অনলাইন ডেস্ক:
সিইও (CEO- Chief Executive Officer বা প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা) শব্দটি শুনলে যে কারোই হয়তো মাথায় আসতে পারে বড় কোন কোম্পানীর প্রধান বা কোন নামি-দামি কোম্পানির প্রধানের লোভনীয় পদ। তবে সব সিইও মানেই যে ভালো কিছু তা কিন্তু ভুলেও ভাববেন না। কোন জঙ্গি সংগঠনের প্রধানও কিন্তু হতে পারেন সংগঠনটির সিইও।
বিশ্বের অন্যতম চির বৈরী দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্থানের কথাই ধরুন। বিশ্বে জ্ঞান, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি খাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি দেশ। বিশ্বের টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে একের পর এক প্রধানের পদে আসীন হচ্ছে। গুগল, মাইক্রোসফট, টুইটারের মতো বড় কোম্পানির প্রধান এখন ভারতীয়রা। সম্প্রতি টুইটারের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সিইও হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন এক ভারতীয়।
অন্যদিকে আরেকটি দেশ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরী করছে একের পর এক জঙ্গীগোষ্ঠী আর সেসব সংগঠনের প্রধানের পদগুলোতে শোভা পাচ্ছে পাকিস্থানি নাগরিকদের নাম। এমনকি পাকিস্থানের প্রধান রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র বিরুদ্ধে অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠনকে মদদ, প্রশিক্ষণ, বিস্তার ও অর্থায়নের প্রমাণ রয়েছে।
চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বব্যাপী ভারতের শীর্ষ ৫ জন সিইও ও পাকিস্থানের শীর্ষ ৫টি জঙ্গি সংগঠন প্রধানের সম্পর্কে।
ভারতের শীর্ষ পাঁচ:
সুন্দর পিচাই, গুগল: পিচাই সুন্দররাজন হলেন একজন প্রযুক্তি নির্বাহী ও গুগল ইনকর্পোরেটেডে পণ্য প্রধান। তিনি ‘সুন্দর পিচাই’ নামেই অধিক পরিচিত। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট তাকে গুগলের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পিচাই ১৯৭২ সালে ভারতের চেন্নাইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
সত্য নাদেলা, মাইক্রোসফট: সত্য নাদেলা বা নাদেলা সত্য নারায়ণ হলেন মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। স্টিভ বলমারের পরে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে তাকে সিইও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ১৬ জুন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। সত্য নাদেলা ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে এক তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
শান্তনু নারায়ণ, অ্যাডোব: শান্তনু নারায়ণ একজন ভারতীয় আমেরিকান ব্যবসায় নির্বাহী এবং অ্যাডোব ইনকর্পোরেটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এর আগে ২০০৫ সাল থেকে তিনি চিফ অপারেটিং অফিসার ছিলেন। তিনি ভারতের বেসামরিক নাগরিক হিসেবে ২০১৯ সালে পদ্মশ্রী সম্মান লাভ করেন। তার জন্মস্থান ভারতের মুম্বাই।
অরবিন্দ কৃষ্ণ, আইবিএম: অরবিন্দ কৃষ্ণ একজন ভারতীয় আমেরিকান ব্যবসায়িক নির্বাহী। ২০১৫ সাল থেকে আইবিএমের সিনিয়র সহ-সভাপতি। অরবিন্দ প্রকৌশলী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এবং দ্রুত কোম্পানির কার্যনির্বাহী পদে উন্নীত হন।
তিনি রেড হ্যাটের সাথে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির উদ্যোক্তা ছিলেন, যা এখন পর্যন্ত আইবিএমের বৃহত্তম ক্রয়। ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল, তিনি আইবিএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। অরবিন্দ কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন ভারতের উত্তরাখন্ডের দেরাদুনে।
পরাগ আগরওয়াল, টুইটার: টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ৩৭ বছর বয়সী জ্যাক ডরসি অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন প্রধান নির্বাহী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরাগ আগারওয়াল। পরাগ আগারওয়াল ২০১১ সালে টুইটারে যোগ দেন।
পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি হতে হতে প্রধান প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা পদে উন্নীত হন। আর ২০২১ সালের নভেম্বরে পদোন্নতি পান টুইটারের নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে। ১৯৮৪ সালে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরে জন্মগ্রহণ করেন পরাগ আগরওয়াল।
পাকিস্থানের শীর্ষ পাঁচ:
হাফিজ সৈয়দ, জেইউডি: হাফিজ মুহাম্মদ সাইদ হলেন একজন পাকিস্থানি মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী, যিনি পাকিস্থান থেকে পরিচালিত লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং জামাত-উদ-দাওয়াহ (JUD) প্রধান। সাঈদ এনআইএ’র মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় এবং জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।
ভারত তার সংগঠন এলইটি এবং জেইউডিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াও লস্কর-ই-তৈয়বাকে নিষিদ্ধ করেছে।
মাসুদ আজহার, জইশ-ই-মোহাম্মদ: মোহাম্মদ মাসুদ আজহার আলভি একজন উগ্র ইসলামপন্থী এবং সন্ত্রাসী। তিনি পাকিস্থান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা। মূলত কাশ্মীর অঞ্চলের পাকিস্থান-শাসিত অংশে তার সংগঠন সক্রিয়।
তার কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, বিবিসি নিউজ তাকে “ব্রিটেনে জিহাদের সূচনাকারী ব্যক্তি” হিসাবে বর্ণনা করেছে। ২০১৯ সালের পহেলা মে মাসুদ আজহার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়।
জাকিউর রহমান লাখভি, লস্কর-ই-তৈয়বা: জাকিউর রহমান লাখভি একজন পাকিস্থানি সন্ত্রাসী এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় জড়িতদের মধ্যে একজন, তিনি ভারতের এনআইএ কর্তৃক মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন। গুজরানওয়ালার একটি আহলে-ই-হাদিস স্কুল জামিয়া মোহাম্মদিয়ার একজন স্নাতক।
তাকে এলইটি-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আমির হামজা “পাকিস্থানে সালাফি জিহাদের স্থপতি” হিসাবে বিবেচনা করেছেন। তিনি আফগানিস্তান, চেচনিয়া, বসনিয়া, ইরাক এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার সূচনা করেছেন। দলের কর্মীরা তাকে চাচু বা চাচা বলে ডাকেন।
নূর ওয়ালি মেহসুদ, টিটিপি: নূর ওয়ালি মেহসুদ একজন পাকিস্থানি পশতুন জঙ্গি। তিনি তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্থানের চতুর্থ আমির। ২০১৮ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় প্রাক্তন আমির মোল্লা ফজলুল্লাহ নিহত হওয়ার পর মেহসুদকে টিটিপির আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
মেহসুদের নিয়োগের পর থেকে টিটিপিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে বলে মনে কার হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে মেহসুদকে বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে মেহসুদকে জাতিসংঘ আইএসআইএল (দায়েশ) এবং আল-কায়েদা নিষেধাজ্ঞা কমিটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
ইউসুফ মনসুর খুরাসানি, এলইজে: লস্কর-ই-জানভি-আল-আলামির নেতা হলেন ইউসুফ মনসুর খুরাসানি (ওরফে সৈয়দ সফদর শাহ)। করাচির বাসিন্দা বলে মনে করা হয় তাকে। খুরাসানি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
খুরাসানি পূর্বে করাচিতে এলইজে-এর বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে কাজ করেছেন এবং প্রতিবেশী আফগানিস্তানে ঘন ঘন সফর করেছেন। সেখানে তিনি অন্যান্য জিহাদি সংগঠনের নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
তুলনামূলক বিশ্লেষণে এটুকু স্পষ্ট হয়, ভারতের প্রযুক্তিবিদরা যেখানে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন; বিপরীতে পাকিস্থানের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো বিশ্বকে বসবসারে অনুপযুক্ত করে তুলতে ব্যস্ত।