রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইন যাচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তারা

0

অর্থনীতি ডেস্ক:

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল আগামী সপ্তাহে ফিলিপাইন যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান আইনজীবী (লিগ্যাল অ্যাডভাইজার) আজমালুল হোসেন কিউসি। সুপ্রিম কোর্টের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির টাকা ফিরিয়ে আনতে আমাদের আইনি লড়াই চলছে। নিউইয়র্ক ফেডারেল কোর্টে মামলা চলছে। আগামী ২ এপ্রিল মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ রয়েছে। তবে শুনানির আগেই এই মামলার বিবাদী পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছি। সমঝোতার মাধ্যমে সম্মানজনক সমাধানের জন্যই বসতে যাচ্ছি আলোচনায়।

তিনি আরও বলেন, ফিলিপাইনে যাওয়ার আগে আগামী ১০ মার্চ নিজেদের মধ্যে বসে আলোচনার কৌশল ঠিক করা হবে। এছাড়া আগামী ১১ ও ১২ মার্চ মামলার বিবাদী ফিলিপাইনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিভাগীয় বিচারক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে প্রতিনিধি দলটি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেবরুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ৭০টি ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে মোট ১৯২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অবৈধভাবে নেয়ায় চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে একটি পরিশোধ অর্ডারে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার ও ৪টি অর্ডারে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের একটি শাখার ভুয়া গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়।

শ্রীলঙ্কা থেকে ইতিমধ্যে চুরি হওয়া সব অর্থ ফেরত এসেছে। আর ফিলিপাইনে যাওয়া অর্থের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেশটির কোর্টের আদেশে ফেরত আনা হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার অনাদায়ী রয়েছে, যা আরসিবিসির কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রিজার্ভ চুরির নেপথ্যে:

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক এক চক্র। যে ঘটনায় উত্তর কোরীয় এক হ্যাকার জড়িত বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪ সালে সনি কর্পোরেশনে সাইবার হামলা এবং ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার কম্পিউটার ম্যালওয়ার ছড়িয়ে দেয়ার জন্যও পার্ক জিন হিয়ক নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ।

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন ডেমারস জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া সরকারের আশির্বাদপুষ্ট হয়েই এসব হ্যাকিং কর্মকাণ্ড করেছেন পার্ক জিন। অভিযোগে শুধুমাত্র তার নাম রয়েছে। যদিও এ কাজে তার সঙ্গে আরো অনেকেই জড়িত।

হিয়ক চীনের একটি কোম্পানিতে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৪ সালে সনিতে সাইবার হামলার কিছু পূর্বে তিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে যান। এরপর বাংলাদেশ ও পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায়ও জড়িত ছিলেন। এছাড়া ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটারে ‘ওয়ানাক্রাই র‌্যানসমওয়্যার’ ছড়িয়ে দেন তিনি। এর ফলে ১৫০টি দেশের প্রায় ২ লক্ষ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই সকল হামলার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় তদন্তকারীরা।

নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে বাংলাদেশের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে ট্রান্সফার করে নেয় হ্যাকাররা। তবে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো ২ কোটি ডলার আটকানো গেলেও ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। পরে ফিলিপাইন সরকার দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ ফিলিপাইনের যে ব্যাংকে পাঠানোর পর হাপিস করা হয়েছিল, সেই রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা মায়া সান্তোষ দেগুইতো দাবি করেছিলেন, এ ঘটনায় হোতাদের বাদ দিয়ে তাকে দাবার ঘুঁটি বানানো হয়েছে। ফিলিপাইনে ওই চুরির অর্থ ঢোকানোর পেছনে অনেক দেশের প্রভাব ও ক্ষমতাধর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাংকটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে।

তবে উত্তর কোরিয়ায় অবস্থান করা পার্ক জিনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হবে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!