স্বাস্থ্য বার্তা ডেস্ক:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতাল পরিণত হচ্ছে। যে মহাপ্রকল্পটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্যকরী বিনিয়োগের একটি মেগাপ্রকল্প। যার ফলে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের হিড়িক অনেকাংশে লাঘব হবে। সাশ্রয় হবে অকল্পনীয় পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের অতি সাধারণ মানুষ পাবে সর্বোচ্চমানের চিকিৎসা সেবা।
সরকারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পরিস্কার, সর্বোচ্চসংখ্যক রোগিকে বেডে রেখে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা, রোগিদের বিদেশমুখীতা ঠেকানো এবং সর্বোপরি মেডিকেল ও নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ঢেলে সাজানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বর্তমান জমিতেই ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থান অক্ষুণ্ন রেখে আনুমানিক ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। নতুনভাবে তৈরি এ হাসপাতালকে ২০২৭ সালের মধ্যে প্রাথমিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০৮.৫ বিঘা জমিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, লাইব্রেরি, সেমিনার ও ডরমেটরির জন্য ২৭টি ভবন নির্মাণ করা হবে।
এর মধ্যে ১৭ তলা বিশিষ্ট ৬টি হাসপাতাল ভবন থাকবে। আর আবাসিক ভবনসহ অপর ভবনগুলো হবে ২০ তলা বিশিষ্ট। হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, সেমিনার, ডাক্তার লাউঞ্জ প্রতিটি ভবনই একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এছাড়া হাসপাতালে দুটি জরুরি বিভাগ এবং দুটি আউটডোর থাকবে।
নকশা অনুযায়ী হাসপাতালের উপরিভাগে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো যান চলাচল করবেনা। সব গাড়ি থাকবে বেজমেন্টে। আর এজন্য ৩ তলা বিশিষ্ট ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে একসাথে ৫ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। সেইসঙ্গে থাকবে অটোমেটেড কার পার্কিংয়ের সুবিধা।
এছাড়া ট্রাফিক অ্যানালাইসিস করে বিভিন্ন দিক থেকে হাসপাতালে প্রবেশের ব্যবস্থাও করা হবে। যার পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন্দ্রীয়ভাবে। সংযুক্ত থাকবে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও।
বর্তমানে ২ হাজার ৬০০ বেডের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রোগি ভর্তি থাকে। একসাথে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫০০ রোগিও ভর্তি ছিল এ হাসপাতালে। অতিরিক্ত রোগিদেরকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়ির পাশে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয় অনেকসময়।
হাসপাতালটিতে ইটিপি, ডব্লিউটিপি, এসটিপি-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা একটি আধুনিক সয়ংক্রিয় হাসপাতালে রাখা প্রয়োজন। হাসপাতালের আইটি সিস্টেম সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করা হবে।
ঢাকা মেডিকেলের আধুনিকায়নের পর সক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। হাসপাতালের মোট বেডের সংখ্যা হবে ৫০০০। আর এর মাধ্যমে বেডের ধারণক্ষমতার হিসাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ হাসপাতাল হবে ঢামেক।
বর্তমানে বেডের সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বের সবথেকে বড় হাসপাতালগুলো-
১. First Affiliated Hospital of Zhengzhou University Henan China, বেড সংখ্যা- ৭০০০। ২. West China Medical Center Chengdu China, বেড সংখ্যা- ৪৩০০। ৩. National Center for Mental Health Mandaluyong Philippines, বেড সংখ্যা- ৪২০০।
এছাড়া শ্রীলঙ্কায় রয়েছে ৩৪০৪ বেডের হাসতপাল। ভারতের বৃহৎ হাসপাতাল Government Medical College, Kozhikode Kozhikode India-এ বেড সংখ্যা ৩০২৫।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বর্তমান ২৬০০ বেড হতে ৫০০০ বেডে উন্নিত হলে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম হাসপাতালের তালিকায় স্থান করে নেবে।
তবে শুধু ঢাকা মেডিকেল নয়। BSMMU-তে বর্তমান বেড সংখ্যা ১৯০০। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১০০০ বেডের একটি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে এটিও সক্ষমতার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম ১৫টি হাসপাতালের তালিকায় স্থান করে নেবে।
সরকারি হাসপাতালের সুবিধার সরাসরি উপকারভোগী হলো দেশের হতদরিদ্র অসহায় মানুষ। বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসা বাণিজ্য এবং অ-পেশাদার লোকজনের খপ্পরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে বহু পরিবার।
সেইসাথে দেশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার মেডিকেল কন্সাল্টেন্সি ফার্ম, যারা ভারতের হাসপাতালগুলোর এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরির মাধ্যমে সাধারণ লোকজনকে ভারতে চিকিৎসা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে উপার্জন করছে বড় অঙ্কের কমিশন।
আর এভাবে প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ অন্য দেশে চলে যায় শুধুমাত্র একটু ভালো চিকিৎসার নামে। এতে ভারত সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। যার সত্যতা মিলেছে করোনাকালে। সীমান্ত বন্ধের ফলে বাংলাদেশ থেকে রোগিদের যাতায়াত কমে যাওয়ায় কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের হাসপাতালগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান এবং বিভিন্ন সুবিধা বাড়লে চিকিৎসা বাণিজ্য অনেকটাই ধসে পড়বে। সাধারণ মানুষও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। প্রতিবছর সামাজিক ও আর্থিকভাবে অনেক মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার শুধুমাত্র জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়।
দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই মেগা প্রকল্পের সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশবাসীর জীবনমানের ওপর। সেই বিবেচনায় এই মেগাপ্রকল্পটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রভাব বিস্তারকারী প্রকল্পের একটি বলে ইতমধ্যে বিশিষ্টজনরা বলছেন। তাদের মতে, এর প্রভাব হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, সামাজিক ও আর্থিকভাবে দেশের আপামর মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।