নাটোর প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাত্রীর সন্তানকে কোলে নিয়ে শিক্ষকের ক্লাস করার ছবি ভাইরাল হওয়ার পর প্রশংসা বাণীর মধ্যে উল্টো একটি ঘটনা ঘটল নাটোরে।
জেলার রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে শিশু সন্তান নিয়ে যাওয়ায় ৩ ছাত্রীকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, বৃহস্পতিবার কলেজের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণির ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে নিজেদের সন্তান নিয়ে যান ওই ৩ ছাত্রী। শিশু নিয়ে যাওয়ায় পরে অনুষ্ঠান থেকে তাদের বের করে দেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ মঞ্জুরা বেগম এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা খাতুন।
রোববার এ নিয়ে দুই ছাত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। দুই শিক্ষকের ছবিসহ এমন শিক্ষকের হাত ধরে কীভাবে এগোবে নারী শিক্ষা শিরোনামে দেয়া ওই পোস্টের পর শুরু হয়েছে প্রতিবাদ ও নিন্দা। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন দুই শিক্ষক।
সহকারী অধ্যাপক তাসলিমার দাবি, শিশুরা কান্না করায় অনুষ্ঠানে বিঘ্ন হচ্ছিল। এ জন্য তিনি তাদের বাইরে ঘুরে আসতে বলেছেন। আর অধ্যক্ষ শুনিয়েছেন ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কথা। তার দাবি, এমন কিছু তিনি করেননি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
ওই ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, শিশুদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে অংশ নেয়ায় অধ্যক্ষ মঞ্জুরা বেগম ও সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ৩ ছাত্রীকে বের করে দেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তাদের আর অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা বলেন, ওই অনুষ্ঠানে খুবই ছোট্ট বাচ্চারা কান্নাকাটি করায় অনুষ্ঠানে বিঘ্ন হচ্ছিল। তাই আমি তাদের সেখান থেকে বের হয়ে একটু ঘুরে আসতে বলেছি।
তাদের সাথে ছবিও উঠেছি। বের করে দেয়া ঠিক না। আমি তাদের অনুরোধ করেছি মাত্র। তবে এখনও পোস্টটি দেখিনি, তাই এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
অধ্যক্ষ মঞ্জুরা বেগম বলেন, এমন কোনোই ঘটনা ঘটেনি। আমি অল্প দিন হলো কলেজটিতে যোগদান করেছি। একটি মহল আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
আপনি নাম ঠিকানা দেন। তাদের সাথে কথা বলি। তারা যে ভাষায় ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে তা কোনো শিক্ষার্থীর ভাষা হতে পারে না। কারো ইন্ধনে ওই কজন শিক্ষার্থী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আপনারা ষড়যন্ত্রের কারণ খুঁজে বের করেন।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছেন। ৩ শিক্ষার্থীকে যোগাযোগ করতে বলেছেন। তাদের কাছ থেকে ঘটনা শুনে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
চলতি মাসেই ৩ তারিখ শিশুসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক শিক্ষকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ছবিটিতে দেখা যায়, দুই থেকে ৩ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক। দেখে মনে হচ্ছে নিজ সন্তানকে এমন পরম যত্নে আগলে পাঠদান করছেন তিনি।
তবে মেয়ে শিশুটি তার নিজের নয় বরং করোনার মধ্যে বাল্যবিয়ের শিকার এক ছাত্রীর। জেলার চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঙ্কজ মধু নামের ওই শিক্ষক তাকে কোলে নিয়েই ক্লাস নিচ্ছিলেন।
ওই ছবি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই শিক্ষক পঙ্কজের প্রশংসা করেন। নাটোরের ঘটনায়ও উঠে এসেছে তার নাম।
এ ঘটনায় দেয়া পোস্টে শিক্ষক পঙ্কজের ছবি দিয়ে অনেকেই পার্থক্যের বিষয়টি নির্দেশ করেছেন।