মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:
নুসরাত মারা যেতে চায়নি, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, মারা যেতে যেতে নুসরাত আপনার দিকে, আমার দিকে, সমাজের দিকে, রাষ্ট্রের দিকে অনেকগুলো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে গেছে:
১. নুসরাত একটি ধর্মশিক্ষালয়ে লেখাপড়া করতো, সেখানকারই প্রধান অধ্যক্ষ তাকে শারীরিক ভাবে আক্রমণ করেছে, বিচার চাওয়ায় তাকে পুড়িয়ে মারা হলো- ধর্মও তাকে রক্ষা করতে পারলো কি?
২. নুসরাত তথাকথিত ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতো, তাকেও পুরুষ-শিক্ষকের আক্রমণের নিশানা হতে হলো, শেষ অবধি মরতে হলো- আপাদমস্তক পোশাকে মুড়েও তবে নারীর রক্ষা নেই?
৩. গত মাসের শেষ দিকে নুসরাতের মা বাদি হয়ে অধ্যক্ষের নামে মামলা করেছেন, এ মাসের প্রথম সপ্তাহে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়- এর মাঝে কোথায় রাষ্ট্র? কোথায় সমাজ? কোথায় নিরাপত্তা? কোথায় মানবতা? কোথায় আইন? কোথায় আদালত?
৪. নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার পর ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে মিছিল হলো, রাস্তায় নামানো হলো নারীকেও- অপরাধী, ধর্ষক ও ভয়ঙ্কর এক অপশক্তির পক্ষে রাস্তায় নামার মতো এদেশে যদি থাকে তাহলে নুসরাতের মৃত্যুই কি শ্রেয় নয়?
৫. আমরা টক শো‘য়, পত্রিকার পাতায় গলা উঁচিয়ে বলছি যে, সামাজিক অবক্ষয় কী অসম্ভব এক সীমায় পৌছে গেছি যেখানে একটি মেয়েকে নিপীড়নের বিচার চাওয়ায় তাকেই পুড়িয়ে মারা হলো- এই সমাজের অংশীজন হিসেবে আপনার এখন কর্তব্য কী?
৬. নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে চিৎকার করছেন যারা তাদেরকে নিয়ে হাস্যরসের কমতি নেই, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার গোষ্ঠীবদ্ধভাবেই- একেকজন নুসরাত-এর মৃত্যু আমাদের এই সহিংসতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, কী করছে এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র?
৭. নুসরাত মারা যেতে যেতে প্রতিবাদ করে গেছে, আপনার মুখে দিয়ে গেছে ভাষা “বিচার চাই”- আপনি, আমি, সমাজ ও রাষ্ট্র নুসরাতের প্রতিবাদের ভাষাটি আসলেই বুঝতে পেরেছিতো?
৮. নুসরাত গতকালও ছিল, আজ নেই, তাকে হত্যা করা হয়েছে পুড়িয়ে- না না নুসরাত আপনার কন্যা, বোন বা মায়ের জাতি হিসেবে কোনো অনুকম্পা চায়নি, নুসরাত মানুষের সম্মান চেয়েছে আপনার, আমার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে, নুসরাতকে আমরা ‘মানুষের সম্মান’ দিতে পারবো কি?
৯. নুসরাতের মা বলেছেন, নুসরাতকে যেনো এলাকায় নিয়ে গিয়ে গোসল না দেওয়া হয়- নুসরাতের মা ওই এলাকা বলতে কি বাংলাদেশটাই বোঝাচ্ছেন না?
১০. আজকে নুসরাতের শরীরে আগুন না দিলে, মারা না গেলে, ২৭শে মার্চ তাকে শারীরিক ভাবে আক্রমণের দায়ে তার মা’র দায়ের করা ধর্ষণ মামলা কতোদূর যেতো? যেভাবে ধর্ষকের পক্ষে রাস্তায় মিছিল হয়েছে তাতে সহজেই বোঝা যায় যে, আরও অনেক নুসরাতকে অধ্যক্ষের লালশার শিকার হয়ে বোরখায় মুখ ঢেকে জীবন-বাঁচাতে হতো। নুসরাতের মৃত্যু বলছে আপনাকে, আমাকে, সমাজকে রাষ্ট্রকে।
আরও আরও আরও আরও আরও নুসরাতের হত্যা ঠেকাতে আপনারা কী করবেন?
লেখক: মাসুদা ভাট্টি
পরিচিতি: সাংবাদিক, কলামিস্ট, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি
1