সময় এখন:
৭৫-এর ঘাতকরা একবার-দুবার নয়, অন্তত ২২ বার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে এখন পর্যন্ত। প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে তারা। চোরাগোপ্তা হামলা ছাড়াও ষড়যন্ত্র করে আইন-আদালত, প্রশাসন তথা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেও শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল ওয়ান-ইলেভেনের সময়। সাজানো মামলায় তথ্য-প্রমাণের তোয়াক্কা না করেই শেখ হাসিনাকে কারাবন্দী করে সেখানে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বিচারিক প্রক্রিয়াতেই সেসব মামলা ভুয়া প্রমাণ হলে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা ফিরে আসেন জনতার মাঝে। ব্যর্থ হয় ওয়ান-ইলেভেনের সেই মাইনাস ফর্মূলা ষড়যন্ত্র। আর জনতার ভালোবাসার রায়ে এতটাই শক্তিশালী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি যে, এখন পর্যন্ত তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি সেই কুচক্রীরা।
যদিও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বারবার তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর নানামুখী আঘাত করা হচ্ছে, গুজব, অপপ্রচার, মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা, তথ্যসন্ত্রাস, মিডিয়া ক্যু, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক লবিস্ট ফার্মের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড, অর্থনীতি ধ্বংসে নানামুখী কন্সপাইরেসি- এ সবই চলমান। আপন প্রজ্ঞায়, বিচক্ষণতায়, সততায় এবং জনতার শক্তিতে বলীয়ান শেখ হাসিনা সবকিছু প্রতিহত করে যাচ্ছেন।
তবে দিন দিন ষড়যন্ত্রীরা আরও শক্তিশালী হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। এবারও সেই চিহ্নিত কিছু গণমাধ্যম, তথাকথিত সুশীল সমাজের পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা, সেদেশি কুচক্রী লবিস্ট ফার্মকে ভাড়ায় খাটানো রাজনৈতিক বিরোধীদল বিএনপি-জামায়াত এবং আন্তর্জাতিক কয়েকটি পক্ষ মেতে উঠেছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তে। আবারও ঘটাতে চায় আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের মত পরিস্থিতি। টার্গেট একই- শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠলেও ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন আনার চেষ্টা সফল হবে না, ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ওয়ান-ইলেভেন আনার প্রক্রিয়া ক্রমশ দৃশমান হয়ে উঠছে। আগে গোপনে শেখ হাসিনাকে হঠানোর চিন্তা থাকলেও বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা এখন প্রকশ্যেই বলে ফেলছেন সে কথা। মুখ ফসকে নয়, বরং তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে এটা মনে হচ্ছে যে, অতি শক্তিশালী কোনো পক্ষের আশীর্বাদ আছে তাদের মাথার ওপর। তাই দুঃসাহসী হয়ে উঠছে তারা।
বছরখানেক আগে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু, পরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এরপর ছাত্রদল নেতা সাইফ মাহমুদ জুয়েল, আবার সম্প্রতি বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ এবং সবশেষ রাশেদুল হাসান রঞ্জন প্রকাশ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এসব হুমকি কিন্তু মুখ ফসকানো রাজনৈতিক মন্তব্য নয়, রীতিমত স্লোগান দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের উস্কে দেয়া আহ্বান। প্রকাশ্য স্লোগান ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের মিডিয়া সেল পরিচালিত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব ভিডিও থেকে প্রচারিত ভিডিওগুলোতে এমন হুমকি নিয়মিত দেখা যায়।
বিএনপির অত্যন্ত আস্থাভাজন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যতই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুন্দর পরিবেশ দেখার প্রত্যাশা নিয়ে সুশীলিয় বক্তব্য দেন না কেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে সুন্দর রাজনীতর দরখাস্ত করেন না কেন, তার দেশ নতুন নতুন ভিসানীতির হুঁশিয়ারি দেক না কেন, বিএনপি নেতাদের এমন প্রকাশ্য হুমকি এবং ক্যু করার আহ্বান হাসের চোখে পড়ে না। বিএনপির বেলায় হাস চোখে ঠুলি পরে থাকে।
মার্কিন নতুন ভিসানীতি অনুসারে বাংলাদেশের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বা হুমকি দেয়াকে ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ উল্লেখ করার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মার্কিন দূতাবাসকে বিএনপির সে ধরণের কর্মকাণ্ডের নমুনা পাঠানো হয়েছিল এটা দেখার জন্য যে, মার্কিনিরা তাদের নীতিতে কতটা অটল থাকে। কিন্তু যা ধারণা করা হয়েছিল, তাই ঘটেছে, মার্কিনিরা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করেনি। এটা প্রত্যাশিত ছিল বলে প্রমাণও পেয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সূতিকাগারটা ঠিক কোথায়। কোত্থেকে কলকাঠি নাড়ানো হচ্ছে, তা দেখা হলো।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সাথে আলাপে উঠে এসেছে বেশ কিছু লক্ষণ। যাতে আরেকটা ওয়ান-ইলেভেনের মত পরিস্থিতির আঁচ করছেন তারা।
