নোয়াখালী প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে জীবনের শেষ ইচ্ছে বা স্বপ্নটুকু পূরণ করলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী ৮২ বছর বয়সী শাহ আলম। র্দীঘদিন পর এ স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় তিনি ও তার পরিবারের স্বজনরা যেমন খুশি, তেমনি এলাকাবাসীও আনন্দিত।
সম্প্রতি শাহ আলম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর অনুভূতি জানতে সরেজমিনে তার বাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। গিয়ে দেখা যায় উপজেলার আমানউল্যাপুর ইউনিয়নের একেবারে দুর্গম এলাকা নয়াপাড়া গ্রামে বসবাস শাহ আলমের। টিনের দোচালা একটি ছোট ঘরে স্ত্রী ও ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকেন তিনি।
দীর্ঘক্ষণ কথা হলো শাহ আলমের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি জানান, বর্তমানে তার বয়স ৮২ বছর। বুঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করা শুরু করেন। সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিলের হাত ধরে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন। দলের একজন একনিষ্ঠ সাধারণ কর্মী হিসেবে পরিচিত তিনি।
৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও তিনি যে কোনো বিষয়ে কবিতা বানিয়ে বলতে পারেন। এ কারণে এলাকায় তিনি পল্লী কবি শাহ আলম হিসেবে পরিচিত। তবে তিনি জীবনের বেশিরভাগ কবিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন। জীবনের ধ্যান ও জ্ঞানে সব সময় আওয়ামী লীগের কথা ভাবেন।
প্রায় ৪ বছর আগে একদিন রাতে ঘুমের ঘোরেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা ভাবতে ভাবতে কাঁদতে শুরু করেন। তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে একটু কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে জাগে তার। শুধু একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটু কাছ থেকে দেখার স্বপ্ন তার বহু দিনের। এজন্য অনেক নেতার কাছে গিয়েছেন। কিন্তু সবাই ব্যস্ততার কারণে তাকে আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যেতে পারেননি।
অবশেষে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিম চৌধুরীর সহযোগিতায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর গণভবনে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে দেখা করে তার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ও জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেয়ার কারণে এখন সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন এবং ১ মাস পরে দেখার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তুু তিনি কোনো রকমে সেই কথায় রাজি হননি। পরে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমকে একটি কবিতা পড়ে শোনান।
এরপর তিনি পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বেলা ১১টায় তাকে আবার গণভবনে আসতে বলেন। যথা সময়েও তিনি সেখানে যান। কিন্তু সেদিনও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ব্যস্ত। দেখা করতে পারবেন কী না সেদিন সন্দেহ দেখা দেয়। যা হোক অবশেষে দেখা হয় বহু আকাঙ্খিত প্রধানমন্ত্রীর। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আগমনের কারণ জানতে চান। তিনি তার মনের কথা খুলে বলেন প্রধানমন্ত্রীকে।
এসময় তিনি তার লেখা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী নিরবে দাঁড়িয়ে মনোযোগ সহকারে তার কবিতা আবৃতি শোনেন। তার কবিতা শুনে প্রধানমন্ত্রীও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। ছবি তোলার নির্দেশে দেন। শাহ আলমের সঙ্গে দুটি ছবি তুলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গণভবনে শাহ আলমের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ২টি ছবি ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রিন্ট করে তার হাতে দেয়া হয় সঙ্গে কিছু টাকাও। এরপর তার গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য গণভবন থেকে দেয়া হয় গাড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার বর্ণনা দেয়া সময় তিনি খুশিতে কেঁদেছেন। বার বার বলেছেন আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, যেভাবে কথা বলেছেন তা দেখে মনে হয়েছে স্বয়ং তার মাথার ওপর আল্লাহর বিশেষ রহমতের হাত রয়েছে।
পরিশেষে তিনি একটাই কথা জানান, আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ দীর্ঘ হায়াত দান করুন। কারণ তিনি বেঁচে না থাকলে এ দেশ অন্ধকার হয়ে যাবে। উনার আলোতে আমররা যেন আলোকিত হই এটিই প্রার্থনা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শাহ আলমের দেখা করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। শাহ আলম ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার খবর শুনে তাকে এক নজর দেখার জন্য এবং তার মুখ থেকে গণভবনের গল্পটি শুনতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ তার বাড়িতে গিয়ে ভিড় করছেন।
সবার প্রশ্ন, কীভাবে গেলেন? কী কী খাওয়ালো? কী দিলেন? কী কী বললেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে কেমন? এলাকার জন্য কী বললেন? নিজের জন্য কী বললেন? জানতে চাইছেন তার স্বপ্ন পূরণের গল্প।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে শাহ আলমের স্বপ্ন পূরণে তার স্ত্রী ও সন্তানরাও খুব খুশি। তার স্ত্রী বলেন, তার (স্বামী) ইচ্ছে ছিল জীবনে একবার হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরসরি সাক্ষাৎ করার। আল্লাহ তার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
শাহ আলমের বড় ছেলে নুর আলম জিকুও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, ছোটকাল থেকেই দেখেছেন তার বাবা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা বানাতেন। এবং রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ও কলেজের ছেলে মেয়েদের দাঁড় করিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বানানো কবিতা পাঠ করে শুনাতেন। যাদের উছিলায় তার বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
একটি দুর্গম চরাঞ্চল এলাকার সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে শাহ আলমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, ছবি তুলেছেন, দুপুরের ভাত খাইছেন এ আনন্দের খবরে গোটা এলাকাবাসী উচ্ছ্বসিত। একেবারে চরাঞ্চল একটি এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেছেন, বড় মনের অধিকারী না হলে এটি সম্ভব নয়।
তাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা যেভাবে শাহ আলমকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আতিথেয়তা দিয়েছেন তারাও প্রধানমন্ত্রীকে সুযোগ পেলে এরকম আতিথেয়তা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
শাহ আলমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা করার এ পুরো গল্পের পেছনে যিনি কাজ করেছেন সেই প্রবীণ রাজনীতিবিদ নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এইচ এম খায়রল আনাম সেলিম চৌধুরী জানান, এটি কেবলমাত্র শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা তার বাবার অনেক গুণ পেয়েছেন।
তিনি যেমন সাধারণ লোকজনের খবর নিতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলের ত্যাগী নেতা থেকে শুরু সাধারণ মানুষের বেশি বেশি করে খোঁজ রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত ব্যস্ততার মাঝেও আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
আওয়ামী লীগের দুর্দিনের এসব নিবেদিত কর্মীরা আরও বেশি বেশি করে মূল্যায়িত হলে দল আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি মনে করেন।
334