স্পেলাল করেসপন্ডেন্স:
একটু পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটি শুরুতেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-টুইটারের প্রচার-প্রসারেরও অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটে মুক্তমত প্রকাশের চর্চা চলমান ছিল বিভিন্ন কমিউনিটি ব্লগে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করা এবং পাকিস্থানের সাথে মিলেমিশে যাওয়ার বাসনায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রপাগান্ডার সর্বোচ্চ স্তর অতিক্রম করেছিল, তখন সেসব অপপ্রচার-গুজবের বিরুদ্ধে নথিপত্র নিয়ে যুদ্ধে নামেন একদল নিঃস্বার্থ যোদ্ধা।
রীতিমত গায়েব করা নথিপত্র পুনরূদ্ধার করে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ডিসক্লোজড করা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস এবং ফ্যাক্টস নিয়ে সেই যোদ্ধারা বিএনপি-জামায়াতের সেসব অপপ্রচার ও গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তরুণ প্রজন্মকে আলোর পথ দেখান। তুলে ধরেন বিএনপি-জামায়াতের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের স্বরূপ। সেই নতুন প্রজন্মের যোদ্ধাদেরকে পরবর্তীতে অভিহিত করা হয় ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে।
প্রযুক্তির সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অনলাইন অ্যাক্টিভিজমে পরিবর্তন এসেছে। তাদের জোরালো প্রতিবাদের ফলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার সেই অন্ধকারের জীবদের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিয়েছে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর যারা গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে দম্ভের সাথে প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিল, আমাদের ** ছিঁড়তে পারবে না কেউ। সহিংসতার পথে নয়, তাদেরকে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে সেই শত্রুরাও কিন্তু নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। বিদেশে পাচারকৃত যুদ্ধাপরাধী পরিবারগুলোর বিপুল পরিমাণ অর্থের সদ্ব্যাবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। বিপুল অর্থ খরচ করে এবং পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র তত্ত্বাবধানে তারা সুসংগঠিত হয়েছে। দেশে বিস্তার ঘটিয়েছে অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠনের। তাদেরকে দিয়ে একের পর হত্যা করা হয়েছে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগারদের।
তথ্য-উপাত্ত ও নথিপত্রের সামনে নিজেদের সৃষ্ট গুজব-অপপ্রচার পাত্তা না পাওয়ায় তারা সহিংসতার পথ বেছে নেয়। যার ফলে ঝরে যায় একের পর এক তরুণ ব্লগার, লেখক, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের প্রাণ। স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দেয়া সেই শকুনদের ভয়াল থাবায় সাময়িকভাবে থমকে যান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির তরুণরা।
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া জামায়াত ও শিবিরের ফেসবুক ফ্রন্ট হলো বাঁশের কেল্লা। যারা দেইল্যা রাজাকারকে চাঁদে দেখা গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল নিরীহ মানুষকে। সেই বাঁশের কেল্লাই তরুণ অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যায় ইন্ধন যোগায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের কাণ্ডারী শেখ হাসিনার নির্দেশে জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে দেশ ছেড়ে পালায় অনেক দুষ্কৃতিকারী। চিকিৎসার নাম করে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পলাতক বিএনপি নেতা দুর্নীতর বরপুত্র মি. টেন পার্সেট খেতাবপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী পক্ষকে একাট্টা করতে।
