আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির অভিযোগের তীর পুলিশের দিকে, কিন্তু ইতিহাস কী বলে?

0

সময় এখন:

দুদকের দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের ইতিহাসে আইন এবং বিচার বিভাগ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল এর মাধ্যমে; কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হলেও কৃতকর্মের সাজা দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। তবুও বয়স বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় অপরাধী খালেদা জিয়াকে নিজ বাড়িতে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। যাকে রাজনীতি বিশ্লেষকরা কারাদণ্ডের পরিবর্তে আরামদণ্ড বলে অভিহিত করেন।

খালেদা জিয়ার সাজার রায় ঘোষণার পর থেকে দেশের মানুষের মাঝে শঙ্কা ছিল বিএনপি হয়ত আবারও আগুন সন্ত্রাস এবং ধ্বংসযজ্ঞের রাজনীতিতে নেমে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। বিএনপি অবশ্য সেটা করতে চেয়েছিল, কিন্তু পুলিশ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় সদা সতর্ক থাকায় বিএনপি তেমন কিছু করতে পারেনি। তাদের তৎপরতায় রক্ষা পেল রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ এবং মানুষের জীবন-জীবিকা। বিএনপি টিভির সামনে বারবার হুমকি-হুঙ্কার দিয়েও রাজপথে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন জমাতে পারেনি।

শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন জমানোটাই একমাত্র ব্যর্থতা নয়, রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতেই বিএনপি তাদের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কোনো আশাব্যঞ্জক দৃষ্টান্ত রাখতে পারেনি। গত ১৩ বছর ধরে কখনো রোজার ঈদের পর নইলে কোরবানির ঈদের পর, কখনো করোনার পর, কখনো শীত বা বর্ষার আন্দোলনের সম্ভাব্য সময় জানিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। আর কখনো যদি সমাবেশ-সভা করতে সক্ষম হয়ও, সেটা ভণ্ডুল করে দেয় ছাত্রদল, যুবদল বা স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি, মারামারি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি কিংবা সেলফি তুলতে গিয়ে মঞ্চ ভেঙে পড়ে গিয়ে।

দলীয় কোন্দল, বিশৃঙ্খলায় জেরবার বিএনপি কিন্তু নিজেদের দোষ দেখতে পায় না, দোষ চাপায় পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর। সভা-সমাবেশ থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্র। ইতিপূর্বে কয়েকবার দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে সাথে যাওয়া বিএনরি কর্মীদের হাতে রাস্তার দুই পাশে শত শত গাড়ি ভাঙচুর করার দৃশ্য। সেসব ঠেকাতে পুলিশ বা অন্য সংস্থাগুলো সবসময় সতর্ক অবস্থানে থাকে। নিজেদের মারামারিতে সভা পণ্ড হলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা গণমাধ্যমে এসে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপায়।

বিএনপি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে কর্মীদের উসকে দিচ্ছিলেন, বারবার কেন্দ্রীয় নেতারা বলে আসছেন, বুকের রক্ত দিতে না পারলে যেন বিএনপি না করে, রাজপথে মরতে না পারলে খালেদা জিয়া গদিতে বসতে পারবেন না, দলের জন্য জীবন দেওয়া ছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন হবে না- এমন ভয়াবহ উসকানি দিয়ে তারা কর্মীদেরকে রাস্তায় আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কে শখ করে নিজের জীবন দিতে চায়? তাই লাশের রাজনীতিতে নেমেছে বিএনপি আবারও। আর ভোলায় পড়ল দুই লাশ। সেই লাশ নিয়ে বিএনপির রাজনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হলো। বিএনপি নেতা আবদুস সলাম আরও লাশ চেয়ে বক্তৃতা দিলেন।

