জামায়াতের লবিস্ট কন্টাক্ট পরকীয়ায় জেরবার

0

প্রবাস ডেস্ক:

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাতীয় সংসদে বিপুল নথিপত্রসহ বিএনপি-জামায়াতের বিদেশি লবিস্ট ফার্মে বিপুল অর্থায়নের তথ্য উত্থাপন করেছিলেন কিছুদিন আগে। যার ফলে দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়। বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল এই খবরে।

যদিও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি এই তথ্যকে অসত্য বলে দাবি করেছিল। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিএনপি চাপে পড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছিল।

দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের ক্রমাগত অনুসন্ধানে আরও বিশদভাবে উঠে আসে এই ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম। যারা প্রবাসে বসে এই লবিস্ট ফার্মগুলোর সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ করেছিলেন, দেশ থেকে পাচারকৃত (এখন পর্যন্ত যেহেতু বৈধ পথে সেই অর্থ প্রদানের প্রমাণ দিতে পারেনি বিএনপি-জামায়ত) বিপুল অর্থ কাদের হাত দিয়ে লবিস্ট ফার্মগুলোর এজেন্টদের হাতে পৌঁছেছে, কারা মধ্যস্থতা করেছিলেন, কারা বিএনপি-জামায়াতের সাথে চুক্তির সমন্বয় করেন… অর্থাৎ বিভিন্ন পর্যায়ে কারা কারা জড়িত- এমন অনেকের নাম গণমাধ্যমের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার হাতেও ইতিমধ্যে এসেছে বলে জানা গেছে।

এই তালিকার অন্যতম- আবু তাহের। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের লং আইল্যান্ড সিটিতে বাংলা পত্রিকা নামে একটি সংবাদপত্র এবং টাইম টিভি ইউএসএ নামক একটি বাঙালি কমিউনিটি ভিত্তিক টিভি চ্যানেল এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

আবু তাহের বাঙালি কমিউনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে আদালতের রায়ে সাব্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর সুহৃদ হিসেবে তাকে সবাই চেনেন। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বিচার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করতে এবং একে মানবাধিকার লঙ্ঘন দাবি করে বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন তিনি।

এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা রাজাকার মীর কাসেম আলীর যোগানকৃত বিপুল অর্থায়নে ভাড়া করা লবিস্ট ফার্মগুলোর সাথে লিয়াজোঁ করেন আবু তাহের।

শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন সময় তিনি তার সংবাদমাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের হাজির করে টকশো’র আয়োজন করেন। সেখানে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।

এছাড়াও এই সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজের ভিডিও সেকশনে গেলে দেখা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশের উন্নয়নকে কটাক্ষ করে চটকদার শিরোনামে সংবাদের নাম দিয়ে গুজব-অপপ্রচারের পসরা সাজানো হয়েছে।

বাংলাদেশ, জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে জঘন্য ও নোংরা মন্তব্য করার পরেও বিন্দুমাত্র মডারেশন চোখে পড়েনি টাইম টিভি ইউএসএ’র ফেসবুক পেজের পোস্টগুলোতে। অথচ পেজের ফটো সেকশনে গেলে দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকে সফররত সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ বিশিষ্টজনদের সাথে আবু তাহেরের দন্ত-বিকশিত ফটোসেশন!

এসব ফটোসেশন তিনি নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করার কাজে ব্যবহার করছেন। সেই সাথে নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটিতে নিজেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে জাহির করার কাজে প্রদর্শন করেন।

এমনই এক বিতর্কিত ব্যক্তি এই আবু তাহের। তিনি লবিস্ট ফার্মগুলোর সাথে লিয়াজোঁ করার মাধ্যমে দেশবিরোধী কর্মকান্ড করেই ক্ষান্ত নন, বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে ও মদদে সৃষ্ট ‘গুজবসেল’ এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিএনপি-জামায়াতের প্রোপাগান্ডাগুলো তিনি নিজের মত করে মনের মাধুরী মিশিয়ে উপস্থাপন করছেন সংবাদ আকারে।

সম্প্রতি আবু তাহের সম্পর্কে বাঙালি কমিউনিটিতে রটে গেছে চাঞ্চল্যকর এক খবর। যা এখন সেখানে টক অব দ্য টাউন। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে প্রায়শ সুন্দরী ললনাদের সাথে ওঠা-বসা করতে করতে এবার নিজেই সেঁটে গেলেন নিউইয়র্কে এসে থিতু হওয়ার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশি সুন্দরী মডেল ও টিভি অ্যাংকরের সাথে।

