বাংলাদেশে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, রোদনভরা হাহাকার পশ্চিমবঙ্গে

0

সময় এখন ডেস্ক:

বৈরী আবহাওয়া ও ২ মাসেরও বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত মাসে তেমন ইলিশের দেখা না মিললেও দেশে ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে সেই চিত্র। সাগর থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে শত শত ফিশিং ট্রলার।

গত মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে একবার জাল ফেলেই (স্থানীয়ভাবে “খ্যাপ” নামে পরিচিত) ১৭০ মণ ইলিশ ধরেন একদল জেলে। পরে এ ঘটনায় খুশি হয়ে ট্রলারের মাঝিকে অর্ধ লাখ টাকা মূল্যের একটি সোনার চেইনও উপহার দেন ট্রলারের মালিক।

আমাদের দেশে যখন ইলিশের রমরমা অবস্থা, তখন ওপার বাংলার চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। বাংলাদেশের মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী গত ২ বছরের তুলনায় যেখানে প্রায় ১৯% বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বিগত কয়েক বছরে চলা ইলিশের অপ্রাপ্তি নিয়ে থাকা রোদনভরা হাহাকার যেন এবার আরও বেড়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানা যায় এসব তথ্য। এক জেলের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, গত ১৫ দিনে মোহনায় সর্বসাকুল্যে গোটা চল্লিশেক ইলিশ ভেসে উঠেছে।

কিন্তু ভারতে ইলিশের এমন হাহাকারের কারণ কী?

কারণের ব্যাখ্যা দিয়েছে এসএএনডিআরপি (সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অব ড্যাম রিভার অ্যান্ড পিপল)। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, দূষণের প্রভাবে গঙ্গা থেকে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসেছে ইলিশ।

এসএএনডিআরপি’র এক মৎস্য বিশেষজ্ঞ নীলেশ শেট্টি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার পাড় বরাবর একশটিরও বেশি পৌরসভার যাবতীয় আবর্জনা এবং নদী বরাবর গড়ে ওঠা কলকারখানার বর্জ্যে গঙ্গার দূষণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। নোনা জলের ঘেরাটোপ থেকে ডিম সংরক্ষণে কিঞ্চিৎ স্বাদু পানির প্রয়োজন হওয়ায় নদীর কাছে ফিরে আসে ইলিশের ঝাঁক। কিন্তু দূষণের প্রভাবে গঙ্গায় লবণের মাত্রা (স্যালিনিটি) অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের মৎস্য দপ্তরের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা আব্দুর শহিদুল্লার মতে, পদ্মা নদীতে এখনও সেভাবে দূষণের ছোঁয়া না লাগায় ইলিশের ডিম সংরক্ষণের জন্যে বাংলাদেশের নদীর সামগ্রিক পরিবেশ যথোপযুক্ত।

তিনি জানান, পদ্মা কিংবা শাখা নদীর নিকটবর্তী এলাকায় তেমন ভারী শিল্প না থাকায় দূষণের কারণে বাংলাদেশের নদীর পানির মিষ্টতা হারায়নি। ফলে নদীগুলোর মোহনা এখনও ইলিশের কাছে ব্রাত্য হয়ে ওঠেনি।

এসএএনডিআরপি’র ‘গঙ্গা মোহনায় মাছ ও মৎস্যজীবী’ বিষয়ক সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২ বছর ধরেই গভীর সমুদ্র থেকে গঙ্গার মোহনার দিকে যাত্রা করেও শেষ মুহূর্তে দূষণের কারণে মুখ ফেরাচ্ছে ইলিশ। এ মৌসুমে কখনও গঙ্গা বিমুখ ইলিশের অভিমুখ হচ্ছে খুলনা, চট্টগ্রাম, ভোলা, পটুয়াখালীর মোহনা আবার কখনও মিয়ানমারের সিতু।

গঙ্গাদূষণ প্রতিরোধ কমিটির হাইকোর্ট নিয়োজিত সদস্য ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সাবেক কর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্রোত কমছে। অকাতরে চলেছে বালি তোলা।

এ ব্যাপারে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গঙ্গাদূষণ নিয়ে দুই দশক আগেই দিল্লিকে কড়া ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এফএসআইয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গকেও সতর্ক করা হলেও দূষণের মাত্রার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!