শুদ্ধি অভিযান শুরু আওয়ামী লীগের, আশ্রয়দাতাদেরও রেহাই নেই

0

সময় এখন ডেস্ক:

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে বহুসংখ্যক নেতাকর্মী উড়ে এসে যোগদান করেছেন। এসব নেতার অনেকেই নানা রকম অপকর্মে লিপ্ত হয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে মনে করছে বলে মনে করছেন শীর্ষনেতারা। তাই বহিরাগতদের নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অন্যদল থেকে এসে ঢুকে পড়া নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু ক্ষমতাসীন দলটি।

সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানকে হত্যার ঘটনার সন্দেহভাজন কয়েকজনের সাথে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা থাকা নিয়ে যে সমালোচনা বিতর্ক হচ্ছে- সে প্রসঙ্গে দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, অন্য দল থেকে আসা লোকজনের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নুসরাত হত্যায় জড়িতদের সাথে গাঢ় সম্পর্ক থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে সোমবার ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পুলিশ বলেছে, প্রধান অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা আগে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও বিগত কয়েক বছরে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতা কর্মীদের অনেকে বলেছেন, ক্ষমতার সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে যোগদানকারীর সংখ্যা উদ্বেজনক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীর সংখ্যা প্রচুর।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ১৩ জনের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১০ জনকে ইতিমধ্যেই রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

সোনাগাজী আওয়ামী লীগের নেত্রী মর্জিনা আক্তার বলেন, সাবেক জামায়াত নেতা সিরাজ উদ দৌলা স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’এক জনের সাথে যোগসাজশ করে চলতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকেই উল্টো অস্বস্তিতে ফেলেছে।

যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা সোনাগাজীর হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই ছাড় না দিয়ে তাদের অপরাধী হিসেবে দেখার কথা বলছেন।

এদিকে সোনাগাজীর ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারীদের নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্বেগ বেড়েছে বলে মনে হয়।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেত্রী জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু টানা সরকারে রয়েছে, সেজন্য সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে লোকজন ভিড় করছে দলে। এই নব্যদের অনেকেই নানান অপরাধের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে, এখানে হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে আমি বলবো। কারণ দেখা যাচ্ছে, অনেকে আওয়ামী লীগের বদনাম করার জন্য, অনেকে আছে চেহারাটা পাল্টিয়ে নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে বিভিন্ন কাজ করে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলছে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে যাচ্ছে, তারা অনেক সময় হাইব্রিডদের কারণে অবহেলিত হয়।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দল থেকে যারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তাদের নিয়ে অনুপ্রবেশকারি বা হাইব্রিড- এই শব্দগুলো দলটিতে বেশ আলোচিত হচ্ছে। দলের সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন সময় এনিয়ে জনসমক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অনেক জায়গায় নব্যদের সাথে পুরোনো নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে বলেও দলের নেতাদের অনেকে বলেছেন।

রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের নেত্রী পূর্ণিমা ভট্টাচার্য বলেন, পরিস্থিতির কারণে তৃণমুলে তাদের মাঝে অনেক সময় হতাশাও তৈরি করছে। অনুপ্রবেশকারি বা হাইব্রিড নামে যে কথাটা প্রচলিত হয়েছে বা তারা যে আসছে, এরা এসে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং অনেক ক্ষতি করছে। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে দল করি, তারা প্রতি পদে পদে এটা অনুভব করছি।

বছরখানেক আগে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে যুদ্ধাপরাধী কেউ বা জামায়াতে ইসলামীর কেউ যেনো তাদের দলে যোগ দিতে না পারে। এছাড়া অন্য দলগুলোর কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চাইলে তার অতীত যাচাই করে দেখার নির্দেশ ছিল দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এই নির্দেশ ছিল। কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদেরই অনেকে।

আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফও বলেন, আমরা দূর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি যে, বিভিন্ন সময় বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল থেকে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে ভিড়েছেন।

হানিফ আরও বলেন, বিভিন্ন দল থেকে যারা এসেছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর ইতিমধ্যে সারাদেশে এই তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে যে কোথায় কে কোন দল থেকে যোগদান করলো। সেটাকে যাচাই বাছাই করার জন্য একটি কমিটি করা হযেছে। সেই কমিটি কাজ করছে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও জানিয়েছেন, তালিকা যাচাই করে যাদের সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ফারাক পাওয়া যাবে, তাদের দল থেকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, দলের যারা তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের ব্যাপারেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শেয়ার করুন !
  • 1
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!