সময় এখন ডেস্ক:
রোহিঙ্গাদের দুর্গতি পুঁজি করে ক্যাম্পগুলোতে শক্ত ঘাঁটি বানিয়েছে জঙ্গিরা। ৩৪টি ক্যাম্পের সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে লুকিয়ে আছে ১৪টি সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রায় ৫ হাজার সক্রিয় ক্যাডার।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রোহিঙ্গা প্রতাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।
গত বছর অক্টোবরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ এবং ৬ রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যার পর, প্রত্যাবাসন বিরোধী জঙ্গী সংগঠন আরসা তাদের অবস্থান আরো শক্ত করেছে।
মুহিব উল্লাহর ভাই হাবিব উল্লাহ বলেন, আরসা কর্মীরা ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত। রাতের বেলায় পুরো ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। রোহিঙ্গারা তাদের চেনে কিন্তু তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভয় পায়।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, মাদক পাচার থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, ত্রাণ সামগ্রী মজুত ও খোলা বাজারে বিক্রয়সহ সব কিছুই আরসার নিয়ন্ত্রণে। তাদের মোকাবেলা করার মতো কেউ নেই এবং তারা রোহিঙ্গা শিবিরে শক্ত অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছে।
রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা ও ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণের জন্য ক্যাম্পের বাইরে যেতে হয় উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের কেউ কেউ এই সুযোগে মাদক ব্যবসায় লিপ্ত। এমনকি তাদের পেট থেকেও আমরা ইয়াবা উদ্ধার করেছি।
সাবেক প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমি যতদূর জানি, মিয়ানমার বলেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক সন্ত্রাসী আছে এবং তাদের তারা দেশে ফিরিয়ে নিতে চায় না।
এপিবিএন কর্মকর্তারা জানান, মুহিব উল্লাহকে হত্যার পর থেকে ফৌজদারি অভিযোগে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১২১ জন আরসা সদস্য। যারা বিভিন্ন সময় মিয়ানমারে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দায়ে অভিযুক্ত। এমনকি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী দুর্গম সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে যাতায়াত করে তারা।
সাধারণ রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরসা সম্পর্কে কথা বলেছেন। কারণ তারা ভয় পায়, তাদের নাম জানতে পারলে আরসা এর প্রতিশোধ নেবে।
এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরসা কর্মীরা মিয়ানমার প্রশাসনের এজেন্ট হিসেবে প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভেতরে ভীতি সঞ্চার করছে। বলছে, মিয়ানমারে ফিরে গেলে তাদেরকে হত্যা করা হবে।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, আরসা সদস্যরা রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করার দাবি করেছিলেন এবং অনেক সাধারণ মানুষ প্রাথমিকভাবে তাদের বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু এখন রোহিঙ্গারা বিশ্বাস করেন, আরসা মিয়ানমার সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এবং তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনে বাধা দিচ্ছে।
আরেক রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি এতটাই ভীতিকর যে আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরতে চাই এটা প্রকাশ্যে বলতে পারি না। যারা প্রত্যাবাসনের কথা বলছেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্যাতন করা হচ্ছে তাদের পরিবারর সদস্যদের।
২০১৭ সাল থেকে মুহিব উল্লাহ, আরিফ উল্লাহ, আবদুর রহিম, নূরে আলম, হামিদ উল্লাহর মতো জনপ্রিয় নেতাসহ আরো ৫০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত নেতাদের পরিবারের সদস্যরা জীবনের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন।
বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রিত নুর কামাল বলেন, আরসা মিয়ানমার সরকারের তালিকাভুক্ত একটি নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা এই নাটক মঞ্চস্থ করে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। এখন তারা প্রত্যাবাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) ২০১৬ সালে এক প্রতিবেদনে বলেছে, সৌদি আরবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদেরকে এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। আইসিজি বলছে আরসা নেতা আতাউল্লাহ জুনুনি পাকিস্থানে জন্মগ্রহণ করেছে এবং সৌদি আরবে বেড়ে উঠেছে।
পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র মদদে জুনুনি বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে স্থায়ী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে।
আতাউল্লাহ জুনুনির অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও রোহিঙ্গারা বিশ্বাস করে তিনি আরাকানে থাকেন এবং সেখান থেকে তিনি তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। যদিও বেশ কয়েকবার তাকে পাকিস্থানে শনাক্ত করা গেছে।
সাবেক এক পররাষ্ট্র সচিবের মতে, আরসা বরাবরই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পক্ষে কাজ করে আসছে। আমি বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।