স্পেশাল করেসপন্ডেন্স:
বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে, এটি স্পষ্ট। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করছে। আর এই সমস্ত চাপ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন রকম তৎপরতা চালাচ্ছে।
এসব তৎপরতার প্রধান লক্ষ্য হলো, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে, তার বিপরীতে সত্য তুলে ধরা, বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তা দূর করা। আর এরকম একটি কাজের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে পাশে চায়। প্রশ্ন হলো, ভারত কি বাংলাদেশের পাশে থাকবে? এখন বাংলাদেশের মিত্র হিসেবে ভারতের যে অবস্থান, ভবিষ্যতেও কি তা বজায় থাকবে?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গত এক যুগে অনন্য উচ্চতায় গেছে। দুই দেশের পক্ষ থেকে এই কথা বলা হয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের ক্ষেত্রে দুই দেশই আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। ভারত এই সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।
কারণ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ব্যবহৃত হতো এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেত। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালিত হয়।
শেখ হাসিনার এই দৃঢ় অঙ্গীকার এবং প্রত্যয়ের কারণেই ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে। আর একে ভিত্তি করে দুই দেশের অমীমাংসিত অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেখা গেল, দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে নানা রকম টানাপোড়েন।
বিশেষ করে সীমান্তহত্যা, তিস্তার পানিচুক্তি বণ্টন না করা, ভারতের নাগরিকত্ব আইন এবং ভারতের কোনো কোনো বিজেপি নেতার বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য- দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্বস্তি তৈরি করে।
যদিও এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর, ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরসহ দ্বিপাক্ষিক অনেকগুলো বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপোড়েনের কথাও শোনা যাচ্ছে।
এই অঞ্চলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন নীতি-কৌশল গ্রহণ করেছে। ফলে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন ইস্যু সামনে নিয়ে আসছে তখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অবশ্যই পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতকে নিজেদের পক্ষে চায় বাংলাদেশ।
কারণ বাংলাদেশ এখন চীন-রাশিয়া কেন্দ্রীক কূটনৈতিক বলয়ে অবস্থান করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটাই নাজুক। আর সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা, তাদের কাছে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা, বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক ধারণাগুলোর বিপরীতে সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সে কারণেই বাংলাদেশ পুরনো মিত্র ভারতকে পাশে চায়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন দৃশ্যত একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্ষতিগ্রস্ত করা, হেয় প্রতিপন্ন করা এবং বাংলাদেশকে একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা।
যার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম নষ্ট করা হবে। এই চক্রান্তের পেছনে পাকিস্থানসহ কয়েকটি পক্ষ কাজ করছে। আর এতে জ্বালানি যোগাচ্ছে বাংলাদেশবিরোধী চক্র। তাদের এসব চক্রান্ত যেন ব্যর্থ করা যায়, সেজন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি ভারতেরও ভূমিকা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।