শামা ওবায়েদের কৈশোর প্রেম এবং ৩৩ ঘণ্টার সংসার!

0

অনলাইন ডেস্ক:

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু। বিভিন্ন কারণে আলোচিত ও সমালোচিত এবং টকশোতে উদ্ভট বক্তব্যের কারণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক চেনা মুখ।

সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে তার কয়েকটি ভিডিও। দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য রাজপথে এবং টকশোতে মুখে ফেনা তুলে ফেলা শামার একটি উদ্দাম ককটেল পার্টি এবং পরপুরুষের সাথে শয্যাদৃশ্যের একটি গোপন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে আর টিভিতে দেখা যাচ্ছে না। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং দুই ছেলে-মেয়ের মা হলেও পলাতক বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সাথে জড়িয়ে তাকে নিয়ে নানারকম কানাঘুষা শোনা যায়।

শামার পিতা কে এম ওবায়দুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ১৯৭৫ এর ট্র্যাজেডির পর তিনি খুনি মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলে তিনি তার সাথেও যোগ দেন, পরে মহাসচিবও হন।

আবার এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে বিএনপি ছেড়ে জনতা দল গঠন করেছিলেন। পরে আবার খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে যোগ দেন বিএনপিতে। ১৯৭৫ সালের জেলহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন কে এম ওবায়দুর রহমান।

পিতার রাজনৈতিক জীবনের মত টালমাটাল পারিবারিক আবহের মধ্যে বেড়ে ওঠেন কন্যা শামা ওবায়েদ। ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই এক ব্যবসায়ীর সাথে প্রেম করেন শামা। পিতা-মাতার কড়া শাসন এবং তাদের চোখ এড়িয়ে গোপনে প্রায়ই প্রেমিকের সাথে বিভিন্ন স্থানে দেখা করার মুখরোচক খবর সে সময় ছড়িয়ে পড়ে।

এসএসসি পাশ প্রেমিক মনিরুজ্জামান দুলুর সাথে শামার বয়সের বিস্তর ফারাক থাকলেও তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘ ৫ বছরের। মেয়ের উড়নচণ্ডী স্বভাবের কারণে কে এম ওবায়েদ এবং তার স্ত্রী দুজনেই আলাদা আলাদা পাত্র ঠিক করেন মেয়ের জন্য। কিন্তু মেয়ে সব উপেক্ষা করে ১৯৮৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দুলুর হাত ধরে পালান বাড়ি থেকে।

প্রেমিকের হাত ধরে পালানোর বিষয়টি সহ্য করতে পারেননি সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুর রহমান। তিনি তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পুলিশের সাহায্যে মেয়েকে জোরপূর্বক প্রেমিকের বাড়ি থেকে তুলে আনেন।

এ বিষয়ে তৎকালীন (১৯৮৯ সাল) সবুজ বিপ্লব পত্রিকায় কাভার স্টোরি হিসেবে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। পত্রিকার সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে-

বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী কে এম ওয়াবদুর রহমানের একমাত্র কন্যা শামা ওবায়েদের বিয়ে কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন। শামা ওবায়েদ পারিবারিক নিষেধ উপেক্ষা করে তার দীর্ঘদিনের প্রেমিক তরুণ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান দুলুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। মেয়ের এই বিয়ের জটিলতা নিয়ে ওবায়েদ পরিবারে এখন অশান্তির ঝড়ো হাওয়া বইছে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর শামা ওবায়েদ ওরফে রিংকু তার গুলশানের বাড়ি ছেড়ে প্রেমিকের পশ্চিম ধানমণ্ডির বাড়িতে উঠে আসেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শামা ওবায়েদ তার প্রেমিকের সঙ্গে চলে আসার খবর কে এম ওবায়েদের পরিবারে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে নাটকীয় ঘটনার অবতারণা হয়।

মেয়ের এই সিদ্ধান্ত ওবায়দুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। ফলে ওবায়েদ পরিবার নানা কৌশল অবলম্বন করে ৩৩ ঘণ্টার নাটকীয় মুহূর্তের বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

