সময় এখন ডেস্ক:
আঁর সাদিয়া হন্ডে? আঁর সাদিয়ারে বিয়ে দিবে হইলা যে ন, বিয়ে ন দিবে? (আমার সাদিয়া কোথায়? আমার সাদিয়াকে বিয়ে দেয়ার কথা ছিল। বিয়ে দেবেন না?
পরিবারের বড় মেয়েকে হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন ড্রেনে পড়ে নিহত সাদিয়ার মা শেলী আক্তার।
মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বিষণ্ন ছোট বোন সিন্থিয়া বলেন, ডাক্তর দেহাইতো যাইবো হইয়্যি আর আঁই আফুরে হইদি আঁরে সহ লই যাইবেল্লাই। আফু দুষ্টমি গরি আঁরে হইয়্যিদে, নইন্নুম তোরে, আঁই বাইকত গরি মামার লগে যাইরগুই। (আপু ডাক্তার দেখানোর কথা বলেছেন, আপুকে বলেছি আমাকে নিয়ে যেতে। দুষ্টুমি করে আপু বলেছেন, তোমাকে নেব না। আমি মামার সাথে বাইকে যাব।)
আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে নালায় পড়ে যান। রাত ৩টায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে নগরের হালিশহরের বড়পোল এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নানা ও মামার সঙ্গে সোমবার আগ্রাবাদের বাদামতলীর সুলতান মার্কেটে এক চোখের ডাক্তারের চেম্বারে যান সাদিয়া। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে মাজারগেটের সামনে প্রাইম ব্যাংকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বড় খোলা নালায় পড়ে যান তিনি।
সাদিয়া পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামা মো. জাকির হোসেনও ঝাঁপ দেন। তিনি জানান, আগ্রাবাদ মোড় থেকে মাইজারগেট পর্যন্ত কোনো সড়কবাতি নেই। সন্ধ্যার পর এই এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়।
অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে হালকা বৃষ্টিতে সৃষ্ট কাদায় পা পিছলে সাদিয়া নালায় পড়ে যায়। ওই নালায় ময়লা ছিল বেশি। তাই ১২ ফুট গভীর নালার স্রোত ও ময়লা-আবর্জনার কারণে সাদিয়াকে উদ্ধার করতে পারিনি। পরে ঘটনাস্থলের ৫০ ফুট দূর থেকে উদ্ধার করা হয় তার নিথর দেহ।
শেহেরীনের নানা হাজি জামাল বলেন, নাতনি আমার হাত ধরে ছিল। হঠাৎ নালায় পড়ে গেল। সঙ্গে আমিও ঝাঁপ দিলাম। আমার সাথে ছেলেও লাফ দিল। কিন্তু নাতনিকে তো বাঁচাতে পারলাম না। মনকে বুঝাতে পারছি না কোনোভাবে।
নগরের বড়পোলের মইন্যাপাড়ায় প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর সন্তান শেহেরীন। মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় সে। তার এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছেন না কেউ। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে হাজির হন আত্মীয়স্বজনরা।
শেহেরীনের নানা হাজি জামাল বলেন, নাতনিকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পানির স্রোতের জন্য কিছুই করতে পারিনি।
মামা মো. জাকির হোসেন বলেন, একটি নালা খোলা পড়ে আছে। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকলে আজ ভাগনি বেঁচে যেত।
পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল শেহেরীনের।
শেহেরীনের বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, মেয়েকে কোনোকিছুর জন্য বলতে হতো না। একটা লক্ষ্মী মা ছিল আমার। সব শেষ হয়ে গেল। এখন কাকে নিয়ে বাঁচব আমি!