সময় এখন:
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানিদের দোসর শান্তিবাহিনীর কমান্ডার রুহুল আমিন ওরফে চখা রাজাকারের যোগ্য পুত্র- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায়শ মনগড়া ও মিথ্যাচার করেন মিডিয়ার সামনে কোনো দ্বিধা ছাড়াই নির্বিকার ভঙ্গিতে। কখনো খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও তার সন্তান তারেক-কোকোকে শিশু মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, কখনো বিদেশ থেকে পদক কিনে এনে ধরা খান এই ফখরুল। তবুও দলে পদ টিকিয়ে রাখতে নতুন নতুন গপ্পো ফাঁদেন।
এবার তিনি হাজির করলেন নতুন এক তথ্য। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নাকি দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত সাফ গেমস-এ নাকি নারী ফুটবল সংযোজনে ভূমিকা রেখেছেন! বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও এ নিয়ে বেশ হল্লা তৈরি হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তার প্রচার।
আসুন, ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যাক, সাফ গেমস-এ নারী ফুটবল সংযোজনে জিয়াউর রহমানের অবদান কতটা?
বাংলার বাঘিনীরা যে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলেন, তা হলো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। SAFF- মানে সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন, যা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ, ১৯৮১ সালে জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার ১৬ বছর পরের ঘটনা।
এই প্রতিষ্ঠান গঠনের আগেই ১৯৯৩ সালে শুরু হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার শুধুমাত্র ফুটবলের প্রতিযোগিতা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। প্রথমে যার নাম ছিলো সার্ক গোল্ড কাপ (South Asian Association of Regional Co-operation Gold Cup), এরপর নাম হয় সাফ গোল্ড কাপ (South Asian Football Federation Gold Cup)। প্রথম ১৭ বছর অনুষ্ঠিত হয় শুধু পুরুষদের টুর্নামেন্ট। এটি শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। অর্থাৎ, জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার ১২ বছর পর।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নারীদের অংশগ্রহণ শুরু হয় ঢাকায়, ২০১০ সালে। অর্থাৎ জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার ২৯ বছর পর। এই ডিসিপ্লিনের চ্যাম্পিয়ন হলো এবার বাংলার নারীরা।
আবার, SASF গঠিত হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সকল খেলার স্পোর্টস ফেডারেশন হিসেবে। ১৯৮৩ সালে, অর্থাৎ জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার ২ বছর পর। এই প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের বহু-ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা বা গেইমস বা মিনি অলিম্পিক শুরু করে কাঠমাণ্ডুতে ১৯৮৪ সালে। অর্থাৎ জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার ৩ বছর পর। সেটার নাম দেয়া হয়েছিল সাফ (SAF) গেইমস বা সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেইমস।
এমন নাম দেয়ার কারণ হয়তো ছিলো যে, সাস্ফ বা SASF উচ্চারণ করা কঠিন। ফেডারেশনটির নাম পরে হয় সাউথ এশিয়ান গেইমস ফেডারেশন (SAGF) এবং আরও পরে ২০০৪ সালে নেয় বর্তমান নাম- সাউথ এশিয়া অলিম্পিক কাউন্সিল (SAOC – South Asia Olympic Council)।
ফ-তে ফুটবল, ফ-তে ফেডারেশন। এজন্য অনেক সময় বলতে/বুঝতে ভুল হয়ে যেত অনেকের। ২০০৪ সালেই সাফ গেইমসের নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নামটি দেয়া হয়, এসএ গেইমস (SA Gams – South Asian Games)। ফুটবল টুর্নামেন্টটি গেইমসের অনেক পরে শুরু হওয়ায় দীর্ঘকাল এই অঞ্চলের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ ছিলো সাফ গেইমসের ফুটবল ইভেন্ট। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফির আগে সেরা দল গণ্য করা হতো যারা সাফ গেইমসের স্বর্ণপদক জয়ী হতো তাদেরকে।
বিশ্ব ফুটবলেও এমন ঘটনা ঘটেছে। অলিম্পিক শুরু হয়েছে ১৮৯৬ সালে আর বিশ্বকাপ ফুটবল তার ৩৪ বছর পর ১৯৩০ সালে। সাফ গেইমস নামটি থাকা অবস্থায় নারীদের ফুটবল ইভেন্ট ছিলো না। এসএ গেইমসে নারী ফুটবল যোগ হয় ২০১০ সালে। অর্থাৎ, জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার ২৯ বছর পর। সাউথ এশিয়া অলিম্পিক কাউন্সিল (SAOC) আবার একই সাথে সার্ক (SAARC) এর একটি সংস্থা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকায় ১৯৮৫ সালে, অর্থাৎ, জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার ৪ বছর পর।
আজ নারী ফুটবল দলের ঐতিহাসিক বিজয় শোভাযাত্রার দিন জেনারেল জিয়ার নামটি টেনে এনে ঢুকিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন রাজাকারপুত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচারের কারণে তার বিচার হওয়া উচিৎ।