সময় এখন ডেস্ক:
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) মশার ও’ষুধ কেনায় পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অকার্যকর ও’ষুধ কেনা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা না থাকার পাশাপাশি কীটনাশক কেনায় যথাযথভাবে সরকারি ক্রয়নীতিও অনুসরণ করা হয়নি।
গতকাল বুধবার ‘ঢাকা শহরের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) মো. জুলকার নাইন ও মো. মোস্তফা কামাল গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, জৈবিক ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ এবং যান্ত্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন হলেও শুধু রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। মশা নিধনে লার্ভিসাইডিং ৮০ শতাংশ ও অ্যাডালটিসাইডিং ৩০ শতাংশ কার্যকর হলেও লোক দেখানোর জন্য লার্ভিসাইডিংকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কারণ এই কার্যক্রমে কেনাকাটার সুযোগ বেশি এবং দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়।
টিআইবি আরও জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সরকারি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে প্রতি লিটার কীটনাশক ৩৭৮ টাকায় সরাসরি ক্রয়ের কার্যাদেশ দেওয়ায় প্রতি লিটারে ১৬১ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সংস্থাটি লিমিট এগ্রো প্রোডাক্ট নামে যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই কীটনাশক কিনেছে, সেই একই প্রতিষ্ঠান উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) উন্মুক্ত দরপত্রে প্রতি লিটারের দর ২১৭ টাকা প্রস্তাব করে। এই হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কীটনাশক বাবদ ক্রয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই সিটির কীটনাশক ও ফগার মেশিনের জ্বালানি ব্যবহার না করে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়; লার্ভিসাইড ব্যবহার না করে ফেলে দেওয়া হয়। ভবনের নিচ তলায় বা গ্যারেজে ফগিং করার জন্য টাকা দেওয়া লাগে। দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে জনগণের অংশগ্রহণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ডেঙ্গু মৌসুম শেষ না হতেই মশক নিধন কার্যক্রমে শৈথিল্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মশক নিধন কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি থাকার কারণে সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ জনগণের ওপর দায় চাপিয়ে জরিমানা করা শুরু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে লোকদেখানো অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ এবং সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।
15