বিশেষ সংবাদদাতা:
সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি থেকে নেতাকর্মীদের অন্যদলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। নির্বাচনে হেরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাশা বিরাজ করছে। যার সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে। গত এক সপ্তাহে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী অন্য দলে যোগ দিয়েছে বলে জানা গেছে। কৌশলগত কারণে দলত্যাগের খবরগুলো চেপে যাওয়া হচ্ছে। এসব নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন।
নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়ে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সারাদেশে স্থানীয় পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় অনুমতি ছাড়া দলের স্থানীয় পর্যায়ে অন্য দল থেকে আগত কোন নেতাকর্মীকে দলে নেয়া যাবে না। আওয়ামী লীগে যোগদানে বিধিনিষেধ থাকলেও বিএনপির বহু নেতাকর্মী বিকল্পধারা, জাপাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলে যোগদান করছে বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, রংপুর কুড়িগ্রাম, জামালপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের ১৪টি জেলার বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগদান করেছে। এর ফলে এসব এলাকায় বিএনপিতে নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এছাড়া সিলেট, মৌলভীবাজারসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল থেকেও একাধিক নেতাকর্মী অন্যান্য দলে যোগদান করছে। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি এখন সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সঙ্গে রয়েছেন এবং মনসুর যেন সংসদের না যেতে পারেন এ ব্যাপারে তারা তৎপর রয়েছেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, দলটির নেতাকর্মীদের দল ত্যাগের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির নেতাকর্মীদের দলত্যাগের পিছনে মূল ৫টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো:
উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়া: বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বর্তমান সরকারের অধীনে কোন ধরনের নির্বাচনে তারা যাবে না। একই ধারাবাহিকতায় তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এর ফলে দলটির স্থানীয় নেতারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন। তাই তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে। স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়ালেও তারা নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে না। এজন্য তারা জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছে।
গ্রেপ্তার-মামলা থেকে রক্ষা পেতে: গত এক যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা একের পর এক মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে। দলটির বিরাট সংখ্যক নেতাকর্মী জেলে রয়েছে। এখনও যারা জেলের বাইরে আছেন তারা নতুন করে এই বিপদে পড়তে চান না। তারা ভাবছে জাপা, বিকল্পধারা, জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে মামলাসহ গ্রেপ্তার থেকে মুক্ত থাকতে পারে। মামলা ও গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য নেতাকর্মীদের অন্য দলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে।
দিক নির্দেশনাহীন নেতৃত্ব: ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি কেন গেলো সে ব্যাপারে তৃণমূলের কাছে কোন জবাব নেই। নির্বাচনের পর বিএনপি কীভাবে চলছে সে ব্যাপারেও তৃণমূলকে কিছু জানানো হচ্ছে না। এর ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে অন্যান্য দলে যোগ দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ: তৃণমূল পর্যায়ের যে সব নেতাকর্মী নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের ব্যাপারে কোন খোঁজখবর নিচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। যার ফলে প্রায় অভিভাবকহীন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিএনপিতে থাকার ভরসা পাচ্ছে না। তারা অন্যান্য দলে আশ্রয় পাচ্ছে।
অন্য দলগুলোর প্রলোভন: জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারার মতো দলগুলো তৃণমূল সংগঠন গোছাতে চাচ্ছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি তাদের আগ্রহ জন্মাচ্ছে এবং তাদেরকে নানা রকম প্রলোভন দেখাচ্ছে। তাদের প্রলোভনে বিএনপির অভিভাবকহীন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অন্য দলে যোগ দিচ্ছে।
বিএনপির একাধিক তৃণমূল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি অনাস্থা, দুর্নীতির কারনে আটক নেতৃবৃন্দদের কারনে দলের ইমেজ নষ্ট হওয়াসহ বিবিধ কারনে দল ছেড়ে অন্য দলে যোগদান শুরু হয়েছে। যোগদানের হার আরও বাড়বে এবং উপজেলা নির্বাচনের আগে এটা বিএনপিতে মহামারী হয়ে দাঁড়াবে।
1