কূটনৈতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের লেহি আইনের আওতায় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অনুদান অব্যাহত রাখতে হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও সংশোধিত আইনে সম্মতি জানাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এই সংশোধিত আইনে সম্মতি জানায়নি।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশ এই আইনে সম্মতি না জানানোর পক্ষে। তবে সরকার গভীরভাবে বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো বিবেচনা করছে।
এই আইনে সম্মতি না জানালে এর নেতিবাচক প্রভাব কতটুকু এবং কীভাবে পড়তে পারে, তাও বিবেচনা করছে। সামগ্রিক বিষয়-বিবেচনা করে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মার্কিন কংগ্রেস আইনটিতে সংশোধনী এনেছে। ফলে সহযোগিতা গ্রহীতার তালিকায় থাকা কোনো দেশের সংশোধিত আইনের বিষয়ে নিজেদের মতামত যুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই বলে মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে।
লেহি আইনের আওতায় বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অনুদান অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই আইনে অন্য কোনো মতামত দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশ বা সহায়তা গ্রহণ করে অন্য কোনো দেশের নেই।
২০২১ সালে লেহি আইনে মার্কিন কংগ্রেস সংশোধনী আনে। এই আইন অনুযায়ী, কোনো দেশের কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো ইউনিটের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।
নতুন সংশোধনী আইন অনুযায়ী, সহযোগিতা গ্রহণকারী দেশকে বিষয়টি মেনে চলতে লিখিত চুক্তি করতে হবে। লিখিত চুক্তির আগে কোনো নিরাপত্তা বাহিনী বা বাহিনীগুলোকে আর্থিক সহায়তার জন্য মনোনীত করা হবে না। নতুন সংশোধনী ২০২২ সালের ১১ই জানুয়ারি বিশ্বের সব দেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত আইন অনুযায়ী চুক্তির জন্য বাংলাদেশকে সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ওই সময়সীমার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেনি। এরপর বাংলাদেশের অনুরোধে ওই সময়সীমা ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর মধ্যেও বাংলাদেশ এই আইনে সম্মতি জানায়নি এবং এ ধরণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
এ বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে আইনটি কার্যকর হলেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে তার চূড়ান্ত মতামত এখন পর্যন্ত জানায়নি।
মার্কিন কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের কূটনৈতিক চ্যানেলে বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। ফলে লেহি আইনের আওতায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অনুদান এখনো অব্যাহত আছে।
সংশোধিত আইনের সম্মতি না জানলে এর প্রভাব কী হবে, জানতে চাইলে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লেহি আইনের আওতায় সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের অনেক আগে থেকেই সম্মতি রয়েছে। আইনটি যে পরিবর্তন হচ্ছে, তা খুব সামান্য এবং পরিধিও সীমিত।
বাংলাদেশ মতামত জানাতে সময় নিলে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও নিরাপত্তা সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্ব হবে।
উল্লেখ্য, লেহি আইনের আওতায় বাংলাদেশ ১৯৯৮ সাল থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে। অর্থাৎ ২৫ বছর ধরে প্রতিরক্ষা খাতে মার্কিন সহযোগিতা নিচ্ছে বাংলাদেশ। যে পরিবর্তন বিদ্যমান আইনে আনা হয়েছে, তা মেনে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ আগে থেকেই জানতো বলেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ লেহি আইনে সম্মতি দেবে কি দেবে না, এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই রকম মতামতই রয়েছে।
অনেকের মতে, আইনের এই সংশোধনীটি খুবই সামান্য, এতে সম্মতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর না করলে শেষ পর্যন্ত হয়তো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহায়তা বন্ধ হবে। তবে প্রতিরক্ষা সহায়তা বন্ধ নিয়ে বাংলাদেশে খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়।
সরকার দেখছে এই লেহি আইনে স্বাক্ষর না করলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না। আর যদি এ ধরণের প্রভাব না পড়ে, তাহলে বাংলাদেশ হয়তো এই আইনে স্বাক্ষর করবে না।
অন্যদিকে, যদি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এর কোনো প্রভাবের এর চিন্তা থাকে, তাহলে বাংলাদেশ এই আইনে স্বাক্ষর করলেও করতে পারে। তবে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এ ব্যাপারে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।