সময় এখন ডেস্ক:
‘সোহেল তাজ আসছেন আপনার দরজায়, আপনি রেডি তো’- ফেসবুকে এমন ভিডিও দিয়ে সবাইকে কৌতূহলী করে তোলা সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সব জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার তার এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট হল, এটি তার একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ‘প্রোমো’। পরিবেশ দূষণ, যানজট, নারী নি-র্যাতন, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির মতো সামাজিক ব্যাধিকে ‘লাল কার্ড’ দেখাতে ওই অনুষ্ঠান নিয়ে আসছেন তিনি।
আগামী সেপ্টেম্বর আরটিভিতে শুরু হচ্ছে এই টেলিভিশন শো ‘হটলাইন কমান্ডো’। এর উপস্থাপনা করবেন সোহেল তাজ। তার মিডিয়া প্রডাকশন প্রতিষ্ঠান ফিটনেশন মিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত হচ্ছে এই টিভি শো।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।
কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর রাজনীতি থেকেও দূরে সরে যান তিনি। পরে আসনে সংসদ সদস্য হন তারই বোন সিমিন হোসেন রিমি।
কয়েক বছর বাদে সম্প্রতি তিনি হঠাৎ নিজের ফেসবুক পাতায় ওই ভিডিও তোলার পর তাকে নিয়ে সব মহলে শুরু হয় আলোচনা। তিনি রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হচ্ছেন বলেও গুঞ্জন ছড়ায়।
ওই ভিডিও শেয়ার করে তিনি লেখেন, “গ্রাম থেকে শহর, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, ইউরোপ থেকে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়া, পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকেন না কেন, আপনার দরজায় টোকা পড়তে পারে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন সব খোলসা করে সোহেল তাজ বলেন, তার ওই তথ্যভিত্তিক ও বিনোদনমূলক টিভি অনুষ্ঠানে সামাজিক সমস্যার সমাধান বাতলে দেওয়া হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়া প্যানেল বলবেন সমস্যা সমাধানের উপায়।
তিনি জানান, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের মৃ-ত্যুর পর দেশ ও সমাজের জন্য নিজেকে নিবেদনের পরিকল্পনা করেন তিনি। দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা মায়ের কথা স্মরণ করে সোহেল তাজ বলেন, (তিনি বলেছিলেন) যাই করিস না কেন, মানুষের জন্য কিছু করিস।
মায়ের ওই কথাই এই অনুষ্ঠানের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু হ-ত্যাকাণ্ডের পর কারাগারে হ-ত্যাকাণ্ডের শিকার তাজউদ্দীন আহমদের ছোট সন্তান সোহেল তাজ শৈশবেও বাবাকে খুব একটা পাননি। তাই নিজের দুই সন্তান যেন বাবার অভাব কখনও অনুভব না করে, সেজন্য তাদের পাশে থাকাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দিলেও তাজউদ্দীন পরিবারের সন্তান হিসেবে দেশ-বিদেশে যেখানে গেছেন, গণমানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত হয়েছেন সোহেল তাজ। সেই ভালোবাসার ‘প্রতিদান’ দিতে এবার সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার পরিকল্পনা তার।
সোহেল তাজ বলেন, বছরের পর বছর আমি ভেবেছি। রাজনীতি করতে যেয়ে মানুষের জন্ম-মৃ-ত্যু, মানুষের কান্না-দুঃখ আমাকে কাছ থেকে দেখতে হয়েছে। আমি মেধা ও চিন্তা দিয়ে সমাজ ও মানুষকে সহায়তা করতে পারব। মেয়েদের জানাতে তারা বলল, মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পার, তাহলে কর।
সংবাদ সম্মেলনে ‘পাওয়ার পয়েন্ট’ উপস্থাপনায় তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, শিশুদের খেলার মাঠের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছেন, তখন সামাজিক ব্যাধির সমাধান জরুরি বলে মনে করেন সোহেল তাজ।
তিনি বলেন, আজকে সমাজের এই সমস্যাগুলো যদি আপনি সমাধান না করেন, তাহলে কী করে সোনার বাংলা আপনি গড়বেন? সোনার বাংলা কেউ গড়ে দিতে পারে না। নিজের উদ্যোগ থাকতে হবে…. যে যে অবস্থানে আছে।
আমার টাকা-পয়সা নাই, ধন-দৌলত নাই, কিন্তু মানুষের ভালাবাসা, আমার পরিচিতি আছে। মানুষের কল্যাণে আমি সেটাকে ব্যবহার করব। সমাজের মানুষের প্রতি আমি আমার ঋণ পরিশোধ করব। সবাইকে নিয়ে সামাজিক ব্যাধিকে লাল কার্ড দেখাতে হবে- জানালেন সোহেল।
সামাজিক সঙ্কট নিরসনে কাজ করতে নামা সোহেল তাজ বাস্তবতা বিবেচনায় বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষকে তাদের মতো করেই বোঝাতে হবে, জানাতে হবে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় ওই লেভেলে গিয়েই আসলে মানুষকে বোঝাতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, যে কোনো দেশ যখন উন্নতির পথে যায়, তখন বাধা দুর্নীতি। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আমি দুর্নীতির বিরু-দ্ধে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করে যাব।
আবারও আওয়ামী লীগে সক্রিয় হবেন কি না- এই প্রশ্নে সোহেল তাজ বলেন, রাজনীতিতে আমি নাই। কিন্তু রাজনীতির পরিবারের সন্তান। রাজনীতি এটা আমাদের রক্তে, দেশ আমাদের রক্তে। এটার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে সক্রিয় রাজনীতি করার স্কোপ নেই। এই প্রজেক্ট আমার সমস্ত টাইম নিয়ে নেবে।
‘হটলাইন কমান্ডো’ টিভি শোটির পৃষ্ঠপোষকতা করছে সুজুকি মোটরবাইকস, মিৎসুবিশি মোটরবাইকস।
অনুষ্ঠানের শেষে র্যানকন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা রম্য রউফ চৌধুরী, র্যানকন মোটরবাইকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাওন হাকিম, মিৎসুবিশির ডিভিশনাল ডিরেক্টর শোয়েব আহমেদ, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমানের সঙ্গে এই অনুষ্ঠান সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সোহেল তাজ।