সিআইএ’র ফ্রন্ট এনইডির অর্থায়নে পরিচালিত নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল ওরফে টাকলা খলিল এবং তার পার্টনার যুদ্ধাপরাধীদের লবিস্ট ডেভিড বার্গম্যান (ড. কামাল হোসেনের জামাতা) এর মাধ্যমে তারেক রহমানের এই টিমে যোগ দেয় দুর্নীতিবাজ ও প-গ্রাফির মামলা খাওয়া রাজাকারপুত্র, ব্ল্যাকমেলিং করে চাঁদাবাজির মামলা খাওয়া সাংবাদিক, জঙ্গিবাদে অর্থায়ন এবং প্রশিক্ষণ দেয়া বহিষ্কৃত সেনাসদস্যসহ অনেক কালপ্রিট।
এই গুজব-অপপ্রচারকারী টিমের কয়েকজন সদস্য- তাসনিম খলিল, ডেভিড বার্গম্যান, মেজর (বহিস্কৃত) দেলোয়ার হোসেন, কর্নেল (বহিস্কৃত) শহিদ উদ্দিন খান, ক্যাপ্টেন (বহিস্কৃত) শহীদ ইসলাম, টিটো রহমান, মোহাম্মদ শামসুল আলম, নাজমুস সাকিব, এম রহমান মাসুম, কনক সরওয়ার, ইলিয়াস হোসেন, পিনাকি ভট্টাচার্য, জাওয়াদ নির্ঝর, হাসিনা আক্তার প্রমুখ।
মতাদর্শ যা-ই হোক, তাদের সবার লক্ষ্য একটাই; মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করা, অপপ্রচার গুজব ও উসকানির মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে উত্তেজিত করার চেষ্টা, সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ও ভাঙনের চেষ্টা করা, ভারত-বিরোধিতার আড়ালে পাকিস্থানের প্রতি মহব্বত জাগিয়ে তোলা, একাত্তরের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা এবং বিএনপি-জামায়াতকে পুনরায় ক্ষমতায় বসিয়ে দেশকে পাকিস্থানের হাতে তুলে দেওয়া।
আর এই প্রচেষ্টা চলছে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। তরুণ প্রজন্মকে দমাতে না পেরে হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছিল যারা, তাদের সেই জুজু কাটিয়ে উঠে তরুণরা দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে আবারও সংগঠিত হয়। একদিকে বিদেশে বসে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে ইউটিউব ও ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে দেশবিরোধী গুজব, তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে তাদের এদেশিয় দোসর পোষা সাংবাদিক ও টকশোজীবীদের সুকৌশলে ছড়ানো অপপ্রচার।
তরুণরা অনলাইনে মুখোশ খুলে ধরতে শুরু করে অপপ্রচারকারী সেই অপশক্তির। একে একে বহিস্কৃত সেনাসদস্য, সাংবাদিকতার নামে ধান্দাবাজি করা মুখোশধারী শয়তানদের চিনতে শুরু করে জাতি। ফলে তাদের মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে নির্মিত গালগল্প আর ইউটিউব কন্টেন্ট মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে। সবাই দেখতে শুরু করে তাদের আসল চেহারা। বিদেশে বসে প্রসব করা সেসব মিলিয়ন ডলারের আষাঢ়ে গল্প নিয়ে ট্রল করা হয়। তাতে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায় গুজব চক্রের অন্তর।
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের তথ্য, গুজব-অপপ্রচারকারী ও দেশবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে যে তরুণরা শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের একজন নাহিদ হেলাল। নাহিদ রেইন্স নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই তরুণ নিয়মিত ভিডিও ব্লগ শেয়ার করেন। যেখানে তিনি সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে গুজব-অপপ্রচারের দাঁতভাঙা জবাব দেন। গত কয়েক বছর ধরেই তিনি অক্লান্তভাবে চালিয়ে গেছেন তার পেজ থেকে এমন ভিডিও প্রচার।
যখন সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত, নুরুর অধিকার পরিষদ, বাঁশের কেল্লার অ্যাডমিন মিজানুর রহমান (গ্রেপ্তারকৃত), বিএনপির মেয়র সাক্কুর পিএস বাবু (গ্রেপ্তারকৃত)সহ ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দ্বারা হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছিল তখন সেই ইস্যুতেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোশ খুলে দিতে নাহিদ ভিডিও শেয়ার করেন।
