবাব বিশ্বাস হাসপাতালের বেডে শুয়ে প্রতিবেদককে কথাগুলো যখন বলছিল, তখনও সে জানে না তার ৯ বছরের শিশু কন্যা শামীমা ও প্রতিবেশী নুর মহাম্মদ আর বেঁচে নেই।
এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার বহালবাড়িয়া ইউনিয়নের খারারা গ্রামে।
নবাব বিশ্বাস জানান, পেশায় তিনি একজন ইটভাটা শ্রমিক। ১ মাস আগে শরীর দুর্বল হয়ে অবসাদ লাগলে স্থানীয় রাজিবের ওষুধ ফার্মেসীতে গেলে ১ হাজার টাকার ঔষধ ধরিয়ে দেয়। এর ভেতর মেরি গোল্ড নামে ৪৫০ মি.লি আকারের একটি ইউনানী সিরাপ ছিল। তা সেবনের পর আমার মাথা ঘোরা বেড়ে যায়। আমি দুর্বলতা বেশি ভেবে সেই সিরাপ সেবন বন্ধ করে দিই।
রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুনরায় শরীরে ক্লান্তি ভাব লাগলে ওই সিরাপ আবার সেবন করি। সেই সময় আমার মেয়ে ও প্রতিবেশী বায়না ধরলে তারাও সেবন করে।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, রাতে শিশুটিকে ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসছিলো পারিবারের লোকজন। কিন্তু পথিমধ্যেই শিশুটির মৃত্যু হয়। আরো একজনকে কুষ্টিয়ায় পাঠানো হয়েছে। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ঢাকার নবীন ল্যাবরেটরীর মেরি গোল্ড নামে একটি ইউনানী শরবতের প্যাকেট পেয়েছি।
প্রতিবেশী রাজন আলী জানান, শিশু শামীমা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। অন্যদিকে মধ্যরাতে নুর মহাম্মদ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে সেও মারা যায়। এদিকে মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে শামীমার পিতা নবাব আলী। তাকে দ্রুত ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্থানীয় ফার্মেসী মালিক রাজিবকে আটক করা হয়েছে। লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।