সময় এখন ডেস্ক:
খালেদা জিয়ার ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ পুরস্কারটি কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানইজেশনের হেড অফিসের (প্রধান কার্যালয়) বিষয় নয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ম্যারিও গুইলোম্বো।
তিনি জানান, এটি আসলে এশিয়া মিশনের বিষয়। এশিয়া মিশনই এ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা বিষয়টা সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে পারছি না।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ফেসবুক লাইভে এক আলোচনায় কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর এ কথা জানান।
ফেসবুক লাইভে তার সঙ্গে ছিলেন কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের এশিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক মমিনুল হক মিলন।
শওগাত আলী সাগর জানান, সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মারিও গুইলোম্বো তাকে জানিয়েছেন, এই পুরস্কার নিয়ে সংস্থাটির ইন্টারন্যাশনাল সেক্রেটারি বা হেড অফিসের সেক্রেটারিরা কাজ করেননি। এটি তাদের অর্গানাইজেশনের এশিয়া মিশনের বিষয়। খালেদা জিয়াকে পুরস্কৃত করার বিষয়টি মূল অফিসের নয়।
পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে মোহাম্মদ মমিনুল হক বলেন, প্রথমবারের মতো আমরাই পুরস্কারটি দিয়েছি।
করোনার কারণে ঢাকাস্থ কানাডা দূতাবাসের মাধ্যমে পুরস্কারটি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও দাবি করেন মমিনুল।
কানাডার ১৭২৫ ফিঞ্চ এভিনউতে একটি ব্যাপটিস্ট গির্জার ঠিকানায় থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি এক কামরার একটি অফিস, যার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর সংখ্যা একজন, তিনি বিএনপি নেতা মমিনুল হক মিলন। কানাডা বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশের পোস্টারে তার নাম পাওয়া যায় দ্বিতীয় সারির নেতা হিসেবে।
২০১৮ সালে তিনি ঢাকাস্থা কানাডিয়ান দূতাবাসে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে এই পদকটি তুলে দেয়ার আর্জি জানালে তা দূতাবাস কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়।
ঢাকাস্থা কানাডিয়ান দূতাবাস সেই প্রত্যাখ্যান-পত্রে মমিনুলকে জবাবে আরও জানায়, তারা খালেদা জিয়ার নামে থাকা বিভিন্ন মামলা পর্যবেক্ষণ করছেন।
এছাড়া বর্তমানে কানাডায় অবস্থিত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক অন্য দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকে এমন পুরস্কার দেয়ার কোনো অনুমোদন আদৌ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কানাডা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে এই পুরস্কারের কথা ফলাও করে প্রচার করা হলেও মেলেনি তেমন উল্লেখযোগ্য তথ্য। সংস্থাটির ওয়েবসাইট বলছে তারা ২০০৩ সাল থেকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে আসছে, যদিও সেখানে মেলেনি খালেদা জিয়া সম্পর্কিত কোনো তথ্য।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে রায় দেয় দেন কানাডার ফেডারেল কোর্ট। তাই তার কয়েক মাসের মাথায় সেই দলের নেত্রীকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ পুরস্কার দেয়াটা বিস্ময়কর বটে।
আরেকটি বিষয়, এই পুরস্কার প্রদানের তথ্য ম্যারিও গুইলোম্বো না জানলেও সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে ঠিকই বিএনপি কানাডিয়ান ১ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পুরস্কারটি কিনে নেয় বলে ২০১৮ সালে একটি অনলাইন পোর্টাল যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ ও আর্থিক লেনদেনের নথি ফাঁস করে দেয়।
সংস্থাটির ফেসবুক পেজটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তাদের তেমন কোনো অ্যাক্টিভিটি নেই। লাইক সংখ্যা ৮০টির মতো। সেখানে ছবিতে গড়ে প্রতিক্রিয়ার সংখ্যা ১৫/২০টির মতো। মন্তব্য হাতেগোণা কয়েকটি। মজার ব্যাপার হলো, মন্তব্যকারীদের অধিকাংশই বাংলাদেশি।
এমনকি সংস্থাটির এশিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক মো. মমিনুল হক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নেতা আব্দুল মঈন খানের ভাগিনা এবং তিনি কানাডার বিএনপির একজন নেতা বলেও তথ্য মিলেছে।