সময় এখন ডেস্ক:
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গুমের অতিরঞ্জিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ নিয়ে নিয়ে বহির্বিশ্বে আলোচনা চলছে। কয়েকটি বিশেষ সংস্থা কর্তৃক ভিত্তিহীন ও ম্যানিপুলেটেড প্রতিবেদন কৌশলে পাঠানো হয় বিশেষ কিছু জায়গায়। যার ফলে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা এবং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ১ বছর ধরে নিখোঁজ হওয়া ৮৬ ব্যক্তির একটি তালিকা পাঠিয়ে তাদের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। যার আলোকে কাজের ধারার ব্যাপারে প্রশ্নবিদ্ধ সংস্থা- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, গত এক দশকে বাংলাদেশে ৮৬টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখিত নিখোঁজ ব্যক্তিদের সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি।
বাংলাদেশে গত এক দশকে নিখোঁজ ৮৬ জনের কথা যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যখন একে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, ঠিক তখন খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী, ৬ লক্ষ মানুষ ২০২১ সালেই নিখোঁজ হয়েছে।
এই প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ৪ হাজার ৪০০ বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর, যাদের কোনো পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল মিসিং অ্যান্ড আনআইডেন্টিফায়েড পারসনস (এনএএম ইউএস ডাটাবেজ) থেকে এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অর্থায়নে। এই ডাটাবেজ বা তথ্যভাণ্ডার থেকে দেখা যায় যে ১০টি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় ২ হাজার ১৩৩ জন, ফ্লোরিডায় ১ হাজার ২৫২ জন, টেক্সাসে ১ হাজার ২৪৬ জন, অ্যারিজোনায় ৯১৫ জন, ওয়াশিংটনে ৬৪৩ জন, নিউইয়র্কে ৬০৬ জন, মিশিগানে ৫৫৬ জন, ওরিগানোতে ৪৩২ জন, পেনসিলভ্যানিয়াতে ৪০১ জন এবং টেনেসিতে ৩৬১ জন।
এই তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো গোপন বিষয় নয়, প্রকাশ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তি সম্পর্কে উদ্ধার অভিযানের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।
তবুও গত এক দশকে ১৭ হাজার নিখোঁজ ব্যক্তি এবং ১৩ হাজার বেওয়ারিশ লাশ বা মরদেহ সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
শুধু মার্কিন মুল্লুকে নয়, বিভিন্ন দেশেই এমন নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিখোঁজের এমন ঘটনা লাখ লাখ। এই ঘটনাগুলো কেন ঘটে, তার একাধিক কারণ রয়েছে। অদ্ভূত ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের এমন ঘটনাকে গুম হিসেবে দেখানো হচ্ছে আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে শুধুই নিখোঁজ! নিখোঁজ ব্যক্তির হদিস পাওয়ার ক্ষেত্রেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য তেমন কিছু নেই।
তাহলে প্রশ্ন হলো, একজন ব্যক্তি নিখোঁজ হলেই কি ধরে নিতে হবে যে তিনি গুম হয়েছেন? বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, অনেক মামলার আসামী গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন করেন। অনেক সময় দেখা যায়, দেনার দায়ে ব্যক্তি আত্মগোপন করেন। কেউ কেউ অন্যদেশে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
আবার অনেকে বিভিন্ন কারণে নিখোঁজ হন। অপঘাতে মৃত্যু, আত্মহত্যার সংখ্যাও কম নয়। বাংলাদেশের যে নিখোঁজের তালিকা, সেই ব্যক্তিরা আসলেই গুম হয়েছেন নাকি তারা নিজেরাই আত্মগোপন করে আছেন, এটি নিঃসন্দেহে তদন্ত করার বিষয়। তদন্ত ছাড়াই তাদেরকে নিখোঁজ বলাটা কতটুকু সঠিক, সে প্রশ্ন আছে।
কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে হারিছ চৌধুরীর ঘটনাটি সকলের সামনে এসেছে। হারিছ চৌধুরীর পরিবারের দাবি, তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর বাংলাদেশেই আত্মগোপন করে ছিলেন। তার খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতো না। এখন একইভাবে ইলিয়াস আলী বা অন্যরাও যে আত্মগোপন করে নেই, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
কাজেই নিখোঁজ হলেই যে সেটি গুম, এই তথ্যটি রাজনৈতিকভাবে মুখরোচক হতে পারে কিন্তু প্রকৃত তদন্ত বা সত্য উদঘাটনের জন্য এটি ফ্যাক্ট হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান দেখতে ক্লিক করুন।