নালিশের ঝুড়ি হাতে অজি রাষ্ট্রদূতের দরবারে ফখরুল | নয়া মিথ্যাচারের অপেক্ষায় জাতি

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

বিদেশি প্রভুদের ছাড়া যেন বিএনপির (পড়ুন: বাংলাদেশ নালিশ পার্টি) একদিনও চলে না। নিজেদের যোগ্যতাহীনতার কারণে আন্দোলন জমাতে না পারা, রাজপথে নামতে অনীহা, বিরোধিতার নামে সব কিছুর বিরুদ্ধাচারণ করা, অযোগ্য লোকজন নিয়ে রাজনীতি করা, দণ্ডিত অপরাধীদের দলের প্রধান হিসেবে রাখা- এগুলোই বিএনপির রাজনীতির অংশ।

আর জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এই দলটি বিদেশি প্রভুদের দরবারে ঘুরঘুর করতে থাকে সবসময়। বিদেশি লবিস্টদের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঢেলে দেশের ক্ষতি করতে এবং সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে তারা ক্ষমতার বাইরে থেকে। আর নানা সময় দেশে দায়িত্বরত বিদেশি দূতাবাসগুলোতে ধর্না দেয় নালিশের ঝুড়ি হাতে নিয়ে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিগত সময়গুলোতে দেখা গেছে, বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে তাদের দুয়ারে কড়া নাড়েন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। কখনও তাদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন, কখনও কখনও সাক্ষাতের সুযোগ মিলছে।

আর সাক্ষাতের সুযোগ পেলেই সরকারের বিরুদ্ধে নালিশের ঝুড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ছেন বিএনপি নেতারা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, স্যাংশন আরোপের জন্য ‘মামার বাড়ির আব্দার’ জানান তারা।

তবে বিএনপির নালিশের বিপরীতে বিদেশি দূতদের প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিএনপি নেতারা গণমাধ্যমে এসে মিথ্যাচারটাই করেন। বলেন- বিদেশি দূতরা বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রচুর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তারা আর এসব বরদাশত করবেন না… ইত্যাদি।

যদিও দিনশেষে তাদের সেসব মিথ্যাচার উন্মোচিত হয়, তারা দলীয় সমর্থকদের সামনেই ধিকৃত হন। তবুও তাদের লজ্জা হয় না। আবারও গণমাধ্যমের সামনে মিথ্যার বেসাতি খুলে বসেন যথারীতি। এভাবেই চলছে তাদের রাজনীতি।

এবার বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুআর-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার, ১৫ই মে দুপুরে গুলশান-২ নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের অফিসে এ বৈঠক হয়।

জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে যান মির্জা ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রায় ১ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ছিল আমাদের নিয়মিত বৈঠকের একটা অংশ। আমরা প্রায়ই এ ধরনের বৈঠক করে থাকি।

এমন একটা ভাব দেখালেন বিএনপি নেতা, যেন বিদেশি দূতাবাসগুলো তাদের মামার বাড়ি, যখন তখন সেখানে বেড়াতে যান!

কূটনীতিকদের নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের নমুনা:

বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের সাম্প্রতিক শিকার হচ্ছেন, জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিন ট্রস্টার। তার সাথে বৈঠকের পর গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করেছিল বিএনপি। যা নজরে আসতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান স্বয়ং রাষ্ট্রদূত। গত ১৭ই মার্চ বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন আচিন ট্রস্টার। বৈঠকের পর বিএনপি গণমাধ্যমে রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে যে বক্তব্য দেয়, তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন জার্মান দূত।

পরে বুধবার (২০শে এপ্রিল) ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ডিক্যাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, বিএনপির মন্তব্যে আমি অখুশি। আমাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আমি বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এটি মোটেই সত্য নয়। কেউ আমাকে উদ্ধৃত করে মিথ্যা বলুক, আমি তা চাই না। আমাকে উদ্ধৃত করে দয়া করে মিথ্যাচার করবেন না।

বেশ কয়েক বছর আগে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘের মহাসচিবের দরবারে বিচারের আর্জি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হয়েছিলেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় তোলা ছবি নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক বিবৃতি দেয় বিএনপি।

দাবি করা হয়, জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে একান্ত বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে নালিশ করা হয়েছে, নির্বাচন বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা নিয়েও কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

