সময় এখন ডেস্ক:
পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম স্বৈরশাসক যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দীর্ঘদিন যাবত দেশ পরিচালনা করেন, তাদের তালিকায় বাংলাদেশের তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের নাম রয়েছে।
সামরিক আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই মাত্র ৫ মিনিটের বিচারে ইবরাহিম খান নামে একজন সৈনিকের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো জিয়াউর রহমানের শাসনামলে।
৪৫ বছর আগে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে এই সৈনিকের মৃত্যুর তারিখ জানতে পারলেও কবর দেওয়া হয়েছে কোথায় তা এখনও জানে না পরিবার। এই অপরাধের দায়ে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর সাজা দাবি করেছেন তার ছেলে আতাউর রহমান খান।
জানা যায়, ঘটনার সময় মায়ের গর্ভে ৮ মাস বয়সের ছিলেন আতাউর। এখন প্রায় মধ্যবয়সী। বুঝতে শেখার পর থেকে বাবার নিরুদ্দেশের খবর জানার চেষ্টা করেছেন তিনি। কোথায় তার কবর সন্ধান করেছেন। ৪৫ বছর ধরে ঘুরেছেন সরকারি দপ্তরে দপ্তরে। অবশেষে তিনি জেনেছেন রায় কার্যকর হওয়ার দিনক্ষণ।
৮ বছর বয়স থেকে নানীর কাছে বেড়ে ওঠা আতাউরের। বাবার নাম ইবরাহিম খান আর সেনাবাহিনীর ব্যাজ নম্বর এম.টি. ৬৫৮৭২১২। শুধু এই তথ্য নিয়ে দীর্ঘ এবং অসম্ভব এক অনুসন্ধানী যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি।
আতাউর বলেন, আমি শুধু জানতাম আমার বাবা নিরুদ্দেশ হয়েছেন জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন আমলে। কেন করা হয়েছে জানি না। জিয়ার শাসনামলেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। আমার বাবার কী অপরাধ ছিলো, সরকারের কাছে এই তথ্য জানতে চাই।
১৯৭৭ সালের ২৯ অক্টোবরের পর থেকে আমার বাবার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেদিনই তাকে হত্যা করা হয়েছে, বলেন আতাউর।
হাসানুল হক ইনুর সংসদে দেওয়া একটি বক্তব্যের সূত্রে সাংবাদিক ও গবেষক জায়েদুল আহসানের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ১৯৭৭ সালের ২৯ অক্টোবর ৫ মিনিটের বিচারে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে রায় কার্যকর করা হয় আতাউরের বাবার।
ওই সময় জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে কথিত ক্যু এর অভিযোগে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনীর যে হাজার হাজার কর্মকর্তা ও সৈনিককে রাতারাতি গুম করা হয়েছিলো তার মধ্যে ৭২ জন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের।
আতাউর বলেন, আমার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ সৈনিক। আমার বাবার তো এদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিলো না। আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অকুল আবেদন, আমার বাবাকে কেন বিনা অপরাধে এমন নির্মম সাজা দেওয়া হলো এর কারণ আমি জানতে চাই। আমি এর বিচার চাই।
আতাউরের প্রশ্ন, ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ইবরাহিম দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করে কীভাবে দেশদ্রোহী হন। সামরিক বাহিনীর ভেতরে ১৯৭৭ সালে সংগঠিত হাজার হাজার সদস্যকে গুমের বিচার চান আতাউর। চান বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে স্বীকৃতিও।