সময় এখন ডেস্ক:
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার মৃত্যুর জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অবহেলাকে দায়ী করছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
সাদিয়া যেখানে নালায় পড়ে যান সেই আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকা মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পরিদর্শন শেষে এই অভিযোগ করেন তিনি।
মেয়র বলেন, অবহেলার জন্য, অসতর্কতার জন্য এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। নালার পাশে ফেন্সিং (নিরাপত্তা বেষ্টনি) থাকলে এ রকম দুর্ঘটনা ঘটত না। সিটি কর্পোরেশনের রেলিং ছিল নালার ওপরে। নালায় স্ল্যাবও ছিল, তবে সিডিএ কাজ করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলছে। কিন্তু পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এ দুর্ঘটনা ঘটছে।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম বলেন, যে কোনো উন্নয়ন কাজ করতে গেলে মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হবে। সিডিএর কাজের কারণে সব ময়লা গিয়ে নালায় পড়ছে। তাই নালায় ময়লা জমে ছিল।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে সিডিএ। এগুলো সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নেই। তাই কাজের সময় সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের।
যেসব সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে তাদের উচিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া। মানুষের জন্যই তো উন্নয়ন। মানুষকে রক্ষা করতে না পারলে উন্নয়ন কীভাবে হবে।
মেয়র আরও বলেন, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে স্ল্যাব বসানোর এখন কোনো সুযোগ নেই। এসব স্থানে সিটি কর্পোরেশনের স্ল্যাব ছিল। কিন্তু সিডিএ ফুটপাত কেটে ফেলেছে। ফুটপাত ছিল ৬ ফুটের মতো। কিন্তু কেটে সিডিএ দুই-আড়াই ফুট করে ফেলছে। এখানে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু নালায় কোনো ধরনের স্ল্যাবও দেয়নি।
দুদিন আগেও কথা সিডিএর সঙ্গে হয়েছে। তাদের বলেছি দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মানুষ চলাচল করতে পারতেছে না। রাস্তাটা সংস্কার করে দেন। তারা ইটের সুরকি ফেলার কথা বলছে।
ছবি: শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া
মেয়রের অভিযোগের বিষয়ে সিডিএর অথরাইজড অফিসার মো. হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম, বিষয়টা সম্পূর্ণ জানি না। তাই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না এখন। আগে তো পুরো বিষয়টা আমার জানতে হবে, তিনি (মেয়র) কী বললেন সেটাও জানতে হবে ডিটেইলস।
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকায় সোমবার রাত ১০টার দিকে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া।
সাদিয়া নগরীর বড়পোল এলাকার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন।
ফায়ার সার্ভিস রাত সোয়া ১০টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সাড়ে চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে রাত পৌনে ৩টার দিকে ওই নালা থেকেই মরদেহটি উদ্ধার করে।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক নিউটন দাশ বলেন, সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে নিখোঁজ ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেন আমাদের ডুবুরিরা। সন্ধ্যা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় ড্রেনে পানি জমে ছিল। তা ছাড়া ড্রেনটিতে ময়লার স্তূপ রয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সাদিয়ার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়।
সাদিয়ার চাচাতো ভাই মো. রুবেল বলেন, মামা জাকির হোসেন আর নানার সঙ্গে ডাক্তার দেখাতে বের হয় সে। ফেরার সময় আগ্রাবাদ মাজার গেটের পাশে ড্রেনে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মামা জাকির এবং নানাও লাফ দেন ড্রেনে। কিন্তু তারা উদ্ধার করতে পারেননি।
মরদেহ উদ্ধারের পর পরিবারের সদস্যরা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মারধর করে মরদেহ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন নিউটন দাশ।
তিনি বলেন, তারা আমাদের সদস্যদের মারধর করে মরদেহটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেছেন। এ সময় আমাদের এক কর্মীর মোবাইল ফোনও হারিয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করতে দেরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাদিয়ার চাচা বেলাল হোসেন।
তিনি বলেন, সাদিয়া পড়ে গেছে ১০টায়, আমি খবর পেয়েছি সাড়ে ১০টায়। আমরা আসার পরও দেখি ফায়ার সার্ভিস আসেনি। খোঁজাখুঁজি করছি নিজেরা, অনেকক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস আসে। এখানকার কাউন্সিলরের অফিস খুব একটা দূরে না, তিনিও একটু খবর নেননি।
অভিযোগ নাকচ করে নিউটন দাশ বলেন, আমরা সোয়া ১০টায় খবর পেয়ে ২-৩ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। গণমাধ্যম কর্মীরা দেখেছেন, অনেকে লাইভেও ছিল। এখন বলেন, তারপরও কেউ যদি এভাবে বলে, আমাদের তো কিছুই করার নেই।
এই ঘটনার আগে ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুর এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ। এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান মেলেনি।
তার আগে ৩০ জুন নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা চশমা খালে পড়ে এক নারীসহ ২ জনের মৃত্যু হয়।