বিশ্বকে চমকে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিপিং বিজনেস!

0

অর্থনীতি ডেস্ক:

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নিজদলীয় সাংসদের মালিকানাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য অবারিত সুযোগ করে দিতে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শিপিং কর্পোরেশনকে (বিএসসি) তিলে তিলে ধ্বংস করে দেওয়া হয় বিএনপি-জামায়াত আমলে।

সে সময় বিএসসি’র অধীনে থাকা জাহাজগুলোকে একের পর এক অবসরে পাঠানো হয়, বেচে দেওয়া হয় লসের অজুহাতে। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বিএসসি’র দীর্ঘ গৌরবময় পথচলা থামিয়ে দেওয়া হয় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে।

বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে (যার ৯০% সমুদ্রপথে)। তবে শুধুমাত্র জাহাজ ভাড়া দিতেই বাংলাদেশকে খরচ করতে হয় ৩০,০০০ কোটি টাকার বেশি!

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিএসসি’র রুগ্ন দশার সুযোগে তরতর করে এগিয়ে যায় বেসরকারি সেক্টর। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কারণে সামগ্রিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।

এদিকে জাহাজের সংখ্যা যখন কমতে কমতে ১৫-এর নিচে চলে গিয়েছিল। তখন দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সরকার দেশিয় বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও সমানভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া শুরু করে।

একটি রাষ্ট্রের শিল্প-বাণিজ্য তথা সমগ্র অর্থনীতি নির্ভর করে আমদানি-রপ্তানির যথাযথ ব্যবস্থাপনার ওপর। আমদানি-রপ্তানি যত সহজ হবে, খরচ এবং সময় যত কম লাগবে, তার ওপর নির্ভর করে বাণিজ্যের লাভ-ক্ষতি।

তাই শুধুমাত্র সরকারি সংস্থা দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে বলে বেসরকারি সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসে। আর সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।

মাত্র কয়েক বছরেই সরকারি-বেসরকারি বহরে নতুন নতুন জাহাজ যুক্ত হতে থাকে। বর্তমানে দেশে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮০টিতে। শুধুমাত্র বিগত ৪ বছরেই যুক্ত হয়েছে ৫৬টি জাহাজ! দেশিয় শিপিং কোম্পানিগুলো ভাড়া বাবদ আয় করছে ৩ হাজার ১১০ কোটি টাকা!

এবার আসা যাক ভিন্ন প্রসঙ্গে।

বর্তমানে বিশ্বে জাহাজের মালিকানার বিবেচনায় বাংলাদেশ খুব দ্রুত উপরে উঠে এসেছে। র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৯ তম। যেখানে ভারত, পাকিস্থান ও শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ১৬ তম, ৮৭ তম ও ৮৮ তম।

আরেকটি ছোট উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশের মোট ৮০টি জাহাজের মধ্যে মাত্র ৬টি হচ্ছে কন্টেইনারবাহী জাহাজ। আর এই ৬টি জাহাজের মালিক বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এইচআর লাইনস।

কন্টেইনার পরিবহনের সিংহভাগ বাজার মার্স্কলাইনের দখলে হলেও গৌরবজনক ব্যাপার হলো, বিশ্বের কন্টেইনার ভেসেল কোম্পানির তালিকায় বাংলাদেশি পতাকাবাহী এইচআর লাইনসের অবস্থান ৭১ তম।

শীর্ষ ১০০ কোম্পানির এই তালিকার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার শুধুমাত্র আর একটি কোম্পানি আছে। সেটি হলো ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান- শিপিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। তবে তাদের অবস্থানও বাংলাদেশের নিচে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ওই তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে আর কেউ নেই।

এইচআর লাইনসের বর্তমানে ৬টি জাহাজে ৯,০০০ কন্টেইনার (২০ ফিট) পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে তারা মাসে ১৭,০০০ কন্টেইনার পরিবহন করতে সক্ষম। খুব শীঘ্রই কোম্পানিটির বহরে আরও ১৭,৪০০ কন্টেইনার সক্ষমতার ৬টি জাহাজ যুক্ত হতে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে কন্টেইনারবাহী জাহাজ চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও ইতালিতে যায়। এসব রুটে ২৫টি কোম্পানির ৮৫টি জাহাজে মাসে ১,৫০,০০০ কন্টেইনার বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের জন্য বড় একটি বাজার রয়েছে, চাইলেই সহজে যাতে প্রবেশ করা যায় শক্তভাবে।

বাংলাদেশ ফ্লাগ ভেসেলস (প্রটেকশন) অর্ডিন্যান্স ২০১৯ অনুসারে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সমুদ্রগামী কার্গো দেশিয় পতাকাবাহী জাহাজে বহন করা বাধ্যতামূলক। আর এর ফলেই ক্রমশঃ ধেয়ে আসছে দেশি বিনিয়োগ।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শিপিং খরচ বেড়ে গেছে। বুকিং দিয়েও সময়মত পণ্য পরিবহন করার জন্য জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লিড টাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকার এই খাতে বড় ধরণের সুযোগ নিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিপিং কস্ট এবং লিড টাইম- দুটোই কমিয়ে আনতে ইউরোপের সাথে সরাসরি সমুদ্রপথে সংযোগ চালু করেছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি সোঙ্গা চিতা নামের একটি জাহাজ প্রথম চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে গিয়েছে ইতালির উদ্দেশ্যে। এতে আগে যেখানে ৪০ দিন সময় লাগত, সেটা ২৪ দিন কমে মাত্র ১৬ দিনে নেমে এসেছে। এতে শিপিং কস্ট কমবে অন্তত ৪০ শতাংশ। ফলে বিশ্ব বাজারে কঠিন প্রতিযোগিতার মাঝে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে অনেকখানি।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমাতে পারলে শুধুমাত্র জাহাজ ভাড়া বাবদ বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। একইসাথে সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতাও কমিয়ে আনা যাবে।

এগিয়ে যাক আমাদের বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!