শামা-দুলু : পাঁচ বছরের প্রেম

কে এম ওবায়েদের একমাত্র কন্যা শামা ওবায়েদ ওরফে রিংকু- বদরুন্নেসা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাশ করেছেন। তার প্রেমিক মনিরুজ্জামান দুলু এসএসসি পাশ করে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। দেখতে সুদর্শন পুরুষ। তাকে দেখার পর অত্যাধুনিকা ও রাজনৈতিক পরিবারের কন্যা শামা ওবায়েদের দুর্বল হয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি।

শামাও দেখতে সুন্দরী ও চটপটে মেয়ে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে দুলুর সঙ্গে তার মন দেয়া-নেয়া চলছিল বলে জানা গেছে। শামার এক বান্ধবীর কাছ থেকে জানা গেছে, ওবায়েদ পরিবার তাদের একমাত্র কন্যাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিল। এমন সময়েই শামা নিজের পছন্দের পাত্র দুলুর সঙ্গে চলে আসে।

ওবায়েদ পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, মেয়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে ওবায়দুর রহমান ও তার স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল। ওবায়েদ ও তার স্ত্রী দুজন দুজায়গায় মেয়েল বিয়ে ঠিক করার বিষয় নিয়ে মতবিরোধে ভুগছিলেন।


ছবি: সে সময় পত্রিকায় ছাপা হওয়া সংবাদের অংশ

শামা টেলিফোনে মায়ের কাছে বিয়ের খবর জানালো

গত ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে শামা ওবায়েদ গুলশানে তার বাবার বাড়ি থেকে দুলুর পশ্চিম ধানমণ্ডির বাসায় চলে আসেন। এরপর আজিমপুর কাজী অফিসে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তাদের বিয়ে রেজিস্টার করানো হয়। বিয়ের পর বেলা ৪টায় শামা ওবায়েদ ছেলের বাড়ি থেকে টেলিফোনে তার মায়ের কাছে খবর পৌঁছান যে, তার প্রেমিক দুলুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গেছে এবং বর্তমানে স্বামীর বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

মেয়ের এই বিয়ের কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে কে এম ওবায়েদ ও তার স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ ছেলের পশ্চিম ধানমণ্ডির বাড়িতে চলে আসেন। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা মেয়েকে বুঝানোর পরও শামা ওবায়েদ তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যেতে রাজি হননি। তিনি তার স্বামী দুলুর সঙ্গেই থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। ফলে হতাশ হয়ে ওবায়েদ দম্পতি ফিরে যান এবং মেয়েকে উদ্ধারের জন্য অন্য কৌশল অবলম্বন করেন।

অতঃপর পুলিশি অ্যাকশন

কলেজ ছাত্রী শামা ওবায়েদ বাড়ি ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে চলে আসার পর সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়েদ কোনো মামলা দায়ের না করলেও পুলিশের সহায়তায় মেয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালান।

নিজের মেয়েকে আড়াই ঘণ্টা বুঝিয়েও ঘরে আনতে ব্যর্থ হন ওবায়েদ দম্পতি। পরবর্তীতে পুলিশের সহায়তায় ৩৩ ঘণ্টা পর শামা ওবায়েদকে জোরপূর্বক বাসায় ফিরিয়ে আনা হয়।

জানা যায়, এরপরই শামা ওবায়েদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বাইরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করার পরেও দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। পিতার মৃত্যুর পর (২০০৭) বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।

কথিত রয়েছে, বিএনপির অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে ডিঙিয়ে আনকোরা নতুন মুখ শামাকে সংসদ সদস্য পদে ২০০৮ সালে মনোনয়ন দেওয়া হয় তারেক রহমানের একক কর্তৃত্বের কারণে। যদিও সেই নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি তিনি। কিন্তু তারেক রহমানের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন।

বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেই আস্থার প্রতিদান দিয়ে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!