বিদেশি কুটনৈতিকদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ: ওয়ান-ইলেভেনের আগে ঢাকায় দায়িত্বরত বিদেশি কুটনৈতিকদের তৎপরতা ছিল দৃষ্টিকটু পর্যায়ের। যাকে বলে একেবারে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের হস্তক্ষেপ করেছিল। তারা রাত-বিরাতে বৈঠক করতেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার নামে, রাজনৈতিক শলা-পরার্মশ করতেন এবং সেসময়কার নথিপত্রে করলে দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ কয়েকটি দেশ ওয়ান-ইলেভেনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল।
বাংলাদেশে আবারও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা তৎপর। গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবধকিার ইস্যুতে সোচ্চার। কাজেই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তারা কি আদৌ বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় নাকি ওয়ান-ইলেভেনের মত অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনতে চায়। তাছাড়া স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের মত সাংবিধানিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ দূরে থাক, নির্বাচন কেন্দ্র করে কোনো দেশ তাদের পলিসি নির্ধারণ করতে পারে কি না বা নির্বাচনে নাক গলানোর কোনো জুডিশিয়াল রাইটস অন্য দেশের আছে কি না- এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
রাজনৈতিক মেরুকরণকে অস্ত্র হিসবে ব্যবহার: ওয়ান-ইলেভেনের নেপথ্যে অন্যতম কারণ ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আদর্শিক বিভেদ। দুই দলেরই রাজনৈতিক আদর্শ, গঠনতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার ভাবনা এবং উদ্দেশ্য ভিন্ন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীতে, পাকিস্থানপন্থী। ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। যাকে পুঁজি করে দুই দলকেই একই কাতারে দেখিয়ে দুই দলই ‘খারাপ’ এমন ন্যারেটিভ তৈরি করেছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। যারা মার্কিনিদের তাঁবেদার হিসেবে কাজ করছে এখনও।
পত্রিকাগুলোয় প্রকাশিত সাংবাদিকদতার নীতি বিবর্জিত সেই বিবৃতির সাথে যুক্ত হয়েছিল সুশীলদের আস্ফালন। মাইনাস ফর্মূলা বাস্তবায়ন হলেই দেশে শান্তি আসবে- এমন ন্যারেটিভ কৃত্রিমভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল পত্রিকাগুলো সেসময়। গত বছর নির্বাচন কমিশনকে দেয়া বিএনপির দলীয় আয়-ব্যয়ের হিসাবপত্রে দেখা যাচ্ছে দলের কোষাগার ‘০’। উল্টো আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। অথচ কোনো এক অদৃশ্য উপায়ে দলটি বছরের পর বছর আন্দোলন করে যাচ্ছে বিপুল অর্থ ব্যয় করে, সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। কারা যোগায় সেই অর্থ? ইতিমধ্যে তারা ঘোষণা দিয়েছে একদফা দাবি না মানলে নির্বাচনে যাবে না, শীঘ্রই বড় আন্দোলন হবে। আবারও সন্ত্রাস-সহিংসতা শুরু হয়ে গেলে ওয়ান-ইলেভেনের মত মাইনাস ফর্মূলার ন্যারেটিভ হাজির হবে, সেই প্রস্তুতি চলছে।
মিডিয়া ক্যু-এর চেষ্টা: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঠিক একইভাবে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কৃত্রিমভাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রিকায় কৃত্রিম সংকট দেখানোর হিড়িক চলছে। প্রান্তিক পর্যায়ের জনমত আর পত্রিকা-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনমতে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাপন নিয়ে রঙ মাখানো গালগল্প এমনভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যার কাছে বরং ইত্তেফাকের সেই বাসন্তী সাংবাদিকতাকে অনেক নিষ্পাপ মনে হবে। বৈশ্বিক সংকট, করোনা, যুদ্ধসহ প্রবল বাস্তবতায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকটসহ নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে। যাকে কাজে লাগাচ্ছে ভাড়ায় চালিত বুদ্ধিজীবী ও চিহ্নিত গণমাধ্যমগুলো। এতে ক্রমশ জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
গত ১৪ বছরে সরকারের যত অর্জন, তার সবটাই প্রশ্নবিদ্ধ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। এসব প্রোপাগান্ডা ও অপপ্রচারকে পুঁজি করে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন ঘটানোর পাঁয়তারা করছে বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে লালিত গণমাধ্যমগুলো। মিডিয়া ক্যু করতে সিদ্ধহস্ত আন্তর্জাতিক কুখ্যাত সংস্থা এনইডি (সিআইএ’র ফ্রন্ট) এভাবেই বিভিন্ন দেশে সরকার উৎখাতের অপারেশনগুলো পরিচালনা করে আসছে সেই ষাটের দশক থেকে। চিহ্নিত গণমাধ্যম এবং সংবাদকর্মীদের পেছনে তারা বিপুল অর্থায়ন করে মিডিয়া ক্যু ঘটায়। মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন, লাতিন আমেরিকার বহু দেশে এভাবেই সরকার উৎখাত এবং ক্যু ঘটানো হয়েছে।
প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রীদের ভূমিকা: সেবার ওয়ান-ইলেভেন ঘটার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা ছিল রহস্যময় ও প্রশ্নবিদ্ধ। এখন আবার দেখা যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি অধস্তন কর্মচারী যারা বর্তমানে নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে উঠে এসেছে, তারা সুযোগ বুঝে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে নেমেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত সেই কুচক্রীরা সরকারের কল্যাণকর পদক্ষেপগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নেপথ্যে ভূমিকা রেখে চলেছে।
