বাংলাদেশে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যাচার | সত্য জানুন

0

অর্থনীতি ডেস্ক:

কোনো ফি ছাড়াই ভারতকে বাংলাদেশে ট্রানজিটের সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে টকশোতে, রাস্তায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যাচার, গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি, জামায়াত ও তাদের লেজুড় বাম দলগুলোর কতিপয় গণ্ডমূর্খ নেতৃবৃন্দ। তাদের বক্তব্য শুনে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে, তারা আদৌ সত্যটা জেনে-শুনে অপলাপ করছেন না তো? জাতিকে বিভ্রান্ত করতেই এমন মিথ্যাচার করছেন না তো তারা? আসুন সত্যটা জেনে নেওয়া যাক।

প্রকৃতপক্ষে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে বন্দর ব্যবহারের জন্য বিশ্বের কোথাও শুল্ক-কর আদায়ের নিয়ম নেই। তবে সেই দেশের অবকাঠামো ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ফি বা মাশুল নেওয়া হয়। সে হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের ট্রানজিট পণ্য পরীক্ষামূলক পরিবহনের জন্য একটি ফি-মাশুল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ট্রানজিটের একটি চালান গত সপ্তাহে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নেমে সড়কপথে সিলেটের শেওলা হয়ে ভারতের আসাম পৌঁছেছে। এক কন্টেইনারের এই চালানে ছিল ২৫ টন স্টিল বার। পরীক্ষামূলক এই চালানে বাংলাদেশ মোট ২ লাখ ১২ হাজার টাকার বেশি আয় করেছে। এই আয়ের মধ্যে তিনটি সরকারি সংস্থা— চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, জাহাজভাড়া এবং ট্রেইলার ভাড়া যুক্ত আছে।

কোন কোন খাতে আয় হয়েছে, তার সংক্ষেপ (একটি কন্টেইনারের জন্য):

কোলকাতা বন্দর – চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত জাহাজ ভাড়া: ৬৫ হাজার টাকা (৬৫০ ডলার)
বন্দরের চার্জ: ৪,৩০০ টাকা (৪৩ ডলার)
বাংলাদেশ কাস্টমস ফি: ৭,০৭৩ টাকা
বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার বাবদ: ১৫,৭৭২ টাকা
বাংলাদেশে শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ কমিশন ও ট্রেইলার ভাড়া বাবদ: ১,১০,০০০ টাকা।

জানা গেছে, কন্টেইনারে আসা পণ্যের চালানটি কলকাতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দর থেকে বাংলাদেশি জাহাজ ‘ট্রান্স সামুদেরা’য় করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। জাহাজে ১২৪ টিইউস (একক কন্টেইনারে) পণ্যভর্তি ছিল। এর মধ্যে শুধু একটি কন্টেইনারে ট্রানজিট পণ্য ছিল। কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশি জাহাজ মালিক আয় করেছেন ৬৫০ মার্কিন ডলার। বিনিময়মূল্য প্রতি ডলার ১০০ টাকা হিসাবে বাংলাদেশি টাকায় ৬৫ হাজার টাকা আয় করেছে, যার পুরোটাই বৈদেশিক খাত থেকে এসেছে।

জাহাজের মালিক মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন শেখ সাহিকুল ইসলাম বলেন, দেখুন কলকাতা বন্দর থেকে রওনা দিয়ে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের একেবারে জেটিতে পৌঁছেছে। ফলে বিশাল সময় সাশ্রয় হয়েছে, বিশেষত ট্রানজিট চালানের জন্য। এই জাহাজে অন্য কন্টেইনারের ক্ষেত্রে যে ভাড়া, ট্রানজিট চালানের ক্ষেত্রে একই ভাড়া আদায় হয়েছে। বাড়তি কোনো মাশুল নেওয়া হয়নি। ট্রানজিট কন্টেইনারে ২৫ টন পণ্য থাকায় ৬৫০ মার্কিন ডলার আয় হয়েছে।

এতে বাংলাদেশি জাহাজ, দেশি ক্রু, দেশি শিপিং লাইন, দেশি ট্রেইলার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ অনেক কর্মী জড়িত। নিয়মিতভাবে যদি ট্রানজিট কন্টেইনার আসে, তাহলে সরকারি খাত তো অবশ্যই, বেসরকারি খাতও লাভবান হবে। আর প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য সরকার যে প্রচণ্ড চেষ্টা করছেন সে ক্ষেত্রেও এটি বড় একটি সুযোগ।

জানা গেছে, ট্রান্স সামুদেরা জাহাজটি বহির্নোঙ্গরে পৌঁছার পরদিনই চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভেড়ে। আর পণ্য নামিয়ে রাতেই চট্টগ্রাম বন্দরের ফি পরিশোধ করে বন্দর ছেড়েছে। জাহাজটিকে বহির্নোঙ্গর থেকে জেটি পর্যন্ত বন্দর পাইলট দিয়ে চালিয়ে আনা হয়েছে একটি ফি দিয়ে।

কন্টেইনারটি জাহাজ থেকে নামানো, আবার ট্রেইলারে রাখা, বন্দরের জলসীমা ব্যবহারের ভাড়াসহ মাত্র একটি কন্টেইনার থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর আয় করেছে ৪৩ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ হাজার ৩০০ টাকা। ট্রানজিট চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় নেওয়ার আগে কাস্টমসের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়েছে। কাস্টমস কত ফি পাবে, তা আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। স্ক্যানিং চার্জসহ ৬ ধরনের ফি বাবদ চট্টগ্রাম কাস্টমস পেয়েছে ৭ হাজার ৭৩ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার এইচ এম কবীর বলেন, যেহেতু চালানটির পণ্য বাংলাদেশে ব্যবহৃত হবে না, তাই তার ওপর শুল্ক-কর নেই। তবে স্ক্যানিং চার্জসহ বিভিন্ন ফি হিসাবে কাস্টমস রাজস্ব পেয়েছে ৭ হাজার ৭৩ টাকা। এর বাইরে সড়কপথ ব্যবহারের জন্য সরকার নির্ধারিত মাশুল ১৫ হাজার ৭৭২ টাকাও আমরা আদায় করেছি। কিন্তু সেই টাকা জমা হয়েছে সড়ক বিভাগের অ্যাকাউন্টে।

ট্রানজিট কন্টেইনারটি বন্দর থেকে বেরোনোর আগে আমরা স্ক্যান করে নিশ্চিত হয়েছি। এরপর আমাদের টিম কন্টেইনারসহ ট্রেইলারটি পাহারা দিয়ে সিলেট সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। কিভাবে এই পণ্য পরিবহন হবে, তা আগেই নির্ধারিত ছিল।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে সিলেটের শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১৯ ঘণ্টা। এই পথ পাড়ি দিতে ট্রেইলার ব্যবহৃত হয়েছে বাংলাদেশের। আর ট্রেইলার বাবদ আয় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। শিপিং এজেন্ট ম্যাঙ্গো লাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইয়াকুব সুজন ভূঁইয়া বলেন, ৭ই সেপ্টেম্বর ভোরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দিয়ে ট্রানজিট কন্টেইনারটি ৮ই সেপ্টেম্বর রাত ১টায় সিলেটের শেওলা বন্দরে পৌঁছে।

সেই স্থলবন্দর এবং কাস্টমসের অনুমোদনপ্রক্রিয়া শেষ করে দুপুর সাড়ে ১২টায় ভারতে প্রবেশ করে চালানটি। এই পথ পাড়ি দিতে ট্রেইলার ভাড়া, সিঅ্যান্ডএফ কমিশন এবং শিপিং লাইন ফি বাবদ মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়েছে।

ভারত থেকে আসা ট্রানজিটের ৪টি পরীক্ষামূলক চালান এরইমধ্যে সফলভাবে শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের ২১শে জুলাইয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের প্রথম চালানটি কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছিল। সেটি তখন চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা গিয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের চুক্তির আওতায় ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য পরিবহনে এটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য দ্বিতীয় চালান।

অতএব, বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারে কান দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, সত্য জানুন।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!