লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
হরিতকী গাছের ফুল দেখতে খুবই সুন্দর, আর ফল এক মহৌষধ। গ্রীষ্ম ও বর্ষার বৃষ্টিভেজা বনে জঙ্গলের গাছে গাছে হরিতকীর ফুল শোভা পায়।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এই মহামূল্যবান হরিতকীর ফুল চেনে না। চেনে না হরিতকী, জানে না এর গুণাগুণ। দেশের ঔ-ষধি ফলসমূহের মধ্যে হরিতকী হচ্ছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারত এর আদি জন্মভূমি।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মতে, হরিতকী হচ্ছে সর্বরোগের ও-ষুধ। সকালে হরিতকী ভেজানো পানি খেলে অনেক রোগ থেকে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। হরিতকী, বহেরা ও আমলকীর একত্র মিশ্রনকে বলা হয় ‘ত্রিফলা’।
গ্রামের মানুষ যুগ যুগের পরিচিত এই ত্রিফলার পানি পান করে নিজেদের রোগ-বালাই থেকে মুক্ত রাখতেন।
প্রচলিত নাম: হরিতকী
আয়ুবের্দিক নাম: হরিতকী
সংস্কৃত নাম: অভয়া
বৈজ্ঞানিক নাম: terminalia chebula
পরিবার: Combretaceae
পরিচিতি: হরিতকী বহুল পরিচিত পাতা ঝরা বৃক্ষ। গাছ ৭০ থেকে ৮০ ফুট উঁচু হয়। পাতা ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা আকারে অনেকটা জামরুলের পাতার মত ছোট। ফাগুন ও চৈত্র মাসে ঝরে যায় এবং অল্প দিনের মধ্যে নতুন পাতা হয়।
ফুল সাদা বা পীত বর্ণের উগ্র গন্ধ বিশিষ্ট। ফল ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি লম্বা ৫টি উন্নত শিরা বিশিষ্ট। ফল আপনা আপনি ঝরে পড়ে। ফল একটি মাত্র বীজ বিশিষ্ট বিভিন্ন আকৃতির হয়। গ্রীষ্মকালে ফুল ও শীত কালে ফল হয়।
প্রাপ্তিস্থান: হরিতকী বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চলে জন্মে।
ব্যবহার্য অংশ: ফলের খোসা বা ফল ত্বক। ফল হলুদ বা কালো বর্ণের হয়। ইহা কষ্টি স্বাদমুক্ত ও মিষ্টি গন্ধযুক্ত। অধিক সুস্থ থাকার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ১০ গ্রাম হরিতকী ফল খাওয়া দরকার।
তবে কখনোই মাত্রার বেশি খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত মাত্রায় হরিতকী সেবনে অন্ত্রনালীর ক্ষ-তি হয়। ৭ ধরনের হরিতকীর মধ্যে ‘বিজয়া’ জাতটি বেশি গুণ সমৃদ্ধ।
বিবিধ ব্যবহার:
♣ হরিতকী অ্যামাইনো এসিড, ফ্রুক্টোজ, ট্যানিন, অ্যানথ্রাইকুইনোন, বিটা সাইটোস্টেবল সমৃদ্ধ।
♣ এটি দেহের রক্ত পরিষ্কারক।
♣ যকৃত, পাকস্থলী ও মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করে।
♣ যৌ-ন শক্তি বৃদ্ধি করে।
♣ হাঁপানি রোগ দূর করতে কার্যকরী।
♣ পুরাতন ক্ষ-ত নিরাময় ও চর্মরোগের উপকারী।
♣ ব্রণ নাশক।
♣ চোখের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চক্ষু রোগ নির্মূলে কার্যকর।
♣ গ-র্ভপাত রোধ করতে সাহায্য করে।
♣ পিত্তশূল দূর করার কাজে বহুল ব্যবহৃত।
♣ রক্তচাপ ও অন্ত্রের খিঁচুনি কমায় এবং প্রতিরোধের কাজ করে।
♣ হৃদপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। হার্টবার্ণে দ্রুত কাজ করে।
♣ স্নায়ুবিক দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অবসাদ নিরাময় করে।
♣ দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
♣ এটি পরজীবীনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
♣ বিভিন্ন ধরনের এলার্জি দূর করে।
♣ চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
♣ বিভিন্ন ধরনের বাত রোগ, কফ, কাশিসহ গলা ও দাঁতের ব্যথায় বিশেষ উপকার করে।
♣ ত্রিফলাতে হরিতকীর স্থান সবার ওপরে।
♣ এর ছাল, শিকড় ও পাতা অনেক ধরনের ও-ষুধি কাজে ব্যবহৃত হয়।
♣ প্রচুর পরিমানে ট্যানিন আছে বিধায় লেখার কালি, শ্যাম্পু ও চুলের কলপ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
♣ হরিতকী গাছের কাঠ আসবাবপত্র কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়।
ত্রিফলার উল্লেখ্যযোগ্য উপদান হচ্ছে হরিতকী। দেশীয় চিকিৎসায় বহুল পরিমানে হরিতকী ব্যবহৃত হয়। এখানে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ঔ-ষুধ যেমন মোরব্বা- য়ে- হালিলা, জাওয়ারিশ শাহী, হরিতকী খন্ড প্রভৃৃতি ঔ-ষুধ উল্লেখযোগ্য।
পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করা হলে হরিতকী ও-ষুধ শিল্পে আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে এবং হরিতকী রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে।