সময় এখন ডেস্ক:
বিতর্কিত ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে যুক্তরাজ্যে ঢুকতে দেয়নি দেশটির হোম অফিস। লন্ডনে ‘আই অন টিভি’র আমন্ত্রণে আগামী ৩১ অক্টোবর একটি ইসলামী কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার।
আজহারীর যুক্তরাজ্যে আসার সংবাদে ক্ষুব্ধ ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রগতিশীল রাজনীতি মানবাধিকার কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।
জানা গেছে, মিজানুর রহমান আজহারী মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) রাতে মালয়েশিয়া থেকে কাতার বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর যখন আজহারী লন্ডনের ফ্লাইটে ওঠার জন্য সংশ্লিষ্ট গেটে আসেন তখনই সেখান থেকে তার ব্রিটেনে আসার ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি।
তবে কেন তাকে এই ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি, অথবা তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে কি না এ সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, কাতার বিমানবন্দর থেকেই গত ১০/১২ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে সমস্যা সমাধানের।
জানা গেছে, আজহারী মালয়েশিয়া থেকে ব্রিটেনে আই অন টিভির আমন্ত্রণে আসছিলেন। আগামী ৩১ অক্টোবর রোববার থেকে লন্ডনসহ ব্রিটেনের ৫টি শহরে ইসলামী বক্তব্যের আয়োজন করা হয় ব্রিটেনের একটি টিভির পক্ষ থেকে।
আজহারী আসার খবরের পর থেকেই কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই আয়োজক টিভির ব্যানারে আজহারীর আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন আবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি থেকে শুরু করে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনেক মানুষ আজহারীর সফরের বিরোধিতা করে আসছিলেন।
ব্রিটিশ এমপি থেকে শুরু করে হোম অফিসসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট জায়গায় মিজানুর রহমান আজহারীর বিভিন্ন বক্তব্য যেখানে ধর্মীয়ভাবে অন্য ধর্মকে আঘাত করা হয়েছে, যেসব বক্তব্য ঘৃণা ছড়ায় এমন সব ভিডিও পাঠানো হয়েছে।
সফর বাতিল হওয়ার বিষয়ে আয়োজক টিভির সিইওর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এছাড়া টেক্সট পাঠানো হলেও সেটার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়া মিজানুর রহমানের মালয়েশিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করলে ও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজহারীর সভা বন্ধ করে দেওয়া হয় গতবছর। তারপর তিনি সভা করতে না পেরে দেশ ছেড়ে যান। বছরের প্রায় পুরোটা সময় থাকেন মালয়েশিয়ায়। উপার্জিত অর্থ দেশের কোনো ব্যাংকেও রাখেন না। বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা চলে যায় মালয়েশিয়ায়।
ধর্মীয় সভায় সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে আদালত অবমাননাকারী মন্তব্য করার কারণে অনেক জায়গায় প্রশাসন তার সভার অনুমতি বাতিল করে দেয়। এরপরই তিনি দেশ ছেড়ে যান। তার সভা বন্ধ করার বিষয়ে সরকারি দপ্তরগুলো প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।
জানা গেছে, আজহারী তার ধর্মসভার নামে রাজনৈতিক সভা থেকে উপার্জিত বিপুল অর্থ নিয়ে মালয়েশিয়া চলে গেছেন। আজহারী তার প্রতিটি সভায় ন্যূনতম ৩ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চার্জ করেন। এই অর্থ তাকে বুকিংয়ের সময় পুরোটা বুঝিয়ে দিতে হয়। অনেক জায়গায় তাকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যেতে হয়। সভা শেষে গন্তব্যে একইভাবে পৌঁছে দিতে হয়।
অনেক সময় সভা সমাপ্তির পর অনুরাগীরা তাকে নগদ টাকা উপহার দেন। সেসবের পরিমাণ হিসেবের বাইরে। শীতকালীন এ সময়ে তিনি শতাধিক ধর্মসভা করেন। সে হিসেবে তার এ সময় আয় ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা। যা থেকে এক পয়সাও তিনি সরকারকে আয়কর দেন না।