অর্থনীতি ডেস্ক:
সাধারণভাবে গাড়ি আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ উচ্চ হারে শুল্ক আদায় করে এলেও এখন দেশেই গাড়ি তৈরি ও রপ্তানির পরিকল্পনা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে শুরু হওয়া ইন্দো-বাংলা অটোমেটিভ শোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে কাজ করছি। তারা ইতোমধ্যে একটা খসড়া তৈরি করেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা সেটা দেখব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে তারা কাজ করছেন।
অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ, টায়ার, লুব্রিক্যান্ট প্রস্তুতকারক ৩৫টি ভারতীয় কোম্পানির পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজির মত প্রতিষ্ঠান ৪ দিনের এ প্রদর্শনীতি অংশ নিয়েছে। এ আয়োজনের অংশ হিসেবে ভারতের অটোমোবাইল খাতের শীর্ষ উদ্যোক্তাদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
যৌথ বিনিয়োগ
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন কিছু ব্র্যান্ডের টু-হুইলার (মোটরবাইক) সংযোজন এবং উৎপাদন করলেও ৪ চাকার গাড়ি তৈরি করা যাচ্ছে না নীতিমালার অভাবে। নীতিমালা হয়ে গেলে তার ধারাবাহিকতায় আইনও প্রণয়ন করা হবে।
বাংলাদেশে গাড়ি তৈরি ক্ষেত্রে সরকার যৌথ বিনিয়োগকে উৎসাহ দেবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব দেশে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় সেখানে গাড়ি রপ্তানির সুযোগ প্রশস্ত হবে সেক্ষেত্রে। গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশে কারখানা খুলতে উৎসাহিত হয়, সেজন্য সরকার ভর্তুকি দিতে পারে বলেও মনে করেন টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ‘খুবই ব্যবসাবান্ধব’। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে যা যা দরকার তা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে এ বিষয়ে তিনি খুবই আশাবাদী। আমরা যদি আমাদের এখানে গাড়ির যন্ত্রাংশ বানাতে পারি, তাহলে আমরা এখানে গাড়িও বানাতে পারব। টায়ার তৈরির কোম্পানিগুলোকেও বাংলাদেশে কারখানা খোলার আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
ভারতের সাফল্য
বিশ্বে গাড়ি তৈরির দিক দিয়ে বিশ্বে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ভারত। বছরে গড়ে ২ কোটি ৪০ লাখ গাড়ি তৈরি করছে তারা। আর ভারতীয় গাড়ির ৫ম বৃহত্তম ক্রেতা হল বাংলাদেশ।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারতের জিডিপিতে অটোমোটিভ খাতের অবদান ছিল ৭.১ শতাংশ। বর্তমানে বছরে ৩৫ লাখের মত গাড়ি বিদেশে রপ্তানি করছে ভারত। ভারতীয় গাড়ির ব্র্যান্ডগুলো ক্রমশ বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিচ্ছে। ৭% এর বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সড়ক অবকাঠামোর উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশেও গাড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করেছে।
নিটোল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে মিলে টাটা মোটর যশোরে গাড়ি সংযোজনের একটি কারখানা পরিচালনা করছে। হিরো মোটোকর্প যশোরে মোটর সাইকেলের কারখানা খুলছে। অশোক লেল্যান্ড ও ইফাদ অটো গাড়ি সংযোজনের কারখানা খুলেছে ঢাকার ধামরাইয়ে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিটোল-নিলয় গ্রুপের প্রধান আবদুল মাতলুব আহমাদ জানান, ৩ দশক আগেও বাংলাদেশে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক যানবাহনের ৯৫% জাপান ও যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করা হত। আর এখন ৯০% বাণিজ্যিক যানবাহন আসে ভারত থেকে। তবে দেশে সেডান গাড়ির বাজার এখনও জাপানি গাড়ির দখলে।
ইন্দো-বাংলা অটোমেটিভ শোর আয়োজকরা বলছেন, এই খাতে ভারতের সাফল্যের গল্প থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারে বাংলাদেশ।
সঠিক নীতি
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, যোগাযোগ যত বাড়বে উন্নয়ন তত সহজ হবে। আবার উন্নয়ন হলে যোগাযাগও সহজ হবে। ফলে অটোমোবাইল শিল্প বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্যই নীতি ‘হালনাগাদ’ করা প্রয়োজন। ব্যবসান্ধব নীতি নেওয়ায় ২ চাকার বাহন তৈরির ক্ষেত্রে বেশ ভালো বিনিয়োগ আসতে দেখেছি আমরা। আমরা যদি ৩ চাকা আর ৪ চাকার বাহনের ক্ষেত্রে এটা করতে পারি, তাহলে আমাদের এখানেও এ শিল্পের বিকাশ সম্ভব।
তিনি বরেন, এজন্য যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য পরিষেবার কাঠামোও বাংলাদেশে গড়ে তোলা দরকার। আমরা এ বিষয়ে জাপানি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের বলেছে, আমরা যদি দেশেই যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা করতে না পারি, তাহলে সবকিছু আমদানি করে শিল্প চালানো কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে গাড়ি নির্মাণকে পুরোদস্তর শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে অনেক কিছু করতে হবে মন্তব্য করে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এখনও আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, নীতি সুপারিশগুলো তৈরি করছি। আমরা আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতেই আমরা দেশে ৪ চাকার গাড়ি তৈরি হতে দেখব।
কাজী আমিনুল মনে করেন, গাড়ি আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের যে নীতি সরকার দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করে আসছে, তা সঠিক ছিল। সময়ে সময়ে আমাদের নীতি হালনাগাদের প্রয়োজন হয়। আমরা দেশে গাড়ি তৈরি করব স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করার লক্ষ্য নিয়ে। তবে এমনভাবে গাড়ি বানাতে হবে, যাতে তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। একনেকের গত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, দেশের সব রাস্তা হবে ৪ লেইনের। আমাদের সড়ক অবকাঠামোতে এখনও কিছু ঘাটতি আছে। সেখানে উন্নতির সুযোগ আছে, উৎপাদন খাতেও নজর দিতে হবে। সঠিক নীতিটা আমাদের এখনই ঠিক করতে হবে।
বিডি নিউজ