যতই আন্দোলন করতে চায় বিএনপি, ততই বাড়ছে বিভক্তি!

0

স্পেশাল করেসপন্ডেন্স:

বিএনপি যতই আন্দোলনমুখী হচ্ছে দলের বিভক্তি ততই প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। দলের একটি পক্ষ এখন প্রকাশ্যেই তারেক রহমানকে দুষছেন। তাদের দাবি, তারেকের কারণেই খালেদার মুক্তি এবং বিদেশে পাঠানোর আন্দোলনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এখন বিএনপিতে তারেক রহমান বনাম আন্দোলন প্রত্যাশীদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার সহযোগীরা তারেক রহমানের নির্দেশনার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা জানান, খালেদার মুক্তির আন্দোলনের চেয়ে কমিটি বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারেক। যোগ্য-ত্যাগী এবং খালেদাপন্থী নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করছেন তিনি। বেশি টাকা দিতে সামর্থ্যবান নেতারাই পেয়েছেন পদবি। তারেক রহমান নিজের মায়ের চেয়ে টাকাকে বেশি মূল্যায়ন করছেন। ফলে বিএনপিতে এখন তারেক বনাম আন্দোলন প্রত্যাশীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েই চলছে।

এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের চেয়ে দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। তিনি নির্বাচনের আগে সরকারকে অকার্যকর প্রমাণ করতে চাইছেন।

তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতা মনে করেন, তিনি অতীতেও বিভিন্ন ফর্মুলা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এবারও তার সব ফর্মুলা ব্যর্থ হবে। তার কোনো ধরনের পদক্ষেপ কখনোই বিএনপির জন্য ইতিবাচক ফলাফল আনেনি, আনবেও না। ফলে আন্দোলন যতই ঘনীভূত হবে, বিএনপিতে ততই বিভক্তি প্রকাশ পাবে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, কাগজে-কলমে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে দলের বিভক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এ বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অব্যাহতির মধ্য দিয়ে। তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী ভালোভাবে নেয়নি।

শুধু নজরুল ইসলাম মঞ্জু নয়, এর আগে বিএনপি নেতা শওকত মাহমুদ এবং মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন তারেক রহমান। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছেন।

এছাড়া জানা যায়, সম্প্রতি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে বিএনপির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই বৈঠকে তারেক রহমানের সমালোচনা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়া নিয়ে বিএনপি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে বলেও কয়েকজন নেতা মন্তব্য করেছেন। তাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণ করা নেতারা বলেন, এ রকম আন্দোলন করলে খালেদা জিয়ার মুক্তিও যেমন হবে না, তেমনি বিএনপির কোনো দাবি-দাওয়াও পূর্ণ হবে না। আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে যে ধরনের জনপ্রিয়, দক্ষ ও স্থানীয় নেতা প্রয়োজন, বর্তমানে সে ধরনের নেতা বিএনপিতে নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি এখন বিভিন্ন দলে বিভক্ত। আর এসব বিভক্তি তারেক রহমানের স্বৈরাচারী নেতৃত্বেরই ফসল। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি যেকোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!