ফলে নাহিদকে কোনভাবেই থামাতে পারছিল না সেই পুরনো শকুনরা। দেশবিরোধীদের মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টগুলো ব্যর্থ হতে থাকে, তাদের কন্টেন্ট মেকারদের পেমেন্ট আটকে যায়। আর এটা খুবই স্বাভাবিক, পেটে লাথি পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে যে কোনো দিনমজুরই। তাই তারা পুরনো পথ বেছে নেয়। নাহিদকে ডাউন করার চেষ্টা চলছে এই মুহূর্তে। বাঁশের কেল্লা তার ছবি এবং পরিচয়সহ পোস্ট দিচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই- ব্লগার কিলিংয়ের মত একইরকম উসকানি প্রদান।
বিশিষ্ট সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল গতকাল বলেছেন-
“নাহিদের পিছনে লেগেছে বেশ কিছু পক্ষ। তার সম্পর্কে উল্টা-পাল্টা প্রচার চলছে। অথচ ইলিয়াস, কনক, দেলোয়ারদের বকওয়াজ শুনে অনেকের নাকি পরান জুড়ায়। কিন্তু এই অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে গত এক বছরে কন্টেন্ট নিয়ে সমানে-সমানে লড়েছে এই নাহিদ। আর তাই এ মুহূর্তে তার ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশন চলছে। নাহিদ তবুও তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর আপনারা সমালোচনাকারীরা ঠিকই মুখে কলা দিয়া বসে ছিলেন এবং আছেন।
দেশপ্রেম ভিন্ন জিনিস। সেটা একজন দেহজীবীও দেখাতে পারে বিবেকের তাড়নায়। অপনাদের এই অবস্থান নিঃসংকোচে এগিয়ে আসা নাহিদদের মত তরুণদেরকে বিপদে ফেলছে। নিজে লড়েন না, আবার লড়াকুদের কুৎসা গাইবেন তা তো হয় না। সে যা করছে, আপনিও তাই করে দেখান- প্রমাণ করেন আপনি তারচেয়েও ভালো যোদ্ধা। তখন মেনে নেবো। আর সে যোগ্যতা না থাকলে অফ যান। জামায়াত-বিএনপির ট্র্যাপে পা দেবেন না। এখন সবাইকে পাশে দরকার।”
ডা. মুরাদের সাথে লাইভের পর থেকে দেশবিরোধী চক্র নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তারা আবারও তাদের মিলিয়ন ডলার মূল্যের গুজব স্টোরের ঝাঁপ তুলে দোকানদারিতে বসে গেছে। শুরু করেছে তাদের গুজবের তাবিজ বিক্রি। নাহিদ হেলালের কন্টেন্টের জবাব দিতে না পেরে এখন তার চরিত্রহননে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর পাশাপাশি বাঁশের কেল্লা নাহিদের ঠিকানা প্রকাশ করে তাকে উগ্রবাদীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার কাজে ব্যস্ত।
জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত গোপন যোগাযোগের মাধ্যম টেলিগ্রাম চ্যানেলে নাহিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা চলছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
মনে রাখবেন, আজ যদি বিএনপি-জামায়াত এই তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট নাহিদকে থামিয়ে দিতে পারে, কাল অনলাইনে কে আসবে এসব গুজব-অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে? আপনি আসবেন? যদিও সাহস নিয়ে এগিয়ে আসেন, তখন ওরা একইভাবে আপনাকেও টার্গেটে পরিণত করবে, ইস্যু তৈরি করে অনলাইনে রোস্ট করার চেষ্টা করবে।
এখন প্রয়োজন অপশক্তির বিরুদ্ধে সামগ্রিক ঐক্য। পোড় খাওয়া অ্যাক্টিভিস্টিদের বহু বছরের অভিজ্ঞতায় এটুকু স্পষ্ট, দেশবিরোধী জামায়াত-শিবির যখন কারো পেছনে আদাজল খেয়ে লাগে, বুঝতে হবে তারা বড় কোনো প্ল্যানিংয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকেই যাচ্ছে। শুধুমাত্র একজন তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট নাহিদ তাদের একমাত্র টার্গেট নয়, তাদের টার্গেট দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ। বাঁশের কেল্লা এখন সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছ।