বিশেষ সংবাদদাতা:
বিএনপির বর্তমানে যে খারাপ সময় চলছে, তা থেকে উত্তরণে পরামর্শ দিচ্ছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেখে বিএনপিকে শিক্ষা নিতে হবে। খালেদা জিয়ার কারাবরণের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবি এবং সুশীলরা বলেছেন, বিএনপি যেভাবে এগুচ্ছে, তাতে দলটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। সংগঠন হিসেবে বিএনপির অস্তীত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
এখান থেকে বাঁচার উপায় কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবিরা বলেছেন, বাঁচার উপায় একটাই- ৭৫ এর পর আওয়ামী লীগ যেভাবে তার সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষা করেছে, ঠিক একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে বিএনপিকে। একাধিক বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপিপন্থী অন্যতম বুদ্ধিজীবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, বিএনপির বর্তমান যে রাজনৈতিক সংকট এবং সিদ্ধান্তহীনতা, সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সাংগঠনিক শক্তি, আদর্শ ও নীতির মাধ্যমেই। বিএনপি যদি তার আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা বা আপোস করে তাহলে সংকট আরো ঘনিভূত হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ এরকম অস্তিত্বের সংকটে পড়েছিল। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শেকে ধারণ, লালন ও চর্চার মধ্য দিয়েই দলকে পুনরজ্জীবিত হয়েছে। আজকে বিএনপিকে নতুন জীবন পেতে হলে তাদের আদর্শের পথ অনুসরণ করতে হবে।’
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের খারাপ সময় এবং সংকট থেকে উত্তরনের জন্য নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হয়। নেতৃত্বের নির্দেশনায় দলকে সংগঠিত করতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও বিএনপিতে ওরকম নেতৃত্ব নেই। এই সংকট দূর করতে বিএনপিকে নিজের ভিতর থেকে নেতৃত্ব খুঁজতে হবে। তারেক জিয়াকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও রাজনীতি থেকে অবসরে যেতে হবে। নতুন নেতৃত্বের উন্মেষ না ঘটলে বিএনপির দিক নির্দেশনাহীন এবং দিকভ্রান্ত রাজনৈতিক দল হিসেবেই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
বিএনপিপন্থী আরেক বুদ্ধিজীবি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, জিয়ার আদর্শের ভিত্তিতেই হবে বিএনপির পুনরুত্থান পর্ব। বিএনপিকে যদি আজকে আবার একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে হয়, তাহলে অবশ্যই জিয়ার নীতি ও আদর্শের প্রতি অটল থাকতে হবে। বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেনি। সমস্যা বিএনপির সাংঠনিক কাজে ও নেতৃত্বে। জিয়ার রাজনীতির পরিবর্তে বিএনপি সস্তা রাজনীতির কাছে নিজেদেরকে বিলীন করে দিয়েছে। সেখান থেকে যদি বিএনপি উত্তরণ না করতে পারে তাহলে এই সংকট মোকাবিলা করা যাবে না। রাজনৈতিক দলে এমন সংকট আসে। ৭৫ এর পর এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগও এমন সংকটে পড়েছিল। কিন্তু তারা সেটা যেভাবে কাটিয়ে উঠেছে, তা থেকেই বিএনপিকে শিক্ষা নিতে হবে। সবার আগে যা দরকার, দলের আদর্শ ও নীতিকে সামনে রাখা। বিএনপির রাজনীতি এখন দিকভ্রান্ত। জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করছে না। তাই খালেদা জিয়ার বন্দীর পর এমন সংকটে পড়েছে। বিএনপি যখন তার নিজের নীতি এবং আদর্শের পথ অনুসরণ করবে। তখনই তারা সংকটের পথ খুঁজে যাবে।