‘আপনাকে দিয়ে হচ্ছে না, খোকনকে পাঠান’- মওদুদকে খালেদা জিয়া

0

আইন আদালত ডেস্ক:

নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যারিস্টার মওদুদকে দিয়ে হবে না। খালেদা জিয়া দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ডেকে পাঠান।

বৃহস্পতিবার নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে আনা হয় পুরনো কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে। সেখানে আদালতের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। আদালতকে সাফ বলে দেন, ‘সাজা দিতে চাইলে দিয়ে দেন, তবু আমি এ আদালতে আর আসব না’।

আদালতের কার্যক্রমের শেষপর্যায়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার আইনজীবীরা বিচারকের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। জবাবে বিচারক বলেন, ‘যেহেতু এ মামলায় (নাইকো মামলা) তিনি জামিনে আছেন, সেহেতু কথা বলার জন্য আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে পারেন। এ কথা বলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।

এর পর আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার মুখে শোনা যায়- ‘আপনাকে দিয়ে হচ্ছে না, আপনার সেই মুরোদ নাই। খোকনকে (মাহবুব উদ্দিন খোকন) পাঠান।’ এর পর মাহবুব উদ্দিন খোকন কিছুক্ষণ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।

জানা গেছে, মওদুদ আহমদ খালেদা জিয়ার সঙ্গে চলমান রাজনীতি বিষয়ে নির্দেশনা জানতে চাচ্ছিলেন। খালেদা জিয়া তাকে বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে। আপনারা (সিনিয়র নেতারা) বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে দল চালান।

মওদুদ এর পরও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামনে নিয়ে আসেন। এতে বিরক্ত হন খালেদা জিয়া। বলেন, আপনাকে দিয়ে হচ্ছে না। তিনি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ডেকে পাঠান।

তবে এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মওদুদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।

মামলা করার পরের বছরের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!