‘হঠাৎ এত আওয়ামী লীগার এলো কোথা থেকে?’

0

বিশেষ সংবাদদাতা:

হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এমন উপচে পড়া ভীড় দেখে এবার বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এত আওয়ামী লীগার এলো কোথা থেকে? এরা কি দলের দুঃসময়ে থাকবে?’

গত সোমবার থেকে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ফরম দেওয়া শুরু করেছে। প্রথম দিন সকাল ৯টা থেকে ফরম দেওয়া শুরু করলেও, ভোর ৬টা থেকে উপজেলা মনোনয়ন প্রার্থীদের লাইন লেগে যায়। আওয়ামী লীগের ফরম বিতরণকারী নেতাকর্মীরা হিমশিম খান ফরম বিক্রী করতে গিয়ে। তারাও অবাক হয়ে যান, এত আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক এলো কোথা থেকে!

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, একটা ধারণা তৈরী হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের টিকিট পেলেই বোধহয় নির্বাচিত হওয়া যাবে! উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা চেয়ারম্যান হওয়া যাবে। এই ধারণা থেকে যে, যেখানে আছে, সবাই ফরম কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগারের সংখ্যাও তাই বেড়ে গেছে। বিষয়টি নীতি এবং দলীয় আদর্শ থেকে দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে বলে শীর্ষ নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

তারা মনে করছেন, ক্ষমতার হালুয়া রুটির লোভে এখন অনেকেই আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। দুঃসময়ে তারা কোথায় থাকবে সেটাই হলো দেখার বিষয়। শীর্ষ নেতারা বলছেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বা ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে মিছিল করারও লোক পাওয়া যায়নি। প্রতিবাদ করার, কর্মসূচী পালন করার লোক পাওয়া যায়নি। এখন যারা এত বড় আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে, সেই আওয়ামী লীগাররা কি দলের যদি দুর্দিন আসে, তখন থাকবে?’

আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল। কিন্তু যেভাবে মনোনয়নের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন লোকজন, তাতে কয়জন আওয়ামী লীগার বা কয়জন সুবিধাবাধী, এটা আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে। মনোনয়নের জোয়ারে যেন সুবিধাবাধীরা আওয়ামী লীগ দখল করে না নেয়, সে ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে মহিলা আসনে সহস্রাধিক মনোনয়ন ফরম কেনা, জমা দেওয়া এবং উপজেলায় দীর্ঘ লাইন দিয়ে মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়টিকে পছন্দ করেননি দলের সভাপতি। তিনি মনে করছেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে। এজন্য অনেক সুযোগসন্ধানী এখন আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়ার পথ খুঁজছে। তারা মনে করছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই হয়তো নির্বাচিত হওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী গতরাতে দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রাজনৈতিক কৌশল এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেন। এ সময় তিনি দলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্য দল থেকে লোকজন এসে যেন বিভিন্ন সুবিধা ভোগীরা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেন দলের সাধারণ সম্পাদককে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা জনপ্রিয় দল, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে, দলের নীতি আদর্শে যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা সবসময় খোলা। কিন্তু কেউ যদি ক্ষমতার হালুয়া রুটি খাওয়ার জন্য, ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা কিংবা দলের সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগ করেন, তাদের ব্যাপারে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদেরকে যে কোনভাবে প্রতিহত করতে হবে। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে। যেন সুবিধাভোগীরা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে সুনাম নষ্ট না করতে পারে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের কর্মী এবং কর্মীদের ডাটাবেজ তৈরীর জন্য ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সারাদেশে কর্মী এবং নেতাদের তালিকা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, ‘প্রধানমন্ত্রী চান না যে আদর্শ বিবর্জিত লোকজন আওয়ামী লীগে ঢুকে দলের সুনাম নষ্ট করুক।’

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!