স্পেশাল করেসপন্ডেন্স:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে ঘিরে কিছুদিন আগেও বিএনপির তৃণমূল নেতাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস, আনন্দ ও চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। কিন্তু হঠাৎ সেই তৎপরতা চোরাবালির অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আর তাদের রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে তারাও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, আমরা কী করছি? কোন পথে যাচ্ছি? কিছুই জানি না। খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে কেন্দ্রের নেতারা কোনো আন্দোলন করছেন না। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন তো দূরের কথা, কোনো প্রস্তুতিও দৃশ্যমান হচ্ছে না। এছাড়া বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপের যায়নি। এমনকি সার্চ কমিটির কাছে নাম দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন নেতারা।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এক নেতা বলেন, ড্রইংরুম বা অফিসে বসে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন করা যায় না। এজন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি, লক্ষ্য দরকার। নির্বাচনের আছে মাত্র ২ বছরের কম সময়। এত কম সময়ের মধ্যে একটি যৌক্তিক আন্দোলনের প্রয়োজন। কিন্তু কেন্দ্রের নেতাদের কাছ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসছে না। এখন আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, বিএনপির হাইকমান্ডের রাজনীতিই হচ্ছে শুধুমাত্র কয়েকটি বিবৃতি এবং সংবাদ সম্মেলনের রাজনীতি।
খুলনা বিএনপির এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়া যখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তখন বিএনপির নেতারা মনে করেছিলেন, তারা বোধহয় তুরুপের তাস হাতে পেয়েছেন। খালেদা জিয়া ইস্যুতেই তারা আমাদের আন্দোলনে নামিয়ে অনেক আশা দেখান। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। খালেদা জিয়া ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি ফিরে গেছেন এবং তিনি এখন সুস্থ আছেন বলেই জেনেছি। ফলে খালেদা জিয়া ইস্যুতে আবেগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আন্দোলনের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি দলের নেতাদের একের পর এক অসত্য তথ্যের বিষয়গুলো বিএনপির ইমেজকে নষ্ট করেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লবিস্ট নিয়ে তিন ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। এর পরপরই তিনি বলেছেন, লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে জাতির স্বার্থে এবং তারপর তিনি বলেছেন লবিস্ট নিয়োগ হয়েছে কি হয়নি, সেটি তিনি জানেন না।
কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বক্তব্যে আমরা বিব্রত বোধ করি। এছাড়া বিএনপির হাইকমান্ডের বিভিন্ন সময় অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় আসার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসার আর কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু আমরা সরকারের অবস্থানকে দুর্বল করতে একটি আন্দোলন করতে চেয়েছিলাম। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন জমাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। একদিকে তারেক রহমান টানেন, অন্যদিকে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) টানেন।
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ নেতা বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণ আছে। আমাদের পক্ষ থেকে তারা কোনো সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক নির্দেশনা দেন, আবার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আরেক নির্দেশনা দেন। এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও যেকোনো আন্দোলন বা সভা করতে হীনমন্যতায় ভোগেন।