সময় এখন ডেস্ক:
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ক্লাবটিতে চলা ক্যাসিনো কারবার থেকে প্রতিমাসে পেতেন ২১ লাখ টাকা। এসব টাকা অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ও কমনওয়েলথ ব্যাংকে জমা করতেন। ব্যাংক দুটোয় তার হিসাবে ৪১ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।
গত বুধবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসা’বাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তার আরও অর্থ-সম্পদের সন্ধানে আছে তদন্তকারী দল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) পরিচালকদের একজন লোকমান হোসেন।
বিএনপির হয়ে রাজনীতিতে নাম লেখানোর মাধ্যমে উত্থান ঘটে লোকমানের। রাজনৈতিক পালাবদলের পর তিনিও ভোল পাল্টান। তবে পুরনো রাজনৈতিক শিবিরের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন।
সূত্রমতে, জিজ্ঞাসা’বাদে লোকমান জানিয়েছেন, ক্যাসিনো কারবার থেকে লোকমান যে অর্থ পেতেন, তার একটি বড় অংশ বখরা হিসেবে চলে যেত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কিছু নেতার পকেটে। আর পরিমাণে কম হলেও বখরা পেতেন বিএনপির কিছু নেতাও।
এভাবেই দুদলকে ‘ম্যানেজ’ করে ক্যাসিনো কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন লোকমান। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো দলের নেতাই তাকে রক্ষা করতে পারেননি। গ্রেপ্তার হতে পারেন আঁচ করতে পেরে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতাকে ফোন করেছিলেন তিনি, সাড়া পাননি।
তার ম্যানেজ করা নেতাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং অপরাধমূলক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরু’দ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব। যদিও কৌশলগত কারণে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
একসময় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে উত্থান ঘটে লোকমান হোসেনের। অনেকেই বিএনপি মতের রাজনীতি করার কারণে কোণঠাসা হয়ে থাকলেও বিচক্ষণ লোকমান ঠিকই নিজের ভোল পাল্টে অবস্থান ধরে রাখেন রাজনীতির মাঠে। এ কারণে তিনি বিসিবির মতো প্রতিষ্ঠানেও যুক্ত রয়েছেন বর্তমান সরকারের সময়ে।
১৯৯৪ সাল থেকে মোহামেডান ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। এর পর তিনি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১১ সালে ক্লাবটি লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর সভাপতির পদ থেকে মোসাদ্দেক আলী ফালু সরে গেলেও লোকমান থেকে যান।
এরপর তিনি ক্লাবটির সদস্য সচিব এবং এরও পরে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নির্বাচিত হন। তখন থেকেই এ ক্লাবে ক্যাসিনো কারবারের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন লোকমান ও স্থানীয় কাউন্সিলর সাঈদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লোকমান হোসেনের ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকেন। ক্যাসিনো বাণিজ্যের টাকা ঢাকা থেকে ছেলের কাছে পাঠান লোকমান। ছেলেই সেখানকার ব্যাংকে এসব টাকা গচ্ছিত রাখার বিষয়টি দেখেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, লোকমান যে সম্পদের বর্ণনা দিয়েছেন, বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি। তাকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসা’বাদ করলে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে, মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লোকমান হোসেনের বিরু’দ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। তাই গতকাল তাকে এ থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব। এ ছাড়া অর্থপা’চার আইনে পৃথক মামলার প্রস্তুতি চলছে- গতকাল এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তা নিশ্চিত করা যায়নি।
র্যাব ২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞা’সাবাদে ক্যাসিনো থেকে প্রতিমাসে ২১ লাখ টাকা আয় করাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন লোকমান হোসেন। আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছি।
গত বুধবার গভীর রাতে তেজগাঁওয়ের মনিপুরীপাড়ার নিজ বাসা থেকে লোকমান হোসেনকে মদসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব।
56