মির্জা ফখরুল এবং রিজভী দুজনই পুলিশকে প্রাইভেট লাঠিয়াল বাহিনী বলে দাবি করলেন, রকেট-বিকাশ পরিষদের রেজা কিবরিয়া হুমকি দিলেন ক্ষমতায় গিয়ে এসব পুলিশ এবং অপর সংস্থার কর্মকর্তাদের কোর্ট মার্শাল করবেন বলে। বিএনপি নেতাদের দাবির মর্মার্থ এমনই, যদি কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কিংবা জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি করতেও চায়, পুলিশ এবং প্রশাসনের কাজ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখা। সহিংসতার ঘটনা ঘটলে সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা না করা, পুলিশের ওপর হামলা হলেও পুলিশ যেন নিষ্ক্রিয় থাকে এবং দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রাণ দেয়।

অথচ এই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে ইতিপূর্বে বহু পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, আগুন সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। সেই দুঃসহ স্মৃতি খুব বেশিদিন আগের নয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপির লাগাতার হরতাল, আগুন সন্ত্রাসের সেই দিনগুলোতে বহু পুলিশ সদস্যকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। খোদ বিএনপি-জামায়াত আমলে আজকের এই পুলিশ বাহিনীর তৎকালীন কতিপয় সদস্যের কারণে পুরো বাহিনী দেশের মানুষের কাছে ভাবমূর্তি হারিয়েছিল। পুলিশের আদর্শ, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা, দক্ষতা সব কিছু বন্দি ছিল সরকারের হাতের মুঠোয়।

পুলিশ বাহিনীকে হেন কোনো অন্যায় কাজ ছিল না, যাতে ব্যবহার করেনি বিএনপি-জামায়াত। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রী হলে ঢুকে ছাত্রীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, ছাত্রদলের গুণ্ডাদেরকে সাথে নিয়ে বিরোধীদলীয় (আওয়ামী লীগ) সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদেরকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করা, তাদের ওপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন, মামলা দিয়ে হয়রানি করা, পবিত্র আশুরার দিনে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢুকে লণ্ডভণ্ড করে কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে আটকে রেখে তাদেরকে বুট, লাঠি এবং বন্দুকের বাঁট দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করা, মিছিল-সমাবেশ হলে রাজপথে আওয়ামী লীগের নারী নেতা-কর্মীদের বস্ত্রহরণ ও যৌন হয়রানি করা, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর সেই দৃশ্য আজও ভোলেনি বাংলাদেশ। সকল পত্রিকায় এসব ছবি ছাপা হয়েছে।

অথচ তার বিপরীত চিত্র মেলালে দেখা যাবে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউকেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার কোনো নজির নেই। তাদের সাজাপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পর্যন্ত কারাবিধি ভঙ্গ করে বিশেষ বদান্যতায় সঙ্গী দেওয়া হয়েছে, তারকামানের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়েছে, তিনি বর্তমানে সাজা স্থগিত অবস্থায় নিজ বাড়িতে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ এই খালেদা জিয়া এবং তার দল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে গ্রেনেড হামলা ছাড়াও বহুবার শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালিয়েছে, অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ২১ হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থককে হত্যা এবং গুম করা হয়েছিল। সেই বিএনপির নেতাদের অসুস্থতার খোঁজ নেন এবং চিকিৎসা সহায়তা দিতে সদা তৎপর থাকেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানর কোকোর মৃত্যুর ঘটনা শুনে প্রটোকল ভেঙে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুত্রহারা খালেদা জিয়াকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল সেই বিএনপি নেত্রীর কর্মচারীরা। কতটা অমানবিক, নৃশংস এবং নিচু মানসিকতার লোকজন বিএনপি করে, তা স্পষ্ট। এই বিএনপি এখন লাশনির্ভর রাজনীতি করছে, পুলিশের ওপর হামলা করছে, পুলিশি অ্যাকশনকে তাদের নাশকতা-সহিংসতার অধিকার হরণ বলে দাবি করছে। বিএনপির নেতাদের লজ্জা-শরম কবে হবে?

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!