পাহাড়ে উৎপাদিত দেশীয় রসালো মাল্টা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

লাভজনক ও ভালো ফলন হওয়ায় পাহাড়ে বাড়ছে মাল্টার বাণিজ্যিক চাষাবাদ। অন্য ফলের তুলনায় খাগড়াছড়ির সমতল ও পাহাড়ি ঢালু জমিতে মাল্টার আবাদ ব্যাপক হারে বাড়ছে। মাল্টা চাষ করে সাবলম্বী হয়েছে পাহাড়ের অনেক কৃষক। তৃণমূল বাগানিদের হাত ধরেই মাল্টা চাষে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের অর্থনীতি।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে খাগড়াছড়ির রসালো মাল্টার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি মাল্টা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের বিভিন্ন হাট-বাজারে মাল্টার বেচাকেনা শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে কেজি প্রতি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ভালো দাম পেয়ে খুশি স্থানীয় বাগানিরা।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাধারণত মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য ভাদ্র (মে-আগস্ট) মাসের মধ্যে মাল্টার চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে সেচ নিশ্চিত করা গেলে বছরের যে কোন সময় রোপণ করা যায়। রোপণের ৪/৫ বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাসে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ফল সংগ্রহ শুরু হয়ে চলে ২ মাস।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরে ফল আহরণের সময় হলেও অনেক কৃষক বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ক ফল সংগ্রহ করছে। ফলে মাল্টার স্বাদ, গুণ ও মিষ্টতা নষ্ট হচ্ছে। প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২৫০ থেকে ৩০০টি ফল উৎপাদন হয়। পাহাড়ে চাষ করা মাল্টা আকারে বেশ বড় হয়। ফল সংগ্রহের পর প্রায় ২ সপ্তাহ অপচনশীল থাকায় এর বিপণনে সমস্যা হয় না।

পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রথম বারি মাল্টা-১ অবমুক্ত করা হয়। খাগড়াছড়িসহ ৩ পার্বত্য অঞ্চলসহ সারাদেশে পাহাড়ি ও সমতলে মাল্টা চাষ করে কৃষক সফলতা পেয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মিশ্র ফলচাষিরা আম্রপালি বাগানে সমন্বিতভাবে মাল্টা চাষ করছে। পাহাড়জুড়ে দিনদিন বারি মাল্টার বাণিজ্যিক চাষাবাদ বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার মাল্টার চারা কলম বিক্রি হয়।

কৃষি গবেষণা সূত্রে জানা যায়, বারি মাল্টা-১ নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ জাতের। মাল্টা গাছ ছোট হলেও বেশ ঝোপালো হওয়ায় ফলন বেশি হয়। সেচ ব্যবস্থায় সারা বছর মাল্টার চারা রোপণ করা গেলেও বর্ষাকাল এটি রোপণের উপযুক্ত সময়। মাল্টার কলম চারা, পাতা, ফুল ও ফল আসার পর চারার নিয়মিত যত্ন নিতে হয়। লিফ মাইনার, ফলের মাছি পোকা, ছত্রাকবাহী রোগ দমন করা গেলে ফল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুন্সী আবদুস রশীদ বলেন, ২০০৯ সালে বারি মাল্টা-১ উদ্ভাবনের পর কৃষক পর্যায়ে এর আবাদ বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন বাগানে প্রচুর মাল্টা চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর প্রচুর কলম চারার চাহিদা থাকে। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, সিলেট ও চাপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাষীরা এসে খাগড়াছড়ি থেকে কলম চারা সংগ্রহ করছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর খাগড়াছড়িতে প্রায় ২৯০ হেক্টর পাহাড়ি ঢালু ভূমি ও সমতল অংশে বারি মাল্টার চাষ হচ্ছে। অন্য ফলদ গাছের সাথে এটি চাষযোগ্য হওয়ায় দিনদিন মাল্টা চাষের পরিধিও বাড়ছে। মাল্টা চাষে সম্বৃদ্ধির স্বপ্ন বুনছে পাহাড়ের বাগানিরা।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!