অনলাইন ডেস্ক:
পাকিস্থানের রাষ্ট্রদূত মাসুদ খানকে প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত পাকিস্থানি দূতাবাসের দায়িত্বশীল এই পদটির জন্য মনোনীত হন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মাসুদ খানের নিয়োগকে ওয়াশিংটন ডিসির পক্ষ থেকে ‘ব্যান’ করা হয়েছে। তাকে কার্যত দায়িত্ব নেওয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে বলে সিএনএন-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, পেনসিলভেনিয়ার রিপাবলিকান প্রতিনিধি এবং কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি স্বাক্ষরিত এ বিষয়ে একটি চিঠি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
মার্কিন এই আইনপ্রণেতা চিঠিতে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে মাসুদ খানের নিয়োগ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি (জো বাইডেন) তাকে (মাসুদ খানকে) একজন জিহাদি এবং প্রকৃতপক্ষে একজন জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তি বলে অভিহিত করেছেন।
জো বাইডেন আরও বলেছেন, মাসুদ খান মার্কিন স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার জন্য এবং ভারতের মতো মার্কিন মিত্রদের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করার জন্য কাজ করছেন।
স্কট পেরির চিঠিটি উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়, ইমরান খানের মনোনীত ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে একজন জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসাবে এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কাজ করেছে, সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় মিত্রদের নিরাপত্তাকে শুধুমাত্র বিচারের অভাব হিসাবে বর্ণনা করেছে।
আমি আপনাকে মাসুদ খানের যে কোনো কূটনৈতিক প্রত্যয়নপত্র প্রত্যাখ্যান করার জন্য এবং এই জিহাদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্থানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেওয়ানোর জন্য পাকিস্থান সরকারের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করার জন্য অনুরোধ করছি।
রিপোর্টে বলা হয়, সম্ভবত এই কারণেই মাসুদ খানকে কূটনীতিক হিসেবে বাতিলের পিছনে প্রধান কারণ।
মাসুদ খানের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। ৭০ বছর বয়সী এবং জাতিগত পশতুন পাকিস্থান অধিকৃত কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করেন মাসুদ খান। তিনি ১৯৮০ সালে পাকিস্থানের ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘে পাকিস্থানের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।
এছাড়াও চীনে তাদের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। মাসুদ খান ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাকিস্থান অধিকৃত কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাই তিনি একজন পেশাগত কূটনীতিক। কিন্তু তিনি একইসাথে একজন বিপজ্জনক মৌলবাদীও। বিশ্বজুড়ে উগ্র ইসলামিস্ট জঙ্গিদের সাথে তার কাজ করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
২০১৭ সালের জুনে যখন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট হিজবুল মুজাহিদিনকে একটি জঙ্গি সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল, এই তথাকথিত কূটনীতিক মাসুদ খান হিজবুল জঙ্গিদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। এবং মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি সৈয়দ সালাউদ্দিনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এছাড়া, ২০২১ সালের জুলাই মাসে তিনি আরেক দুর্ধর্ষ জঙ্গি বোরহান বানির প্রশংসা করে একটি বিবৃতি দেন, যিনি ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন। মাসুদ খান বানিকে ‘শহিদ’ বলে অভিহিত করেন। মাসুদ বলেছিলেন বানি ছিলেন সারা বিশ্বে ‘মুক্তিকামীদের’ রোল মডেল।
কাশ্মীরের মুক্তি এবং ভারতের পরাজয় নিয়ে উচ্চকিত কূটনীতিক মাসুদ। এই কূটনীতিক পাকিস্থানি জঙ্গি সংগঠন জামায়াতে ইসলামির একজন সোচ্চার সমর্থক, যারা পাকিস্থানকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য সহায়তা করেছিল। বাংলাদেশে এই সংগঠনের শাখাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
কাশ্মীরে সক্রিয়তার জন্য মাসুদ খান জঙ্গি গোষ্ঠী জামায়াতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শুধু এসবই নয়, মাসুদ আইনত অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি আফিয়া সিদ্দিকীর একজন সমর্থক, যিনি লেডি আল-কায়েদা নামে পরিচিত।
মাসুদ প্রকাশ্যেই বেশ কিছু অনুষ্ঠানে আফিয়ার মুক্তির পক্ষে কথা বলেছেন। মাসুদ খানের নাম তুরস্কের উগ্রপন্থী গোষ্ঠী আইএইচএইচ-এর সাথেও যুক্ত রয়েছে। আইএইচএইচ মূলত মানবিক ত্রাণ ফাউন্ডেশন ও দাতব্য গোষ্ঠীর ছদ্মবেশে থাকা চরমপন্থী সংগঠন। এটি প্রায়ই আল-কায়েদাকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
মাসুদ খান মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে থাকা ইসলামপন্থী সংগঠন- ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম-এর সাথেও সম্পৃক্ত।
মাসুদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুসলিম নেতৃবৃন্দকে নিজ দেশের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদানের জন্য। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ভারতবিরোধী চরমপন্থী গোষ্ঠীর পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন মাসুদ।
প্রায় প্রতিটি জঙ্গি সংগঠনের সাথে, প্রতিটি উগ্রবাদী চরমপন্থী গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রয়েছে মাসুদ খানের। পাকিস্থান তাকে মূলত এসকল অপতৎপরতার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে বলেও রিপোর্টটিতে বলা হয়।