আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার নিকটবর্তী শহর আসাগি কাভুদরের বাসিন্দা ট্রাকচালক বাহাতিন গুরসি। ট্রাকটিই তার একমাত্র আয়ের উৎস। এই ট্রাকের মাধ্যমেই তিনি তার শহর থেকে বড় শহরগুলোতে মালামাল পরিবহন করেন। গত রমজানের শেষে ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়ির আঙিনায় ট্রাকটি পার্ক করে রেখেছিলেন।
ঈদ শেষে যখন মাল পরিবহণের জন্য ট্রাকটি নিয়ে বের হবেন ঠিক তখনই তার নজর যায় ট্রাকের ইঞ্জিন কেবিনের পেছনে। তিনি দেখতে পান, সেখানে একটি পাখির বাসা এবং তাতে কয়েকটি ডিমও রয়েছে। তবে মা পাখিটি সেখানে নেই।
তিনি ভাবলেন, ট্রাক স্টার্ট দিলে তো গাড়ির ঝাঁকুনিতে ডিমগুলো ভেঙে যাবে। পরে মা পাখিটা বাসা-ডিম না পেয়ে এদিক সেদিক খুঁজে বেড়াবে। এসব নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান বাহাতিন।
৪২ বছর বয়সী বাহাতিন ট্রাক নিয়ে বেরও হতে পারছিলেন না, আবার আয়ের একটা উৎসের জন্য বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন, ডিম ফুটে বাচ্চা বের না হওয়া পর্যন্ত তিনি ট্রাকটি স্টার্স্ট করবেন না। আর এ সময়ে বাড়ির শিশুরাও যেন পাখিটিকে কোনো রকম ডিস্টার্ব না দেয়, সে বিষয়ে নজর রাখার সিদ্ধান্ত নেন বাহাতিন।
এভাবে কেটে যায় ৪৫ দিন। সম্প্রতি পাখিটি ৩টি বাচ্চাসহ উড়ে যাওয়ার পর ট্রাকটি স্টার্ট দেন বাহাতিন। এই দেড় মাসে ট্রাক ভাড়া নিতে এসে ফিরেও গেছেন অনেকে। নিশ্চিত আয়ের সুযোগগুলো তিনি গ্রহণ করেননি।
ঘটনাটি জানাজানি হবার পর দেশজুড়ে প্রশংসায় ভাসতে থাকেন বাহাতিন। স্থানীয় সময় গত ১৬ জুলাই, তুরস্কের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি সাবাহ’ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বাহাতিন বলেন, গতকাল (১৫ জুলাই) পাখিটা তার বাচ্চাসহ উড়ে গেছে। আমি দেড় মাস পর প্রথম বারের মতো ট্রাক স্টার্ট দিয়েছি। আমি খুব খুশি, এখন থেকে আমি আবার আয় করতে পারব।
বাহাতিন জানান, গত দেড় মাস তিনি কেবল বাগানে কাজ করেছেন ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।
এদিকে বাহাতিনের ছোট্ট মেয়ে আয়সিমা পাখিগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, পাখিগুলোকে ধন্যবাদ। আমি খুবই খুশি, ওরা বাসা না বানালে আমি ৪৫ দিনের জন্য বাবাকে কাছে পেতাম না। আমি বাবাকে খুব ভালোবাসি।
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় বিঙ্গল প্রদেশের বিঙ্গল-ইরজুরাম মহাসড়কের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাকে বাসা বাঁধে এক জোড়া পাখি। ঘটনায় ডিম ও অনাগত পাখির বাচ্চা বাঁচাতে ট্রাকটির সার্ভিস অফ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তারা ঘোষণা দিয়েছে, যতদিন না ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে এবং পাখিগুলো বাসা ছেড়ে না যাবে ততদিন ট্রাকটিকে আর চালানো হবে না। ট্রাক ওই জায়গাতেই রাখা হবে যাতে পাখির বাসা ও ডিম নিরাপদে থাকতে পারে। শুধু তাই নয় নির্মাণ শ্রমিকরা পাখির বাসাটির দিকে লক্ষ্য রাখছেন যাতে পাখিদের কোনো ক্ষতি না হয়।
প্রসঙ্গত, তুরস্ক বন, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সম্প্রতি দেশটিতে গাছ লাগানোর জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।