অথচ পরবর্তীতে জানা যায়, এ সবই মিথ্যা। জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে দেখা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তিনি সাক্ষাৎ পাননি। অতঃপর দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে মুখ রক্ষার্থে তিনি জাতিসংঘের বারান্দায় কয়েকটি ছবি তুলেই দেশে ফিরে এসেছেন।

পাকিস্থানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় বিএনপির প্রতি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর অবিশ্বাস সবসময়। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বে ছিল ভাটার টান। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি ভারতীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির সাথে সুসম্পর্ক দেখাতে গিয়ে করেছে নির্লজ্জ মিথ্যাচার।

২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করে শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন। এছাড়াও বেশ কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। দেশের সব সংবাদমাধ্যম খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটি মিথ্যাচার বলে শুরুতেই দাবি করা হয়।

পরে বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা হলে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম সরাসরি বিজেপি নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে অমিত শাহ স্বয়ং জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কথা হয়নি। এটি নিছকই মিথ্যাচার। প্রকাশিত খবরটির কোনো ভিত্তি নেই। সে সময় এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মিডিয়া বিএনপিকে নিয়ে এমন সব সংবাদ পরিবেশন করে, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও ট্যাবলয়েডে এ নিয়ে ব্যাপক হাসি-ঠাট্টা করা হয়।

গত ৭ই জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত এক কনভেনশনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের পরাশক্তির দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে। এ সময় কোনো রকম তথ্য উপাত্ত ছাড়াই তিনি দাবি করেন, সিইসি কেএম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ রকম আরও অনেক আসবে। এটি আমাদের জন্য লজ্জাকর।

কিন্তু সেই রাতেই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতি বিএনপি নেতার এমন দাবিকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে প্রমাণ করে দেয়। বার্তা সংস্থা ইউএনবির পক্ষ থেকে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ কর্তৃক দাবিকৃত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সত্যতা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়।

ইউএনবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ সময় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, র‌্যাবের ৭ জন কর্মকর্তার ইস্যুটির পর আর কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। যদি কেউ এমন দাবি করে থাকে, তবে তা সবৈব মিথ্যা এবং অপপ্রচার। দূতাবাসের মুখপাত্র আরও জানান, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী সুরক্ষিত। এ বিষয়ে বাইরের কেউ কোনো তথ্য পেতে পারেনা। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিপত্র জারি করার পূর্বেই কেউ যদি দাবি করে থাকেন, কারো ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তবে সেটি নিঃসন্দেহে মিথ্যাচার।

বারবার মিথ্যাচার ধরা পড়লেও স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির এসবে কিছুই যায়-আসেনি, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা। এর প্রমাণ দেখা যায় কিছুদিনের মধ্যেই।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের প্রতি অসামান্য (!) অবদানের জন্য ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি অ্যাওয়ার্ড’ বা মাদারে গণতন্ত্র সম্মাননা দিয়েছে দ্য কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও); খেতাবটি নাকি ৩/৪ বছর আগে দেওয়া হয়েছে, এমন দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দাবির সপক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভুয়া ক্রেস্ট ও সনদপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

যদিও পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামক ভুঁইফোড় সংস্থাটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। আঁতিপাতি করে খুঁজেও সংস্থাটির ওয়েবসাইটে কিংবা ফেসবুক পেজেও খালেদা জিয়া বিষয়ক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, সংস্থাটির নামে একটি এক কক্ষের অফিস চালান কানাডা বিএনপির নেতা মোহাম্মদ মমিনুল হক। তিনি ছাড়া আর কোনো কর্মচারীও নেই সেই সংস্থার। কানাডার নিবন্ধনদাতা সংস্থা জানায়, এই প্রতিষ্ঠানটির কাউকে পদক বা খেতাব প্রদানের এখতিয়ারও নেই।

যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, কানাডিয়ান হাইকমিশনও এখানে এটি এন্ডোর্স করেছে। কিন্তু কানাডিয়ান হাইকমিশন পরবর্তীতে একে মিথ্যাচার বলে নিশ্চিত করেছে।

এভাবে ক্রমাগত বিএনপি জাতিকে বিভ্রান্ত করে চলেছে, কিন্তু প্রতিবারই ধরা খাচ্ছে। লজ্জা-শরম থাকলে তারা নিজেদের চরিত্র সংশোধন করত।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!