বিমান নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী

0

প্রতিরক্ষা ডেস্ক:

জনসেবার মান বাড়াতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে রেলকে সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় আসা মানুষ কমলাপুর থেকে সরাসরি ট্রেনে করে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারবেন।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে রোববার গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে রানওয়ের সমুদ্র সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় তিনি বিমান ও বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন নিয়ে একগুচ্ছ ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা আন্ডারপাস করে সংযোগটা আমরা করতে চাচ্ছি। মেট্রোরেলের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। মেট্রোরেলের যে লাইন বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত, সেটা কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত সম্প্রাসরণের ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানটাকে সামনে রেখেই সব কিছু ভাবা হচ্ছে। আমাদের দেশটাকে সারাবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই। যাতে আর্থিকভাবে আমাদের দেশ অনেক লাভবান হবে।

দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে আরও বেগবান করতে সব বিমানবন্দর আধুনিকায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতেও সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ; নতুন রাডার স্থাপন; জেট ফুয়েল যেন পাইপলাইনের মাধ্যমে চলে আসে, সেই পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।

রংপুরের সৈয়দপুর বিমানবন্দরকেও উন্নত করে আঞ্চলিক বিমানবন্দরে রূপ দিতে চান সরকারপ্রধান। বলেন, নেপাল, ভুটান, ভারতের কয়েকটি রাজ্য যেন এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে চাই।

সিলেটের বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলেও সেটি নিয়ে আছে সরকারের পরিকল্পনা। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানেও আসাম, মেঘালয়সহ ভারতের অনেক রাজ্য যেন আমাদের এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে, তার পরিকল্পনা আছে। চট্টগ্রামেরটাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানে ত্রিপুরা থেকে শুরু করে ভারতের অনেক প্রদেশ আমাদের এটা ব্যবহার করতে পারে।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের একটা হাব তৈরির স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করার চিন্তা আমাদের আছে। সেভাবেই আমরা এসব বিমানবন্দরকে অত্যাধুনিক করতে চাই।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এয়ারপোর্টটা সম্প্রসারণ হলে আমি মনে করি যে পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে, তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সব থেকে বেশি সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার।

হংকং, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের পর কক্সবাজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, খুব স্বল্পসময়ে (বিমান) এখানে এসে তারা নামতে পারবে। রিফুয়েলিং করতে পারবে, যেতে পারবে।

কক্সবাজারে সুপরিসর বিমান যেন নামতে পারে, আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহনে থাকা সব বিমান যেন নামতে পারে, সেভাবে কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আমরা উন্নত করব। এটাকে আমরা আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করব।

বাড়ছে আন্তর্জাতিক রুট

বিমানের আরও রুট বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু পশ্চিমামুখী না হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন নতুন রুট তৈরিতে সরকারের পরিকল্পনা সামনে তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা রয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক রুটে আরও কয়েকটি দেশে যাওয়ার। যেমন- নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, সিডনি। এই দূরত্ব চলার মতো আমাদের ড্রিমলাইনার আছে।

দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগটা বাড়াতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। আমরা শুধু পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকব না। পাশাপাশি অন্য যে দেশগুলো আছে আমাদের বন্ধুপ্রতিম, সেখানেও আমাদের বিমান যাতে যায় ভবিষ্যতে, আমরা সেই চেষ্টা করব।

এ সময় বিমান পরিচালনায় যারা যুক্ত আছেন, তাদের সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যারা বিমানে কাজ করেন, তাদের আমি অনুরোধ করব সততার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে এটা পরিচালনা করবেন। সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে, যেন এটা আন্তর্জাতিক মানের হয় সেটা আপনারা দেখবেন।

বিমানের আধুনিকায়ন

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বিমানের দুরবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আকাশপথে যেতে যেতে পানি পড়ত। এন্টারটেইনমেন্টের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ঝুরঝুরে প্লেনের পাইলটদের আমি বলতাম যে, তাদের স্পেশাল পুরস্কার দেয়া উচিত। এ ধরনের প্লেন যারা চালাতে পারে, তারা কতটা দক্ষ।

অনেক সময় অনুমতি নিয়ে ককপিটে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করতাম, কথাও বলতাম, তাদের সমস্যা কী? প্রবাসে আমাদের ১ কোটি মানুষ থাকে। তারা কিন্তু আমাদের নিজস্ব প্লেন পেলে সেটাতেই চড়তে চায়, তাদের যত কষ্টই হোক। সেই বিমানে চড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার আছে। সব কিছুর পরও মনে হতো নিজের দেশের জাহাজে যাচ্ছি।

সেই দুঃখ দূর করতেই ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বোয়িং থেকে ড্রিমলাইনারসহ ১৬টি অত্যাধুনিক বিমান যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, সব থেকে দুর্ভাগ্য যে, আমরা ১৬টি বিমান নতুন নিলাম, কিন্তু চালাতে পারছি না। করোনার কারণে সমস্ত যাতায়াত বন্ধ। এটা আমাদের জন্য সত্যিই খুব দুঃখের একটা বিষয়। যখনই আমরা প্রস্তুতি নিলাম, তখনই করোনা এসে সব কিছু স্থবির করে দিল।

তবে এখান থেকে মুক্তি ঘটবে বলে বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর। আর তাই দেশের সবাইকে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেন চলার আহ্বান জানান তিনি।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যাতে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে পারে, সেজন্য সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!