ফিচার ডেস্ক:
অস্তিত্ব সংকটে থাকা ভালুক আকৃতির বড় পান্ডার যমজ সন্তান জন্মদানের ঘটনা বাড়ছে। ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি যমজ সন্তান জন্ম দিয়েছে জায়ান্ট পান্ডা। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কঠিন এ কাজকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
চীনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির আধুনিকায়ন করে জায়ান্ট পান্ডাদের যমজ সন্তান জন্মদানে সক্ষম করা হচ্ছে।
স্পেনের মাদ্রিদ চিড়িয়াখানায় গত সোমবার একজোড়া সন্তানের জন্ম দেয় হুয়া জুইবা নামের একটি জায়ান্ট পান্ডা। চীনের সিচুয়ান প্রদেশের অবস্থিত শেংদু রিসার্চ বেইজ অফ জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিংয়ের আবিষ্কার ছিল হুয়া জুইবা।
চলতি বছর জাপান, জার্মানি আর চীনে বেশ কয়েকটি জায়ান্ট পান্ডা যমজ সন্তান জন্ম দিয়েছে। নিছক সৌভাগ্য কিংবা কাকতালীয় নয় এসব ঘটনা। পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে পুরো বিষয়টিকে সম্ভব করেছেন বিজ্ঞানীরা।
স্পেনে জন্ম নেয়া যমজ ভাইবোন পান্ডা দুটির আকৃতি কবুতরের সমান। পুরুষ পান্ডাটি ০.১৩৭ কেজি ও নারী পান্ডাটি ০.১৭১ কেজি ওজন নিয়ে জন্মেছে। চীনা বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে দুই সন্তানের জন্ম দেয় মা পান্ডা।
চলতি বছরের এপ্রিলে প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পান্ডাটি একটি পুরুষ পান্ডার সংস্পর্শে যায়। তখন থেকেই স্ত্রী পান্ডাটিকে নজরদারিতে রাখতে শুরু করেন চীনা বিজ্ঞানীরা। নিয়মিত তার স্বাস্থ্যপরীক্ষার পাশাপাশি স্প্যানিশ চিড়িয়াখানায় পান্ডার জন্মদানে সহযোগিতাকারী কর্মীদেরও সাহায্য করেন তারা।
আচরণগত পরিবর্তন ও মূত্রের হরমোন পরীক্ষা করে চীনা বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেন, পান্ডাটির গর্ভধারণের সেরা সময় ১৩-১৪ এপ্রিল। সে অনুযায়ী পান্ডাটির দেহে কৃত্রিমভাবে দুইবার বীর্য প্রবেশ করাতে স্প্যানিশ গবেষকদের নির্দেশনা দেন চীনা বিশেষজ্ঞরা।
১৪ আগস্টের দিকে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল হুয়া জুইবা। একই সঙ্গে তার ঘুম বেড়ে গিয়েছিল। গর্ভাবস্থায় পান্ডাদের জন্য এটি স্বাভাবিক আচরণ। বিষয়টি মাদ্রিদের বিশেষজ্ঞদের জানায় চীনা বিশেষজ্ঞ দল।
উভয়পক্ষই পান্ডাটির সন্তান জন্মের সময় উপস্থিত থাকতে ও সহযোগিতা করতে দুইজন বিশেষজ্ঞকে চিড়িয়াখানায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
৩১ আগস্ট দুইজন বিশেষজ্ঞ স্পেনে পৌঁছান এবং চিড়িয়াখানার কর্মীদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে শুরু করেন। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর নিরাপদেই দুই সন্তানের জন্ম দেয় হুয়া জুইবা।
এর আগে ফ্রান্সে হুয়ান হুয়ান ও জাপানে ঝেন ঝেন নামের দুটি জায়ান্ট পান্ডা যমজ সন্তান জন্ম দেয়।
অস্তিত্ব সংকটে থাকা জায়ান্ট পান্ডার বংশরক্ষায় কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচি চালু করেছে চীনের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা।
গত ১০ জুন চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে শংকিং চিড়িয়াখানায় জোড়া পান্ডা জন্ম দেয়া মাং জাই নামের একটি জায়ান্ট পান্ডা। শিশু দুটির ওজন ছিল যথাক্রমে ০.১৬১ কেজি ও ০.১৫১ কেজি।
পান্ডা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার কারণে যমজ পান্ডা জন্মের ঘটনা বাড়ছে।
শেংদু রিসার্চ বেইজের পান্ডা বিশেষজ্ঞ উ কোংজু জানান, এককালে শুধু পান্ডাদের আচরণগত পরিবর্তন দেখে তাদের প্রজননের সময় নির্ধারণ করা যেত। কিন্তু এখন, গত এক দশক ধরে তাদের হরমোনে পরিবর্তনসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে আরও সঠিকভাবে এটি নিশ্চিত করা যায়।
চিড়িয়াখানায় থাকা স্ত্রী পান্ডাদের ঋতুচক্রও সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। সফল গর্ভধারণ নিশ্চিতে প্রাকৃতিকভাবে স্ত্রী ও পুরুষ পান্ডাদের মিলিত হতে দেয়ার পাশাপাশি প্রায়ই নারী পান্ডার দেহে কৃত্রিমভাবে বীর্য প্রবেশ করান বিজ্ঞানীরা।
দুই বা ততোধিক পুরুষ পান্ডার বীর্য ব্যবহার করে একই সঙ্গে ২ বা ৩টি সন্তান ধারণে সক্ষম করা যায় একেকটি স্ত্রী পান্ডাকে। এক্ষেত্রে জোড়ায় জন্ম নেয়া পান্ডার পিতা দুটি পান্ডাও হতে পারে।
এ ছাড়া পান্ডার জন্ম বৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে পান্ডাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারা। বন্য পান্ডাদের তুলনায় চিড়িয়াখানায় থাকা পান্ডারা উন্নত মানের খাবার পায়। ফলে চিড়িয়াখানায় থাকা পান্ডারা গর্ভধারণও করে বেশি।
স্ত্রী পান্ডার উর্বরতা ও গর্ভধারণের জন্য পুষ্টি খুবই জরুরি বিষয়। অলস বলে বন্য পান্ডাদের খাবার খুঁজতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাই একবারে তারা একটির বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে না। সে তুলনায় চিড়িয়াখানায় থাকা পান্ডারা প্রতি বেলায় ভালো খাবার পায় এবং একাধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়ে ওঠে।