চট্টগ্রাম ব্যুরো:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন সব বাধা পেরিয়ে হচ্ছে কালুরঘাট ব্রিজ।
তিনি বলেছেন, ‘কালুরঘাট ব্রিজ অতিদ্রুত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। পরবর্তী মিটিংয়ে তিনি এ ব্রিজের নক্সা দিতে বলেছেন।’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্থানীয় একটি আঞ্চলিক নিউজ পোর্টালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার দুঃখ অতিদ্রুত শেষ হবে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই কালুরঘাট ব্রিজের কারণেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের করুণ দশা। পুরোনো কালুরঘাট ব্রিজ ভেঙে দ্রুত সড়ক ও রেলপথের জন্য সেতু নির্মাণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় দেড় কোটি মানুষ চাতক পাখির মতো সরকারের একটি ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন। সেই ঘোষণাটিতে তারা শুনতে চায় একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা। বিভিন্ন সময় সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা নানা আশার বাণী শোনালেও সেসব বাণীতে রয়ে গেছে। আজও আবার সেই স্বপ্ন দেখালেন সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট রেল কাম সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ২ দশকের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় প্রস্তাবিত চীন, মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং কর্ণফুলী নদীর ওপর পুরোনো কালুরঘাট রেল সেতু ভেঙে নতুন করে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ সেতুটি সরকারের মেগাপ্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইনের অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম সড়ক সেতু নামে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করে ঢাকায় রেলভবন কার্যালয়ে পাঠায়। পরে সেটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করে ২৭ মার্চ সংশোধিত ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়।
প্রকল্প অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। বাকি টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।
রেল কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের যে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, তার সুফলও নির্ভর করছে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের ওপর।
গত ৯ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে অনুষ্ঠিত নগরীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রামের প্রবীণ এমপি মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, আমার রাজনৈতিক পরিচয় যদি কালুরঘাট সেতু নির্মাণের অন্তরায় হয়ে থাকে প্রয়োজনে আমি আওয়ামী লীগ হয়ে যাব। তারপরও যেন কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হয়।
তিনি বলেন, আমার বয়স হয়েছে, আমি এখন জীবনসায়াহ্নে। জীবনে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই। আমার জীবদ্দশায় আমি নতুন কালুরঘাট সেতু দেখে যেতে চাই। এর জন্য যদি আমার রাজনৈতিক পরিচয় বিসর্জন দিতে হয় তাতেও আমি রাজি।
এর আগে ২৫ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, দেশে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আছে। তার মধ্যে আমি হচ্ছি ‘বলাউল্লাহ’ কেননা এই কালুরঘাট নতুন সেতু নিয়ে বারবার বলেই যাচ্ছি কোনো কাজই হচ্ছে না। আবার বলা চলে ‘গরিবউল্লাহ’ও, কেননা আমার মনে হয় আমি গরিব এমপি বলে মন্ত্রীও কথা শোনে না।