বিটিভি, দেশটিভি, চ্যানেল২৪, যমুনা টিভিসহ দেশের স্বনামধন্য বড় বড় কর্পোরেট হাউজে কাজ করে অতি অল্প সময়ে সাফল্যের মুখ দেখা “স” আদ্যাক্ষরযুক্ত নামের এই টিভি অ্যাংকরের সাথে অতি ঘনিষ্ঠ অবস্থায় তাকে দেখা গেছে বলে ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে স্থানীয় কয়েকটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে।

দুই বছর ধরে জ্যামাইকায় আত্মীয়-পরিজন নিয়ে বসবাসকারী ওই নারীর পরিচয়ও প্রকাশ করা হয় কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমে। তবে সময় এখন এর সম্পাদকীয় নীতির কারণে এই প্রতিবেদনে সেই নারীর পরিচয় প্রকাশ করা হলো না।

বাঙালি কমিউনিটি এবং জোবায়দার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাতে জানা যায়, পরকীয়ার বিষয়টি ধরা পড়ার কারণে তাহেরের সাথে জোবায়দার দীর্ঘদিনের দাম্পত্য সম্পর্ক এখন ভাঙনের মুখে। এই দম্পতির পুত্র ও কন্যা সন্তান রয়েছে। বাঙালি কমিউনিটিতে পরিচিত মুখ, তাই প্রথমেই ডিভোর্সের পথে না গিয়ে অনেক চেষ্টা করেন স্বামীকে এই সম্পর্ক থেকে ফেরাতে। কিন্তু ব্যর্থ হন জোবায়দা।


ছবি: মেরী জোবায়দা

কয়েক বছর ধরেই স্বামী সম্পর্কে এসব কথা কানে আসছিল তার। তবে শত অনুনয়, অনুরোধে কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত জোবায়দা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ‘এস’ এর সাথে দৃষ্টিকটু ঘনিষ্ঠতা কমিউনিটির অনেকের চোখে পড়েছে ইতিমধ্যে। ওই তরুণী ঢাকায় যতগুলো টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনা এবং মডেলিং করেছেন, সব হাউজের বড় কর্তাদের বিশেষ আস্থাভাজন ছিলেন বলে জানায় ঢাকাই মিডিয়ার একটি সূত্র।

‘এস’ নিউইয়র্কে আসার পরে কাজের সূত্রে তাহেরের সাথে পরিচয় হয়, ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বিভিন্ন সামাজিক ও কর্পোরেট অনুষ্ঠানে দুজনকে একসাথে দেখা যায়। জোবায়দার মনেও সন্দেহ বাড়তে থাকে। যদিও তাহের ছিলেন পুরোপুরি ‘ড্যাম কেয়ার’। জানা যায়, ‘এস’-কে তিনি বিয়ে করে গ্রিনকার্ড পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন।

এসব নিয়ে নিয়মিত মুখরোচক মন্তব্যের কারণে বাঙালি কমিউনিটিতে মুখ দেখাতে পারছেন না জোবায়দা। বাধ্য হয়ে তিনি ডিভোর্সের বিষয়ে আলাপ করেন ঘনিষ্ঠদের সাথে। তবে প্রতিবেদককে এ নিয়ে অতিরিক্ত তথ্য দিতে রাজি হননি কেউই।


ছবি: সর্বত্র নারী পরিবেষ্টিত থাকতে পছন্দ করেন আবু তাহের।

লম্পট আবু তাহের যে তার স্ত্রী মেরী জোবায়দার জীবন পুরোপুরি ধ্বংস এবং তাকে লক্ষচ্যুত করেছেন, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে একটি ঘটনা থেকে।

জোবায়দা নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলি ডিষ্ট্রিক্ট-৩৭ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জনমতও তার পক্ষে ছিল। তবুও হঠাৎ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। গত ৩৭ বছর ধরে এই আসনে টানা নির্বাচিত ক্যাথরিন নোলানের বিপরীতে জোবায়দার ব্যাপক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও নির্বাচন থেকে তার সরে দাঁড়ানো অনেককেই অবাক করে।

এর কারণ হিসেবে তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন- একা একা আমি খুব কঠিন সময় পার করছি। আমার পৃথিবী ক্রমাগত ভেঙে পড়ার উপক্রম হলেও সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি।

তার ফেসবুক পোস্টেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি।

পরিবার, ঘনিষ্ঠজন এবং শুভাকাঙ্খীরা তাই মেরী জোবায়দার সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী করন লম্পট স্বামী আবু তাহেরকে। দাম্পত্য জীবনে প্রতারণার কারণে স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটি তাহেরকে দুর্বৃত্ত হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। অনেকেই পারিবারিক আদালতে তার বিচার এবং স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত নারীদের ইজ্জত-আব্রু হরণের শঙ্কাও করছেন শুভাকাঙ্খীরা।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!