সময় এখন ডেস্ক:
চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ার মুদি ব্যবসায়ী হাজী বক্কর সওদাগর। গত মার্চে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে মোবাইল অপারেটর রবির একটি সিম নিয়েছিলেন। চলতি মাসের শুরুতে আরেকটি সিম কিনতে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামে এর আগে নিবন্ধিত আছে ৩০টি মোবাইল সিম!
পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সিম বিক্রেতারা নিরীহ মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে সিম জা’লিয়াতি করেছে। এ চক্রের সদস্যরা মূলত বেশি দামে বিক্রির লোভেই করছে এ জা’লিয়াতি।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের সরেজমিন তদন্তে উঠে এসেছে তেমনই এক সিম জা’লিয়াত চক্রের তথ্য।
ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, হাটহাজারীতে দীর্ঘদিন ধরে নিরীহ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের অগোচরেই জা’লিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মোবাইল সিমের ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। ঘটনা যাচাইয়ে গতকাল রাতে একজনের সঙ্গে ২০টি রবি সিম কেনার চুক্তি করি। আজ সকালে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা ওই ২০টি সিম আমার হাতে এসে পৌঁছে। সিমগুলোর সবই আরেকজনের এনআইডি এবং আঙুলের ছাপ দিয়ে অ্যাক্টিভ করা।
তিনি আরও বলেন, এভাবেই হাজার হাজার অ্যাক্টিভ সিম চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা কিংবা অন্য কারও হাতে। এসব সিম ব্যবহার করে নানা অপরাধ করছে সংঘ’বদ্ধ চক্র। অথচ পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ছে যার নামে সিম রেজিস্ট্রেশনে আছে সেই নিরীহ ব্যক্তি।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, জা’লিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সিম রেজিস্ট্রেশন করে বাজারে সক্রিয় সিম বিক্রি করছে একাধিক সংঘ’বদ্ধ চক্র। তারা গ্রাহকের আঙুলের ছাপ ও তথ্য সংরক্ষণ করে। তারপর সেগুলো দিয়ে সিম নিবন্ধন করে।
প্রকৃত গ্রাহক জানতেও পারেন না, তার নামে সিম নিবন্ধিত হয়েছে। সেই সিম প্রতারক চক্রের সদস্যরা চড়া দামে বিক্রি করে। এসব সিম হাত ঘুরে রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি-না, সেটাও আমরা তদন্ত করে দেখছি। আমাদের ধারণা, পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এ জা’লিয়াতি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, গ্রাহকের অজান্তেই তার নামে নিবন্ধিত কোনো সিম রোহিঙ্গা কিংবা কোনো অপরাধী ব্যবহার করছে কি-না, সে সম্পর্কে এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে হাটহাজারীর পশ্চিম আলমপুর এলাকার মাছের প্রজেক্টের আশপাশে একটা চক্র এসব সিম ক্রয় করে রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।
তিনি জানান, মানুষের অগোচরে রেজিস্ট্রেশন করা ভুয়া সিম বিক্রির দায়ে মো. হোসেন টিটু (৩০) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। ২০টি রবি সিম ভুয়া ঠিকানায় অ্যাক্টিভ করে বিক্রি করার সময় তাকে আটক করা হয়। তাকে ১০ হাজার টাকা জরি’মানা করা হয়েছে।
যেভাবে হচ্ছে সিম জা’লিয়াতি
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাভাবিকভাবে একজন গ্রাহক একটি থেকে সর্বাধিক ৫টি সিম কিনে থাকেন। এ সময় সিম কেনার জন্য গ্রাহক তার ছবি ও জাতীয়/ ভোটার পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জাতীয়তা সনদ, ড্রাইভিং সনদ, সরকার দ্বারা ইস্যুকৃত অন্য বৈধ সনদ জমা দেন। সিম ক্রয়ের সময় মোবাইল অপারেটরের কাছে এসব ডকুমেন্টের কপি থেকে যায়।
আর আঙুলের ছাপ নেয়ার সময় কৌশলে নেয়া হয় একাধিক ছাপ। পরে অতিরিক্ত আঙুলের ছাপ, ছবি বা বৈধ পরিচয়পত্রের কপি ব্যবহার করে ওই গ্রাহকের নামে আরও সিম নিবন্ধন করে, সেই সক্রিয় সিমগুলো বিক্রি করা হয় খোলাবাজারে।
আপনার নামে কয়টি সিম এখনই জানুন
অনেক মোবাইল ব্যবহারকারী এখনও জানেন না তার নামে (জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের বিপরীতে) কয়টি সিম (সংশ্লিষ্ট মোবাইলফোন অপারেটর) রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।
মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর একটি এনআইডির বিপরীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল সিমের সংখ্যা ঘরে বসেই জানা যাবে। জানতে হলে মোবাইলফোন থেকে নির্দিষ্ট একটি কোড ডায়াল করতে হবে। তবে এজন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) শেষ ৪টি সংখ্যা জানা থাকতে হবে। কোনো চার্জ কাটবে না।
আসুন, জেনে নেয়া যাক কীভাবে এবং কোন নম্বরে এসএমএস বা ডায়াল করতে হবে-
প্রথমে আপনার মোবাইলের কল অপশনে গিয়ে *16001# লিখে ডায়াল করুন। সঙ্গে সঙ্গে আপনার এনআইডির শেষ ৪টি ডিজিট লিখতে বলবে।
আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের শেষ ৪টি সংখ্যা চাপুন। কিছুক্ষণ পর একটি মেসেজ আসবে। সেখানে আপনার নামে প্রি-পেইড ও পোস্ট-পেইড কোন কোম্পানির কতগুলো সিম আছে সব দেখাবে।