বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক:
এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ‘আলট্রা-লার্জ’ মহাকাশযান নির্মাণ কীভাবে করা যায়, তা খতিয়ে দেখছে চীন।
এ ধরনের বিশাল আকৃতির মহাকাশযান কী কাজে লাগবে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কতটা, প্রাথমিকভাবে এসব প্রশ্নেরই জবাব খুঁজছেন চীনা গবেষকরা।
বিজ্ঞানবিষয়ক পোর্টাল সায়েন্টিফিক আমেরিকানের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ন্যাশনাল ন্যাচারাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন অফ চায়নার গবেষণা প্রস্তাবের অংশ এ প্রকল্প। প্রকল্পটিতে অর্থ দিচ্ছে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা প্রস্তাবে এ ধরনের বিশাল মহাকাশযানকে ‘ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, মহাবিশ্বের অজানা রহস্য উদঘাটন ও কক্ষপথে দীর্ঘদিন মানুষের থাকার জন্য কার্যকর হতে পারে এ প্রকল্প।
প্রকল্পের লক্ষ্য নতুন ধরনের এমন একটি হালকা মহাকাশযান তৈরি করা, যা তৈরি করতে কক্ষপথে খুব বেশি ভারী নির্মাণসামগ্রী পাঠাতে হবে না। মহাকাশে বিশাল আকৃতির স্থাপনাটিকে ঠিকভাবে পরিচালনায় নতুন প্রযুক্তি তৈরির ওপরও জোর দিয়েছে চীনা সংস্থাটি।
প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের গবেষণায় প্রথম ৫ বছরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে ২৩ লাখ ডলার।
প্রকল্পটি শুনতে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো হলেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাবেক প্রধান প্রযুক্তিবিদ ম্যাসন পেক জানান, বিষয়টিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়ারও কিছু নেই। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হবে প্রকৌশলগত সীমাবদ্ধতা।
বর্তমানে কর্নেল ইউনিভার্সিটির মহাকাশ প্রকৌশলের অধ্যাপক পেক বলেন, প্রকল্পটি সম্ভব বলেই মনে করি। কিন্তু বিশালাকৃতির মহাকাশযানটি তৈরিতে বিপুল পরিমাণ উপকরণ লাগবে, যেগুলো মহাকাশে পাঠাতে হবে। এর খরচও অনেক বেশি।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) সবচেয়ে চওড়া অংশটির প্রস্থই মাত্র ৩৬১ ফুট। এটি নির্মাণে খরচ পড়েছে ১১ হাজার কোটি ডলার।
পেকের মতে, চীনের পরিকল্পনার মহাকাশযানটি আইএসএসের চেয়েও ১০ গুণ বড়। এটি নির্মাণে জাতীয় বাজেটের বড় অংশ খরচ অনিবার্য। তবে কী ধরনের কাঠামো তৈরির পরিকল্পনা করছে চীন, তার ওপরও খরচ কিছুটা নির্ভর করে।
পেক বলেন, আইএসএস যন্ত্রপাতিতে বোঝাই এবং মানুষের থাকার ব্যবস্থা আছে সেখানে। কিন্তু শুধুই বড় কোনো মহাকাশযান নির্মাণের কথা হলে এবং তা ভারী না হলে, সেটা ভিন্ন বিষয়। এ ক্ষেত্রে খরচেও তারতম্য হবে।
নির্মাণকৌশলের ওপরও খরচ নির্ভর করে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণত মহাকাশের স্থাপনাগুলো তৈরি হয় পৃথিবীতে তৈরি একেকটি যন্ত্রাংশ মহাকাশে নিয়ে আলাদাভাবে জোড়া লাগানোর মাধ্যমে।
থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক বড় স্থাপনা তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন পেক। চাঁদ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ আকর্ষণীয় বিকল্প বলেও জানান তিনি।
পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দুর্বল বলে বস্তুর ভর অনেক কম সেখানে। তাই পৃথিবীর বদলে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উপকরণ মহাকাশে নেয়া বেশি সহজ বলে মত দিয়েছেন তিনি।
এমনটা ঘটলেও যন্ত্রপাতি পৃথিবী থেকে আগে চাঁদে পাঠাতে হবে, যা সহজ নয়। একই সঙ্গে এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও বটে।