সন্দ্বীপ প্রতিনিধি:
হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু ৭১’এ রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা (মুক্তিযোদ্ধা সনদ নাম্বার- ২০২৫৩০), গত ২৯ মার্চ শুক্রবার রাত ৮টায় তিনি চট্টগ্রামের দুই আলবদর সদস্য আবুল কাশেম হায়দার ও সেলিমউদ্দিন হায়দারের ৭১’র স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ড এবং ৭১ পূর্ব কর্মকান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। একইসাথে দুই স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবী জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টুকে হেয় প্রতিপন্ন করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য সহ তাঁর মুঠোফোনে অপরিচিত নম্বর হতে ফোনে ‘দুই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে করা পোস্ট তুলে নিতে এবং ভয়াবহ পরিণতির (প্রাণনাশের) হুমকি প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু।
মুক্তিযোদ্ধা মিন্টু বলেন, ফেসবুক পোস্টটি দেয়ার পর থেকে আমার মোবাইলে বেশ কয়েকটি অপরিচত নাম্বার কল করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তারা আমাকে পোস্টটি তুলে নিতেও চাপ প্রয়োগ করছে। জীবনে আমার কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন নাগরিক হিসেবে সন্দ্বীপের এই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আবুল কাশেম হায়দার ও সেলিমউদ্দিন হায়দারের বিচার দেখে যেতে চাই।
হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টুর ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার প্রিয় নেত্রীর কাছে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জানতে ইচ্ছা করে”? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে, আমরা সন্দ্বীপ থেকে চট্রগ্রাম হয়ে, মনিরুল হক জাহাজে করে, শত শত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জে এসে, পায়ে হেঁটে বর্তমান বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়ামে বঙ্গন্ধুর নিকট অস্ত্র জমা দিয়ে ছিলাম।
প্রথমে একটি অস্ত্র মরহুম শেখ মণি ভাই উনার পায়ের নিচে সমর্পণ করেছিলাম। সেদিন সারা ঢাকা শহরে যে অবস্হা দেখেছিলাম তা আজও চোখে ভাসে, হাজার হাজার পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা যারা যুদ্ধে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করার পরেও তাদের চোখে মুখে বিজয়ের হাসির ঝিলিক দেখেছি। দেখেছি উন্মাদ, অর্ধউন্মাদ হাজার, হাজার মা-বোনদের দুই চোখে অশ্রুর বন্যা বহে যেতে, যাদের ইজ্জৎ লুটে নিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী, বাঙ্গালী বেঈমান, রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও শান্তি বাহিনীর লোকদের সহযোগিতায়।
তৎকালিন সময়ে যাঁদের নাম দেওয়া হয়েছিল, “বীরঙ্গনা।” প্রিয় নেত্রী সে স্মৃতি কি মনে পড়ে? আজ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মাসের শেষ প্রান্তে এসে তাঁদের কথা বেশী বেশী মনে পড়ে। এসব বর্বর ঘটনা যারা ঘটিয়েছিলো সে সব মানবতাবিরোধী অনেককে স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তি বর্তমান সরকার শাস্তি দিয়েছেন।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের সন্দ্বীপে যে ২ জন সে সময়ে জঘন্য মানবতাবিরোধী কাজ করেছিলেন তারা আজও বহাল তবিয়তে সমাজে মাথা উচুঁ করে বসবাস করে যাচ্ছে! সে দুজন স্বীকৃত রাজাকারের নাম আমার লেখা ”হৃদয়ে সন্দ্বীপ” গ্রন্হে উল্ল্যেখ করেছি।
একজন হলো- দন্ডপ্রাপ্ত, কুখ্যাত রাজাকার সালাউদ্দিন চৌধুরীর সে সময়ের ডান হাত, তৎকালিন ছাত্র সংগঠন (এনএসএফ) সদস্য। অপরজন হলো- তৎকালিন ছাত্রসংঘের (বর্তমান ছাত্র শিবির) চট্রগ্রাম জেলার সভাপতি, আলবদর বহিনীর অন্যতম সদস্য ও ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসিম আলীর অন্যতম সহযোগী, এরা চট্রগ্রাম শহরে রাতে কার্ফু জারি করে সব অপকর্মে লিপ্ত হতো।
নুর আহমদ সড়কে, টেলিগ্রাম হিলের নীচে, ডালিম হোটেলে, মরহুম ডঃ রাজীব হুমায়ুনের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিনকে হত্যা করেছে। এরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠতা মরহুম কবি বেলাল মোহাম্মদের বাড়ী লুট করেছে। চকবাজার ডালিম হোটেল, সাকা চৌধুরীর “গুডস হিল” এর বাসভবন এদের কুকর্মের স্বাক্ষ্য আজও বহন করে আছে।
ছবি: কুখ্যাত দুই যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে দেয়া ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিণশটএরা কত মা বোনের ইজ্জৎ লুটেছে, কত বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তা অজানা। সন্দ্বীপে গিয়ে লুকানো অবস্হায়, দুই জনে মুক্তি বাহিনীর হাত থেকে, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়।
একজন তো ভাল মানুষ সেজে, সন্দ্বীপের আওয়ামী নেতাদের ম্যনেজ করে, সন্দ্বীপ উপজেলার একসময়ে “আহ্বায়ক হয়েছিল”।। তার পুর্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুব লীগের সদস্য হয়েছিল। জনকন্ঠে রাজাকার হিসাবে নাম প্রকাশের পর, তাকে বহিষ্কার করা হয়। কীভাবে সেটা ম্যানেজ করেছিল, সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় আসনে মনোয়নের জন্য আবেদন করতে সাহস না করে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতালীগ থেকে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিল।
তাই প্রিয় নেত্রীর কাছে জানতে ইচ্ছে করে এত কিছুর পরেও তারা এ বাংলাদেশে মাথা উচু করে কীভাবে ঘুরে বেড়ায়? বিশ্ব নেত্রী, মানবতা দরদী, আমার প্রিয় নেত্রী, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন আশু তদন্ত সাপেক্ষে এদেরকে বিচারের আওতায় আনা হউক। তাহলে সকল শহীদ ও নির্যাতিতের আত্মা শান্তি পাবে।
নিন্মে তাদের ছবি সহকারে নাম দেওয়া হইল।। নিবেদক- হেদায়েতুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং- ২০২৫৩০। গত ১১তম সংসদ নির্বাচনে চট্রগ্রাম-৩ আসন, সন্দ্ধীপ হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম।
উল্লেখ্য, সেলিম উদ্দিন হায়দর ও আবুল কাশেম হায়দর, কুখ্যাত মীর কাশেম আলীর একান্ত সহচর ছিল।”
সূত্র: বাংলাধারা
কৃতজ্ঞতা: সাইফুল ইসলাম, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট