গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেল অধিকার পরিষদ, নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কারণ

0

সময় এখন:

মাত্র ৯ মাসের মাথায় ভেঙে গেল ৭ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরুর গণঅধিকার পরিষদ এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত বছরের ৮ই আগস্ট গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়। জোটভুক্ত দলগুলো হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাষানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গণঅধিকার পরিষদ বেরিয়ে যাওয়ায় জোটে আর ৬টি দল রইল। এখন থেকে গণঅধিকার পরিষদ এককভাবে দলীয় কার্যক্রম চালাবে, সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে গতকাল থেকে এমন ভাঙনের কারণ হিসেবে গণমাধ্যমকর্মীদের নানারকম বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ। উভয়ের বক্তব্যে নানারকম গোঁজামিল দেখা গেলও একটা বিষয় পরিস্কার, গণঅধিকার পরিষদ ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মাঝে বনিবনা নেই অনেকদিন ধরে। যার ফলাফল এই ভাঙন।

তবে ইতিমধ্যে এই ভাঙন নিয়ে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মালেক ফরাজী, যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের সাথেই যোগাযোগ করা হয়। গণমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত বলতে না চাইলেও কর্মীদের অসন্তোষ এবং ক্ষোভের মুখে বেশ কিছু তথ্য দেন তারা।

বিভিন্ন সভায় নুরু যেমনটা বলেছেন, তার দলের লোকদের কাভারেজ দেয়া হচ্ছে না খুব একটা, বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান না, কিংবা বক্তব্যের সিরিয়াল আসে অনেক দেরিতে গণমাধ্যমকর্মীরা চলে যাবার পর অথচ সভা-সমাবেশে কর্মী সরবরাহ করে অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে। এসব কারণের বাইরেও রয়েছে গুরুতর বেশ কিছু কারণ।

নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার বরাতে জানা গেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য শরিকদের তুলনায় নুরুর অধিকার পরিষদ সুসংহত। জোটের অপর দলগুলো শুধুই নেতাসর্বস্ব, কর্মী সাকুল্যে ৫-৭ জন। সেদিক থেকে গণঅধিকারের অবস্থান ভালো। বিভিন্ন জেলায় কমিটি দিয়েছেন নুরু। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফান্ড আসছে। এতে সংগঠন যেমন ফুলেফেঁপে উঠেছে, তেমনি নেতাদের পাশাপাশি দুর্বিনীত এবং অহঙ্কারি হয়ে উঠেছে কর্মীরাও।

সরকারবিরোধী বিভিন্ন সমাবেশে নুরুর কর্মীরাও অপর শরিকদের সিনিয়র নেতাদের তোয়াক্কা না করে সিট দখল করে বসে থাকে, মুখের সামনে সিগারেট ফোঁকে, রাজনৈতিক সৌজন্যতার কোনো বালাই দেখা যায় না। এছাড়া বিএনপিসহ বড় বড় দলের নেতাদের মুখের ওপর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা তো আছেই। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে, ভিডিওতে কোনো রাখঢাক ছাড়াই তারেক জিয়া, মির্জা ফখরুল, রুমিন ফারহানাসহ বিএনপির হেভিওয়েট নেতাদের গালাগাল করেন অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি না এলে একাই সরকারবিরোধী আন্দোলনের সক্ষমতা আছে আমাদের- নুরুর এমন দম্ভোক্তি সহজে মেনে নেয়নি বিএনপি নেতারা। তাছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন শুধু তারাই টিকিয়ে রেখেছে আর গণতন্ত্র মঞ্চের অপর শরিক দলগুলো যাচ্ছেতাই… এমন মনোভাবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে জোট নেতাদের সাথে অধিকার পরিষদের নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান গতমাসে যুবদলের এক সভায় ক্ষোভের সাথেই বলেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে চুড়ি পরে বসে থাকে আর রাজপথে নামতে হয় ছ্যাঁচড়া ও বস্তির পোলাপানদের নিয়ে, যারা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দেখলে সালাম পর্যন্ত দেয় না। এখানে ছ্যাঁচড়া ও বস্তির পোলাপান বলতে তিনি মূলত অধিকার পরিষদের কর্মীদের ইঙ্গিত করেছেন।

এসব কারণে গণঅধিকার পরিষদকে জোট থেকে বের করে দেয়ার দাবি উঠেছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। সেসব নুরুর কানে যাওয়ায় নিজেই জোট থেকে সরে দাঁড়িয়ে এককভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এতে সাপও মরল, লাঠিও অক্ষত থাকল। গণঅধিকারকে বহিষ্কার করা হয়েছে- এমন সংবাদ প্রচার হলে সংগঠনের কদর কমে যাবে, চাঁদা-ধান্দা দুটোই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই জোট ছাড়ার নাটক মঞ্চস্থ করেলেন নুরু।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!