সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রায় প্রতিদিনই সুনামগঞ্জের কোনো না কোনো স্থান থেকে আটক করা হচ্ছে মা’দকদ্রব্য। কখনো পানির বোতলে কখনো বাদ্যযন্ত্রে আবার কখনো গাড়িভর্তি মা’দকদ্রব্য আটক করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিনিয়ত সহজেই মা’দকদ্রব্য পাওয়ায় নে’শাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এলাকার তরুণরা।
চলতি বছরের শুরু থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুনামগঞ্জে মা’দকদ্রব্য আইনে ৪ শতাধিক মামলা হয়েছে। এ সময় জেলার মা’দকের র্যুট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৩ উপজেলার ৪টি সীমান্ত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে মা’দকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে ৩৯৮টি। সুনামগঞ্জ সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্রতিনিয়তই আসছে মা’দকের ছোট-বড় চালান। সেই সঙ্গে মা’দক বহনেও এসেছে নতুনত্ব। প্রাইভেটকার, ঢোল, প্লাস্টিকের পানির বোতল ও কয়লার মধ্যে সহজেই সাধারণ মানুষও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে সীমান্তের ওপার থেকে নিয়ে আসছে মা’দক।
যার মধ্যে ভারতীয় মদ, ইয়া’বা ও গাঁ’জা বেশি। তাছাড়া ইয়া’বা ও গাঁ’জা অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় বহনে তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো জেলায়। তার মধ্যে সুনামগঞ্জের ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা হয়ে পড়েছে মা’দকের রোড।
সরেজমিনে জেলা মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মা’দক আটকের কয়েকটি চার্ট থেকে জানা গেছে, জানুয়ারিতে বিদেশি মদ আটক হয়েছে ১৫১ বোতল, গাঁ’জা ২ হাজার ৪০০ কেজি, ইয়া’বা ১৫৮ পিস; ফেব্রুয়ারিতে গাঁ’জা ২ কেজি, ইয়া’বা ৪৮৭ পিস; এপ্রিলে সাড়ে ৩ হাজার কেজি গাঁ’জা, ১১১ বোতল বিদেশি মদ ও ১০৫ পিস ইয়া’বা; মে মাসে ২৯৬ বোতল বিদেশি মদ, ৫৫০ পিস ইয়া’বা, জুন মাসে ৫০০ গ্রাম গাঁ’জা, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, ইয়া’বা ২১০ পিস; জুলাইয়ে ২ হাজার ৮৮০ কেজি গাঁ’জা এবং ২১৯ পিস ইয়বা উদ্ধার করা হয়।
অপরদিকে ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ২৮ আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত মা’দকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে ১৩৭টি। তাছাড়া আটক করা হয়েছে ভারতীয় মদ, বিয়ার, গাঁ’জা, ইয়া’বা ট্যাবলেট এবং নাসির বিড়ি। আটকৃত মা’দকের আনুমানিক মূল্য ৯৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩০ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সংলগ্ন ভারতের ৪টি সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত মা’দক দ্রব্য আসছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির কড়া নিরাপত্তা থাকলেও বেশিরভাগ সময় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর, চিনাকান্দি সীমান্ত ও তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট ও চারাগাঁও সীমান্ত দিয়ে আসছে এসব মা’দক দ্রব্য। তাছাড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতকে মা’দক আসছে। মূলত সীমান্ত এলাকার লোকজনই মা’দক আনা-নেয়া এবং সেগুলো কৌশলে সারা জেলায় ছড়িয়ে দেয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, সীমান্ত দিয়ে ইয়া’বা আসে পানির বোতলে করে এবং গাঁজা ও বিভিন্ন ভারতীয় মদ আসে কয়লা বা মাটির ঝুড়িতে করে। পানির বোতলে সাদা পলিথিনের মধ্যে ইয়া’বা ঢুকিয়ে ভারত থেকে ছুঁড়ে মারলে তা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে। ফলে তা সহজে কারো চোখে পড়ে না।
এদিকে মা’দকের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপরতা বাড়িয়েছে। সীমান্ত এলাকায় রাখা হয়েছে কড়া পাহারা। তাছাড়া পুলিশ মা’দকের বিরু’দ্ধে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছে বিট পুলিশিং। বিজিবির পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে মা’দকের বিরু’দ্ধে জনসচেতনামূলক সভা। সীমান্ত দিয়ে যেন কোনো ধরনের মা’দক না ঢুকতে পারে সেজন্য বিজিবি সদস্যদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর আছেন।
এ ব্যাপারে ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মাকসুদুল আলম বলেন, সীমান্তে মা’দকের বিরু’দ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ কর হচ্ছে। যেহেতু মা’দক আমাদের দেশে অ’বৈধ, তাই এটি যেন সীমান্ত দিয়ে না আসতে পারে সেজন্য বিজিবির সদস্যদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত মা’দকদ্রব্য আটক এবং সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জে মা’দকের বিরু’দ্ধে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে কোনো পুলিশ জড়িত থাকলে তার বিরু’দ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনের কাছে সবাই সমান। সুনামগঞ্জকে মা’দকমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।