বিভিন্ন সময় তাদের হঠকারী সিদ্ধান্তগুলোর কারণে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা হারানোর উপক্রম হচ্ছে। অথচ আমলারা থাকছেন সমালোচনার উর্ধ্বে। এমনকি অনেকসময় প্রশাসন খোদ রাজনীতিবিদদের কাজে বাগড়া দিচ্ছে, রাজনীতিবিদদের জনসম্পৃক্ততায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নানাভাবে। এভাবে সমালোচিত হচ্ছে সরকারই। এমনকি প্রশাসনের কেউ দুর্নীতি করলেও তার দায় চাপছে রাজনীতিবিদদের ওপর। মূলত রাজনীতি খারাপ, রাজনীতিবিদ মানেই দুর্নীতিবাজ- এমন ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর সেই পুরনো খেলাটি খেলা হচ্ছে। যাতে জনগণ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: ওয়ান-ইলেভেন ঘটার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর একটা ভূমিকা ছিল সেসময়। ফখরুদ্দীনের সরকার ছিল সেনাসমর্থিত। সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করা হয়েছিল তখন। যদিও এরপর নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এখন চরম পেশাদার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনামের সাথে কাজ করছে বিশ্বমানের পেশাদারিত্ব নিয়ে। সেনাবাহিনী এতটাই উৎকর্ষে পৌঁছেছে যে, বিশ্বের অনেক দেশের সেনাসদস্যরা বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নেন। এখন আবার সেই সেনাবাহিনীকে টার্গেট করা হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ বন্ধ করা নিয়ে চলছে ষড়যন্ত্র। শান্তিরক্ষা মিশনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ‘খুনি’ আখ্যা দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি ও মার্কিন কয়েকটি সংস্থা।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আয়ের একটি বড় খাত জাতিসংঘ মিশন। এই খাতটি বন্ধ করতে পারলে সশস্ত্র বাহিনী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে, সরকারের পতন ঘটাতে কুশীলবদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করবে- এমন দিবাস্বপ্নে বিভোর কুচক্রীরা। সেনাবাহিনীকে উস্কে দেয়ার প্রচেষ্টাই আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টির অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ। কারণ ২০০৭ সালেও শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বন্ধের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। বর্তমানে মার্কিন সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘের মিশনে বাংলাদেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিযুক্তির বিরোধিতা করছে। যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ। একইসাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং প্ররোচনামূলক।
তাই সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পূর্বক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি-জামায়াত ও কুচক্রী মহল বাংলাদেশে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন ঘটানোর চেষ্টা চলছে। তবে সরকারও বসে নেই। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে সকল ধরণের বিপর্যয় প্রতিরোধে সতর্ক আছে। রক্তচক্ষু দেখানো বিদেশি কূটনীতিকদের বিরুদ্ধেও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিলেন সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- ভিসানীতি আমাদেরও থাকতে পারে। আমরাও করতে পারি, অপেক্ষায় থাকুন। অর্থাৎ, ঢিল মারলে পাটকেল ফেরত দিতে ছাড়বে না সরকার, তা স্পষ্ট।
বিদেশিদের প্রশ্রয়ে কেউ পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করবে, এমন চিন্তা সুদূর পরাহত। কারণ সংবিধান লঙ্ঘন করে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা গ্রহণের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি এখন ডেডহর্স। উপরন্তু বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এখন অনেক বেশি পেশাদার। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের নামে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়ার মত অশুভ চিন্তা যদি তাদের থাকত, তবে এতদিনে তা দৃশ্যমান হয়ে যেত। কুচক্রীদের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের ক্ষতির চিন্তা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী করে না।
আর সবচেয়ে বড় বিষয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং সুগভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিএনপি-জামায়াত ও সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি মহলের মাইনাস ফর্মূলা নস্যাৎ করতে সক্ষম। বাংলাদেশের জনগণও দেশে অরাজক পরিস্থিতি দেখতে চায় না। যদি জনগণ তা চাইত, তারা রাস্তায় নামত বিএনপি-জামায়াতের উস্কানিতে এবং অনেক আগেই দেশে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। জনগণের শক্তির ওপর ভিত্তি করেই শেখ হাসিনার সরকার টিকে আছে, টিকে থাকবে।